সুজিত মণ্ডল, রানাঘাট : রাজ্যে একের পর এক নিগ্রহ-ধর্ষণের ঘটনা ঘটেই চলেছে। দিনকয়েক আগেই মুর্শিদাবাদের ফরাক্কায় নাবালিকা ধর্ষণ-খুনের দু’মাসের মধ্যে সাজা ঘোষণা হয় ২ জনের। দোষী সাব্য়স্ত একজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপরজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় জঙ্গিপুর আদালত। সম্প্রতি কুলতলির নাবালিকাকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনাতয় ৬২ দিনের মাথায় দোষীকে মৃত্য়ুদণ্ড দেয় আদালত। এবার, POCSO মামলায় দোষীকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিল রানাঘাট আদালত। তাও আবার আন্তঃরাষ্ট্র ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শুনানি হয় মামলার। যা অন্যতম বিরল ঘটনা। মঙ্গলবার রানাঘাট মহকুমা আদালতে সুকুমার বিশ্বাসকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। বুধবার এই মামলায় সাজা ঘোষণা করেন বিচারক।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২০ সালের ২০ জুন রানাঘাট মহিলা থানায় এই মামলার অভিযোগ দায়ের হয়। ঘটনার সময় ওই নিগৃহীতার বয়স ছিল ১৪ বছর। প্রতিবেশী সুকুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ওই নির্যাতিতার মা অভিযোগ দায়ের করে বলেন, তিনি এবং তাঁর স্বামী বাড়িতে না থাকার সুযোগ নিয়ে সে মুখ চাপা দিয়ে তাঁদের নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণ করেছে।
অভিযোগ পাওয়ার পরেই তদন্ত শুরু করে পকসো ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তকে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই জমা পড়ে চার্জশিট। কিন্তু বিচার চলাকালীন তিনজনের সাক্ষ্য দানের পরেই বিচার প্রক্রিয়ার গতি শ্লথ হয়ে যায়। তখন রানাঘাট আদালত থেকে জামিনের আবেদন নিয়ে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী দ্বারস্থ হন কলকাতা হাইকোর্টের। জানা যায়, এই সময়কালে নির্যাতিত কিশোরী এবং তার বাবা-মায়ের খোঁজই পাচ্ছিলেন না তদন্তকারীরা।
উচ্চ আদালত নির্যাতিতা ও তার বাবা-মাকে খুঁজে বের করার নির্দেশ দিলে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, অভিযোগ দায়ের হওয়ার বেশ কিছুদিন পর তাঁরা বাংলাদেশে চলে গিয়েছেন। রানাঘাট জেলা পুলিশের এসপি এবং বাংলাদেশ পুলিশের যোগাযোগের মাধ্যমে নিগৃহীতার ও তার পরিবারকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে মামলার শুনানিতে যোগদান করানো হয়।
সরকারি আইনজীবী অপূর্বকুমার ভদ্র বলেন, “বিরলতম পদ্ধতিতে এই মামলার শুনানি হয়েছে এবং ন্যায়বিচার পেয়েছে নির্যাতিতা। দোষীকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।”
অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী শুভেন্দু ঘোষ বলেন, “মেডিক্যাল রিপোর্টে একাধিক খামতি আমাদের নজরে এসেছে। আদালতে আমাদের নৈতিক জয়, ৬ নম্বর ধারায় চার্জ গঠন হলেও দোষী সাব্যস্ত হয়েছে ১০ নম্বর ধারায়। আমরা উচ্চ আদালতে যাব।”
আরও দেখুন