প্রদ্যোৎ সরকার, নদিয়া: শিলনোড়া দিয়ে থেতলে দুই ছেলেকে খুন করার অভিযোগ উঠল মায়ের বিরুদ্ধে। প্রতিবেশীরা তাঁকে ঘিরে ধরে রয়েছে। ‘তুমি তোমার সন্তানদের মেরে ফেললে’ ?! অবাক দৃষ্টিতে অভিযুক্ত মহিলা তখনও চেয়ে। অস্পষ্টভাবে বললেন, ‘ওরা চান করতে চাইছিল না’ ! তারপর আবার ক্ষুব্ধ জনতার থেকে ভেসে আসল প্রশ্ন, বলো কেন মেরেছো ? মা, নিকটস্থ প্রতিবেশির দিকে তাঁকিয়ে উত্তর দিলেন, ‘ও দিদি বলো, আমি ছেলে দুটোকে কী ভালবাসি’ ! ঘটনাটি ঘটেছে করিমপুরের আনন্দপল্লী এলাকায়। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে করিমপুর থানার পুলিশ।
আরও পড়ুন, বছর ১২-র বালকের মাথার উপর দিয়ে উঠে গেল বালি বোঝাই লরির চাকা ! দূরে ছিটকে পড়ল সাইকেল, মর্মান্তিক দুর্ঘটনা মহেশতলায়..
ঠিক কী হয়েছিল ? কী বলছেন প্রতিবেশীরা ?
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই ছেলেকে নিয়ে ওই এলাকায় ভাড়া থাকতেন স্বামী-স্ত্রী। তাঁর দুই ছেলে। বড় ছেলের বয়স ১২ বছর। ছোট ছেলের ৮ বছর। গতকাল দুপুরেস্বামী বাড়ি ফিরে দেখেন দুই সন্তান রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তাঁর চিৎকার শুনে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা । সেই সময় তাঁর মা পালিয়ে যায়। তাঁদের উদ্ধার করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাদের বহরমপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। যাওয়ার পথে ছোট ছেলের মৃত্যু হয়। এরপর বড় ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে শেষ অবধি পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জখম ছেলেটিরও মৃত্যু হয়েছে।
‘মা কখনও ছেলেকে মারে ?..’
স্থানীয়দের দাবি, শিশুদের মা শিলনোড়া দিয়ে থেতলে খুন করেছে। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। আজ সকালে বাড়ি ফিরতেই স্থানীয় বাসিন্দারা ঘিরে ধরে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে অভিযুক্তকে আটক করে নিয়ে যায়। স্থানীয় এক প্রতিবেশী বলেন, ছেলেটার (অভিযুক্ত মহিলার স্বামী) আদি বাড়ি বহরমপুরে। মা কখনও ছেলেকে মারে ? ! ওর ফাঁসির থেকেও বড় শাস্তি হওয়া উচিত।
সাংবাদিক : ঠিক কী হয়েছিল ?
মিঠু পাল (বাড়িওয়ালা ): আমরা খাচ্ছিলাম। খাওয়ার পরে ওর বাবা কাজ সেরে আসে। বাবাকে ঘরের মধ্য়ে ঢুকতে দেখে, মা পালিয়ে যায়। আমিও দেখেনি। ওর বাবাই দেখেছে। তারপর চিৎকার শুনতে পাই। ফোনে কাকে বলছে যে, তাড়াতাড়ি আসেন। তখন আমি উঠে গিয়ে দেখলাম যে,আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কী হয়েছে ? উনি বলেন তখন, দেখেন কাকিমা আমার ছেলে দুটোকে মেরে ফেলেছে। তখন আমি নিচে গিয়ে ওদেরকে জল দিলাম। তারপর হাসপাতালে পাঠানো হল।
সাংবাদিক : এখানে বাড়িভাড়া কতদিন ধরে থাকছে ওরা ?
মিঠু পাল (বাড়িওয়ালা) : ওরা প্রায় তিন বছর হয়ে গেল।
সাংবাদিক : কারও সঙ্গে কথাবাত্রা বলত ?
মিঠু পাল (বাড়িওয়ালা): ওই ওর ইচ্ছা।
সাংবাদিক : উনি ঠিক কেমন ছিলেন ?
মিঠু পাল (বাড়িওয়ালা): একটু মানসিক ভারসাম্যহীন। ওর বরটা বলছিল। নিজের স্বামীকেও একদিন বঁটি দিয়ে কাটতে গিয়েছিল। গেঞ্জি ছিড়ে দিয়েছিল। বাচ্চাগুলি বলছিল, না আমার বাবা মাকে মারে না, মা -ই বাবাকে মারে।আমরা তো জানতে পারি না। ঘরের মধ্যে ফ্য়ান চলছে দুটো। টিভি চলছে। আমার মনে হয় ঘুমন্ত অবস্থাতেই ছেলে দুটোকে মেরেছে। আমি জানতে পারলে মরতে দিতাম না।
নদিয়া তেহট্টর SDPO জানিয়েছেন, গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত মাকে। এবং গ্রেফতারির পরেই করা হয়েছে মেডিক্যাল টেস্ট। প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত মায়ের সাইক্লোজিক্যাল প্রবলেম রয়েছে।
আরও দেখুন