‘কুলি আমায় ৩০০ টাকা দিয়েছিলেন, কলাবতী হাসপতালে নিয়ে যাই, ডাক্তার বলল মেয়ে আর বেঁচে নেই ‘ !

বিজেন্দ্র সিংহ ও অরিত্রিক ভট্টাচার্য, নয়াদিল্লি: নয়াদিল্লি স্টেশন RPF-এ ছয়লাপ, মোতায়েন রয়েছে CRPF… ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য় তৈরি করা হয়েছে ব্য়ারিকেড। এমনকী, অতিরিক্ত ভিড় আটকাতে নির্দিষ্ট সময়ে, প্ল্য়াটফর্ম টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু, এসমস্ত কিছুই হয়েছে, ১৮টা প্রাণ বেঘোড়ে চলে যাওয়ার পর। এখানেই অনেকের বক্তব্য়, এগুলো যদি আগে হত, তাহলে তো পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা এড়ানো যেত। কুম্ভের পথে মৃত্য়ু, নয়াদিল্লি স্টেশনে মৃত ১৮, সাধারণের প্রাণ ‘সস্তা’…মৃত্য়ু লুকোনোর চেষ্টা? এই ছবিগুলো ভয়ঙ্কর!
মৃত ট্রেনযাত্রীর আত্মীয় বলেন, আমার মেয়ে ও স্ত্রী মারা গেছে। এই অভিজ্ঞতা মর্মান্তিক! মৃত ট্রেনযাত্রীর আত্মীয় বলেন, ‘একজন আরেকজনের ওপর পড়ে যায়। তার ওপর আরেকজন পড়ে যায়। মেয়ের মৃত্য়ু হয়েছে।’ কোটি কোটি মানুষের ভিড় হবে জেনেও, সুব্য়বস্থা না করতে পারাটা ভয়ঙ্কর ব্য়র্থতা! প্রত্য়ক্ষদর্শী ট্রেনযাত্রী বলেন, ‘ঘটনা ঘটার পর প্রশাসন এখানে এসেছে। প্রশাসন তাদের কাজ ঠিকমতো করেনি।’ অমৃতের আশায় কুম্ভের পথে বেরিয়ে, মাঝরাস্তায় পূণ্য়ার্থীদের শেষ হয়ে যাওয়ার দায় যাঁদের, তাঁদের দায় নিতে না চাওয়াটাও নির্মম পরিহাস! নিহত ট্রেনযাত্রীর দাদা বলেন, ‘ভিড় সামলানোর কেউ ছিল না। আমার বোনকে তো খুঁজেই পাইনি। আধঘণ্টা পর, দেখলাম, পড়ে আছে।’
নয়াদিল্লি স্টেশন পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ , অতিরিক্ত ভিড় আটকাতে বিকেলের পর, প্ল্য়াটফর্ম টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে! কিন্তু, সবটাই রেলের বিলম্বিত বোধোদয়! ৭ বছরের ছোট্ট রিয়া থেকে শুরু করে, ৭৯ বছরের আহা দেবীর মতো ১৮ জন সাধারণ-গরীব-মধ্য়বিত্তের প্রাণ চলে যাওয়ার , পর এত তৎপরতা…এত সক্রিয়তা…এত বুদ্ধিমত্তা! কিন্তু যাঁদের সব চলে গেল! যাঁর ছোট্ট মেয়েটা আর কোনওদিন ফিরবে না!
রেলমন্ত্রী কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের মাথারা কি আশা করেন, ‘এই চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ার’ মতো ব্য়বস্থা দেখে তাঁরা সব যন্ত্রণা ভুলে যাবেন? যখন এই ঘটনা ঘটে, তারপর কোনও সাহায্য় পেয়েছিলেন কিনা ? এবিপি আনন্দ-এর প্রশ্নে নিহত ট্রেন যাত্রীর বাবা বলেন,না, কোনও সাহায্য় পাইনি। ওখানে যিনি কুলি ছিলেন, তিনি আমায় ৩০০ টাকা দিয়েছিলেন। কলাবতী হাসপতালে নিয়ে যাই। ডাক্তার বলল মেয়ে আর বেঁচে নেই।
মোদি সরকার, যোগী সরকার, রেলমন্ত্রক সবাই তো জানত। কোটি কোটি লোক কুম্ভে আসবে। স্টেশনে-প্ল্য়াটফর্মে ভিড় উপচে পড়বে। কোনওটাই তো হঠাৎ হয়েছে তা নয়। আচমকা তো কিছুই ঘটেনি। তারপরও এই বিপর্যয় কেন? কাদের ব্য়র্থতা? প্রাক্তন রেল কর্তা সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘এখন অনেক পদক্ষেপ নিচ্ছে ভালো কথা। পদক্ষেপও যা আছে, যেমন, যাত্রীদেরকে সচেতন করা, ইনফরমেশন জানানো, সেটাই খুব প্রিমিটিভ। কজন কুম্ভযাত্রী এগুলো জানেন? বড় লাগেজ নেবেন না। ভিড়ে ঢুকবেন না। মানুষকে এগুলি জানানো সবথেকে জরুরি। এগুলো মিসিং।’
আরও পড়েন, কুম্ভে যেতে গিয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা, ৭৫ হাজার টাকা খরচ করে, গাড়িতে বাড়ি ফিরল শ্রীরামপুরের এক পরিবার !
২০১৩ সালে, কুম্ভ চলাকালীন, প্রয়াগরাজ স্টেশনে, দুর্ঘটনায় মৃত্য়ু হয় ৪২ জনের। সেই সময় নাম ছিল ইলাহাবাদ স্টেশন। ভিড়ের চাপে ৫ ও ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝখানে একটি ফুটওভার ব্রিজের একাংশ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে প়ড়েছিল, তার মানে আজ থেকে ১২ বছর আগের ঘটনা থেকেও শিক্ষা নেয়নি রেল! তার কারণটা কি এই, যে সাধারণ মানুষের জীবন বড়ই সস্তা?
আরও দেখুন