বাস ভাড়া করা হোক এই পদ্ধতিতে, তাতে লাভ হবে সকলের

Estimated read time 1 min read
Listen to this article


স্বরূপ দত্ত

আজ থেকে ফের মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো বাস ভাড়া বৃদ্ধির দাবি। বেসরকারি বাস মালিকরা ইতিমধ্যে রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন যে, বাস ভাড়া বৃদ্ধি না করলে, তাঁরা বেজায় সমস্যায় পড়ছেন। তাঁদের পক্ষে রাস্তায় বাস নামানো সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, প্রতিনিয়ত দাম বাড়ছে পেট্রোল, ডিজেলের। বাস ভাড়া না বাড়লে তাঁরা পারবেন কীভাবে? খুব একটা অযৌক্তিক কথা মনে হয় না। যাঁরা বাস মালিক, তাঁরাও তো আমার, আপনার বাড়ির পাশেই থাকেন। আমাদেরই পরিজন। তাঁরা সমস্যায় পড়লে আমাদের ভালো লাগে কীভাবে!আবার এটাও তো ঠিক, রোজ রোজ বাস ভাড়া বাড়লে, সাধারণ মানুষ যাবেটা কোথায়? পেট্রোল, ডিজেলের দাম বাড়লে তো আর শুধু বাস ভাড়া বাড়ে না। আমাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িয়ে সব জিনিসেরই ভাড়া বাড়ে কম বেশি। শুধু বলে দেওয়া হয় না যে, এই দামটা বাড়লো পেট্রোল আর ডিজেলের দাম বাড়ার জন্য। পেট্রোল, ডিজেলের যেমন দাম বাড়ে, তেমনভাবে তো আর সাধারণ মানুষের রোজগার প্রতি সপ্তাহে অথবা মাসে বেড়ে যায় না! তাই এই বাস ভাড়া বৃদ্ধি আর সাধারণ মানুষের কষ্টের যে সমীকরণ, তা চিরকালীন এভাবেই এগোবে বলে মনে হয়।

সরকারই বা করবে কী! বাস ভাড়া বাড়তে দিলে সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়বেন। বাস ভাড়া বাড়তে না দিলে বাস মালিকরা সমস্যায় পড়বেন। বাস মালিকরা কী সাধারণ মানুষ নন! তাই উভয় সঙ্কট। আর এইজন্যই একটা প্রস্তাব দিতে চাই। নিজে দীর্ঘদিন বাসযাত্রী। বাস ছাড়া আর এ শহরের পথে যাতায়াত করবো কীসে! ভাড়া মাঝে মাঝেই এক টাকা দু’টাকা বাড়ে। তাই দিই। এবার একটা প্রস্তাব দিতে চাই শুধু লেখাটার মাধ্যমে। দীর্ঘদিন বাসে চাপার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি – বাসের সব ভালো। কিন্তু একটা জিনিস মোটেই মেনে নিতে পারিনি কোনওদিন। তাহলো, বাসে সবার জন্য একই ভাড়া কেন? সবার জন্য বলতে শিশু কিংবা ছাত্রদের কথা বলছি না। বলতে চাইছি, যে মানুষটা ২ ঘণ্টার রাস্তা বসে আসবেন, তিনিও হয়তো ১৫ টাকা ভাড়া দেবেন। আবার যে মানুষটা প্রায় দু’ ঘণ্টা এক নাগাড়ে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে আসবেন, তাঁকেও দিতে হবে ওই ১৫ টাকাই! কেন এমন? মার্কস-ও তো বোধহয় এমন সাম্যবাদের কথা বলেননি(এটা মজা করে বলা)।

তাই এরপরের বার যদি সত্যিই বাস ভাড়া বাড়ানো হয়, তাহলে যেন রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী এবং বাস মালিকরা একটু ভেবে দেখেন। শুধু কিলোমিটার মানে দূরত্ব ভাগ করেই বাস ভাড়া নির্ধারণ করবেন না প্লিজ। একটু জিনিসটাকে বসার এবং দাঁড়ানোর হিসেবেও বিচার করুন। লোকাল ট্রেনে অত লোকের মাঝে এমনটা করাটা অসম্ভব। কিন্তু একটা বাসের ৬০-৭০ জন যাত্রীর মধ্যে এটা করা সম্ভব। একটা অঙ্ক দিয়েই উদাহরণ হিসেবে বরং বলি। ধরা যাক, একটা বাসে ৫০ জন যাত্রী উঠল। গড়ে তাঁরা ভাড়া দিলেন ৮ টাকা করে। সেক্ষেত্রে বাসের মালিকের হাতে টাকা গেল ৪০০ টাকা। সেই জায়গায় যদি ব্যাপারটাকে এমন করা যায় যে, বসে আছেন যে ২৫ জন, তাঁদের থেকে নেওয়া হোক ১০ টাকা করে। আর যে ২৫ জন দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁদের থেকে ভাড়া নেওয়া হোক ৮ টাকা করেই। সেক্ষেত্রে কিন্তু ওই একই সংখ্যক অর্থাত্‍ ৫০ জন যাত্রীর থেকে বাসের মালিকের হাতে টাকা গেল ৪৫০ টাকা। অতিরিক্ত ৫০ টাকা।  যদি কেউ মাঝ পথে বসার জায়গা পান, তাহলে তাঁর থেকে নিন অতিরিক্ত ২ টাকা। শুধু বসার টিকিট আর দাঁড়ানোর টিকিট দুটো আলাদা করলেই হবে।

অঙ্কটা এত সহজ নয়। তবে, এর থেকে মারাত্মক কিছু কঠিনও নয়। সরকার কিংবা বাস মালিকদের সামান্য উদ্যোগ নিতে হবে ব্যাস। আর নিজেদের ধ্যান-ধারণাটাকে সামান্য বদলাতে হবে। আমাদের মতো যাত্রীদেরও বুঝতে হবে যে, সব জিনিস একই দামে পাওয়া যায় না। গন্তব্যে পৌঁছনোর ভাড়া একরকম। আর গন্তব্যে আরাম করে পৌঁছনোর ভাড়া আর একরকম। প্রথম প্রথম একটু সমস্যা হতে পারে। কিন্তু একবার এই বিভাজনটা যাত্রী থেকে বাস মালিক এবং সরকার বুঝে গেলেই সুবিধা। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। রোজকার যাত্রীরা এটা হাড়ে হাড়ে টের পান। ধরা যাক, ব্যারাকপুর থেকে একজন যাত্রী ধর্মতলায় এলেন পুরো বসে। কারণ, বাস ব্যারাকপুর থেকে ছেড়েছে। আর তিনি ব্যারাকপুর থেকেই বাসে উঠেছেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই সিট পেয়েছেন বসার জন্য। আবার উল্টোদিকে তাঁর থেকে দু-তিনটে স্টপেজ পরে অর্থাত্‍ টিটাগড় থেকে উঠলেন এক যাত্রী। তিনিও নামবেন ধর্মতলায়। কিন্তু মাত্র তিনটে স্টপেজ পরে বাসে ওঠায়, তাঁকে গোটা রাস্তাটাই ভিড়ের মাঝে লোকের জুতোর চাপা খেয়ে, মহিলাদের বকুনি খেয়ে, অথবা দাদা ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারেন না, এরকম সব প্রশংসার কথা শুনে নিজের গন্তব্যে পৌঁছতে হবে। আর সামনের সেই লোকটা দিব্যি জানলার পাশে ভুড়ির একটা বোতাম খুলে রেখে ভাত ঘুম দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটারই কোমড়ের কাছে এসে ঢুলবেন! দুজনেই কিনা একই ভাড়া দেবেন! পৃথিবীর কোনও সভ্য দেশে এরকম ‘সাম্যবাদ’ চলতে পারে! টাকার বেলায় দুই পক্ষই সমান দাও। আর আরামের ক্ষেত্রে ভাগ্যের দিকে ঠেলে দাও!

এ শহরের বেশ কিছু বাসে এমন নিয়ম আছেই যে, আসন সংখ্যার সমান যাত্রী হয়ে গেলে তাঁরা আর কোনও যাত্রীকে বাসে তোলেন না। সবাই যাবে বসে। ভালো পদ্ধতি। কিন্তু এমন নিয়ম সব রুটের বাসে করতে হলে আরও প্রায় ১ লাখ বাস হয়তো নামাতে হবে শহরের রাস্তায়। তা অসম্ভব। কিন্তু এবার পরিবহনমন্ত্রী এবং বাসমালিকরা গড়পড়তা ভাবনাচিন্তা না করে, একটু অন্যরকমভাবে ভাবলে ভালো হয় সকলের। তাঁদের চাহিদা মতো দুটো টাকা বেশি রোজগার করবেন। আর যাত্রীও তাঁর দেয় অর্থের বিনিময়ে যেটুকু আরাম পাওয়ার কথা সেটা পাবেন। আবারও বলছি, এই কাজটা মোটেই কঠিন নয়। সামান্য একটু অঙ্ক করে নিলেই হবে। তাহলেই সুবিচার পাবেন প্রত্যেক যাত্রী। সকলে ভেবে দেখতে পারেন।

(এই লেখা একান্তই আমার ব্যক্তিগত মত। এর সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা ডট কমও একমত এমন ভাবার কোনও কারণ নেই।)





Source link

JagoronBarta http://www.jagoronbarta.com

জাগরণ বার্তা হল একটি অগ্রণী অনলাইন সংবাদ পোর্টাল যা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে নিরপেক্ষ, সঠিক এবং সময়োপযোগী সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিবেদিত। আমরা এমন একটি প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যা বাংলার প্রকৃত কণ্ঠস্বরকে প্রতিফলিত করে এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার গুরুত্বকে তুলে ধরে।

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours