Nathalie Handal | Kolkata Book Fair 2025: ‘যুদ্ধযাত্রা আমাদের অবমানব করে’, কলকাতায় বললেন ‘কনটেম্পোরারি অর্ফিয়ুস’…
শুভপম সাহা: এই শহরে বিভিন্ন সময়ে বিশ্বসাহিত্যের সব নক্ষত্ররা এসে আলোকিত করেছেন। এস ওয়াজেদ আলীকে ধার করে বলতে হয়, ‘সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে’… ৪৮ তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় (Kolkata Book Fair 2025) যখন শহরের বইপোকারা বুঁদ, তখনই তিলোত্তমায় পা পড়েছে মার্কিন-প্যালেস্তিনীয় কবি নাথালি হ্যান্ডালের (Nathalie Handal)।
শহরে ঝটিকা সফরে কবি-নাট্যকার নাথালির পরিচয় নন-ফিকশন এবং সাহিত্যিক ভ্রমণ লেখক হিসাবেও। তিনি চার মহাদেশে থেকেছেন। ১০টি পুরস্কারজয়ী বই লিখেছেন, যা ১৫টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ফ্রায়েডরাইস-মাংস রাঁধতেন জব্বর, জেলবন্দি লোকটারও ভূতে ভয়’! শতবর্ষে অচেনা সলিল…
নাথালিকে বলা হয় ‘কনটেম্পোরারি অর্ফিয়ুস’! গ্রিক পুরাণে বর্ণিত কিংবদন্তি কবি, গল্পকার ও সংগীতজ্ঞ ছিলেন অর্ফিয়ুস। তিনি গোল্ডেন ফ্লিসের সন্ধানে ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। নিজেকে বিশ্ব-নাগরিক হিসেবে দেখা নাথালিও কবিতার হাত ধরে ‘কানেক্টিভিটি’, ‘কমিউনিয়ন’ ও ‘ডায়ালগ’-এ এই বিশ্বের ভিতর বিশ্বের সন্ধানে…
গত মঙ্গলবার বাইপাসের ধারের এক পাঁচতারা হোটেলে, নাথালির কবিতা গুচ্ছের বই ‘জিয়োগ্রাফি অফ লস’-এর বাংলায় অনূদিত সংস্করণ ‘অনুপস্থিতির মানচিত্র’ প্রকাশিত হল। সুবোধ সরকার, ব্রাত্য বসু, চৈতালী চট্টোপাধ্যায় ও যশোধরা রায়চৌধুরীর মতো মহারথীরাই নাথালির অনুবাদের গুরুদায়িত্ব সামলেছেন।
কলকাতা লিটারেচার ফেস্টিভালে অংশ নিতে চলা নাথালি অতীতেও এই শহরে এসেছেন। যে শহরকে সারা পৃথিবী ‘সিটি অফ জয়’ নামেই চেনে, সেই শহরের নতুন নামকরণ করলেন নাথালি, তিনি বললেন, ‘বইমেলার সময়ে কলকাতায় আবার আসতে পেরে দারুণ লাগছে। আসলে এই কলকাতা কবি ও কবিতার শহর।’
প্রায় দেড় বছর ধরে প্যালেস্তাইন-ইজরায়েলের সংঘাত চলছে! গাজায় প্রায় ৬২ হাজার মানুষের প্রাণ গিয়েছে। ২৫ লক্ষের বেশি মানুষ উদ্বাস্তু। নাথালির কাছে প্রশ্ন ছিল, কবিতা কি পারবে বিশ্বজুড়ে শান্তির বার্তা দিতে? নাথালি বলেন, ‘আমি জানি না, কবিতা বিশ্বজুড়ে শান্তির বার্তা দিতে পারে কি পারে না! তবে আমি বুঝি কবিতা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ দেয়, মানবিক দৃষ্টিকোণ দেয়। যুদ্ধযাত্রা আমাদের অবমানব করে। মানুষের অনুভূতি একাত্ম করতে পারে এই কবিতা। যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে না গিয়েও, বা সেই পরিস্থিতিতে না পড়েও, সেখানকার ব্যথা-বিপর্যয় অনুভব করতে যায় কবিতার হাত ধরে। কবিতা ছাড়া আমদের সেই মৌলিক ভাষা নেই, যা বিশ্বজুড়ে আমাদের যোগাযোগের জন্য প্রয়োজন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধন।’
(ছবিতে বাঁ-দিক থেকে সুবোধ সরকার, ব্রাত্য বসু, নাথালি হ্যান্ডাল ও গৌতম দত্ত)
এই প্রসঙ্গে নাথালির কবিতার অন্যতম অনুবাদক ব্রাত্য বললেন, ‘সব অর্থে বাস্তুচ্যুত, শিকড়চ্যুত মানুষের আর্তনাদ প্রবল ভাবে রয়েছে নাথালির কবিতায়। প্যালেস্তাইন-গাজায় যা ঘটছে, তা সারা পৃথিবী জানে। সেখানে দাঁড়িয়ে নাথালি প্যালেস্তিনীয় কবি, তাঁর কবিতায় সেই বার্তা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কলকাতায় নাথালির আসা এবং সুবোধ সরকার ও গৌতম দত্তের মতো কবিদের উপস্থিতিতে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হওয়া, সাহিত্যিক বা রাজনৈতিক দিক থেকে নয়, মানবিক দিক থেকেও তাত্পর্যপূর্ণ।’
আরও পড়ুন: ‘চিত্র যেথা ভয়শূন্য’! ধর্মতলায় সাংবাদিকদের প্রকাশিত এবং অপ্রকাশিত ছবির মেলা…
নাথালির বই যে, অস্থির সময়ের ছবি তুলে ধরেছে, তা মানুষকে সাদা-কালো হরফে বেঁধে রাখবেই… এই কথা বলাই যায়…
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)