কলকাতা: বিধানসভা নির্বাচনে এখনও বাকি এক বছর। কিন্তু রাজ্য রাজনীতিতে ধর্মীয় মেরুকরণ গভীর হয়ে উঠছে। একদিন আগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী একটি ধর্মকে নিয়ে যে মন্তব্য করেন, তা নিয়ে বিতর্কে চরমে উঠেছে। বুধবার রাজ্য বিধানসভায় সেই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এবার গোটা বিতর্কে মুখ খুললেন ISF বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকি। ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি করে ভারতের বৈচিত্রের গোড়ায় আঘাত হানা হচ্ছে বলে মন্তব্য করলেন তিনি। (Nawsad Siddique)
বুধবার বিধানসভার বাইরে গোটা বিতর্কে মুখ খোলেন নৌশাদ। তাঁর বক্তব্য, “কারও ভোটব্যাঙ্কের হিসেব রাখার প্রয়োজন নেই। এতদিন এসব করেই জনগোষ্ঠীগুলিকে পিছিয়ে রাখা হয়েছে। আপনি উন্নয়ন করবেন, মানুষ আপনাকে ভোট দেবেন। উন্নয়ন করবেন না, ভুল বুঝিয়ে রাখবেন…অন্য কাউকে ভোট দিতে গেলে আবার ভোট ভাগের ভয় দেখাবেন, কেন? যাঁর যে দলকে পছন্দ ভোট দেবেন মানুষ। মূল দলকে পছন্দ হলে তাদের ভোট দেবেন, ISF-কে পছন্দ হলে তাদের দেবেন, বামেদের পছন্দ হলে তাদের দেবেন, কংগ্রেসকে পছন্দ হলে কংগ্রেসকে দেবেন, অন্য কোনও দলকে পছন্দ হলে তাদের ভোট দেবেন। এটাই তো আমাদের ভারতের বৈচিত্র? যে কেউ, যেখানে ইচ্ছে গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। যাঁরা এটাকে ছোট নজরে দেখছেন, তাঁরা বৈচিত্রকে আঘাত করছেন বলেই মনে হয় আমার।” (Suvendu Adhikari)
গতকাল বিধানসভার বাইরে সংখ্যালঘু বিধায়কদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন শুভেন্দু। তিনি জানান, ২০২৬ সালে রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে তৃণমূলের বিজয়ী মুসলিম বিধায়কদের চ্যাংদোলা করে বাইরে ছুড়ে দেবেন তাঁরা। এর পাল্টা তাঁকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃণমূলের হুমায়ুন কবীর। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ওই মন্তব্য প্রত্যাহার না করলে, ক্ষমা না চাইলে শুভেন্দুকে দেখে নেবেন বলে জানিয়েছেন।
সেই নিয়ে নৌশাদের বক্তব্য, “প্রথম কথা হল, স্পিকারবিজেপি বিধায়কদের মার্শাল ডেকে বের করে দিয়েছেন। সেই রাগ মুসলিমদের উপর মেটাচ্ছেন শুভেন্দুবাবু। দ্বিতীয় কথা হল, ২০২৬ সালে জিতে এলে তবে করবেন। দলের ক’টা বিধায়ককে নিয়ে আবার বিধানসভায় ঢুকতে পারবেন, আমার মনে হয় সেটা নিয়ে ভাবা দরকার। তৃতীয়ত, অসমে বিজেপি-র সরকার রয়েছে। সেখানে ক’টা মুসলিম বিধায়ককে বিধানসভা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে? মহারাষ্ট্র, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশে ক’জন মুসলিম বিধায়ককে বের করে দিয়েছে বিজেপি? সব ছেড়ে দিলাম, সংসদের উভয় কক্ষে মুসলিম সাংসদরা রয়েছেন। ক’জনকে বের করে দেওয়া হয়েছে? “
শুভেন্দুর মন্তব্যের তীব্র নিন্দাও করেন নৌশাদ। তাঁর কথায়, “শুভেন্দুবাবু ইচ্ছে করে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিকে কলুষিত করছেন। হিন্দু-মুসলিম বাইনারি তৈরি করছেন, যাতে তৃণমূল এবং বিজেপি-র মধ্যে টোটাল ভোট ভাগ হয়ে যায়, তার জন্যই এই অপচেষ্টা। যে দলগুলি ধর্মনিরপেক্ষ, হিন্দু-মুসলিম রাজনীতির বিরোধী, তাদের বিরুদ্ধে অপচেষ্টা চলছে। শুভেন্দুবাবু যে মন্তব্য করেছেন, তার তীব্র নিন্দা করি, তীব্র ধিক্কার জানাই। ওঁর এই মন্তব্য আইন বহির্ভূত, সংবিধান বহির্ভূত, অগণতান্ত্রিক।”
এদিন শুভেন্দুর মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেন মমতাও। বিরোধী দলনেতা যে মন্তব্য করেছেন, তা মেনে নেওয়া যায় না বলে জানান। কোনও ধর্মকে এভাবে অপমান করা যায় না বলে মন্তব্য করেন তিনি। পাশাপাশি, সব ধর্মের চেয়ে মানবধর্ম বড় বলে জানান। লাগাতার যে মন্তব্য করে চলেছেন শুভেন্দু, তাতে তাঁর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাঁর এত সাহস হয় কী করে, বিজেপি-র উদ্দেশে প্রশ্নও তোলেন মমতা।
আরও দেখুন
+ There are no comments
Add yours