মুর্শিদাবাদ: ওয়াকফ আইন বিরোধী আন্দোলনে তপ্ত মুর্শিদাবাদ। মেয়ের নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে এবার সামশেরগঞ্জের জাফরাবাদের রানিপুর গ্রামে ভেঙে গেল বিয়ে। আগামী ২৬ বৈশাখ চার হাত এক হওয়ার কথা ছিল দুজনের।
আরও পড়ুন, ‘এখন সান্ত্বনা দিতে..’ ? সামশেরগঞ্জে বাবা-ছেলে খুনে নিহতদের বাড়িতে যেতেই কটু কথা শুনতে হল TMC-র প্রতিনিধি দলকে !
জাফরাবাদ গ্রামের ঠিক পাশেই রানিপুর গ্রাম। যে গ্রামের একাধিক বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছে।সেই গ্রামে এই রকমও বাড়ি রয়েছে, যেখানে কোনওরকম আক্রমণও হয়নি। কিন্তু সেই বাড়ির বাসিন্দারাও পড়েছেন সমস্যায়। সমস্যা এমন, যা চিন্তা ধরিয়েছে গ্রামবাসীদের মধ্যেও। তার কারণ ঝাড়খণ্ডে বিয়ে ঠিক হয়েছিল এক যুবকের।এই ঘটনার পর সেই বিয়ে ভেঙে গিয়েছে। যুবকের নাম কার্তিক দাস।
সাংবাদিক: বিয়ে ভেঙে গেছে ?
কার্তিক দাসের মা: হ্যাঁ বিয়ে ভেঙে গেছে। ওরা এখন ভয়ে পেয়ে বিয়ে দিচ্ছে না।
সাংবাদিক: কেন?
কার্তিক দাসের মা: ওইসব মারামারি, কাটাকাটি হয়েছে, সেই ভয়ে বলছে বিয়ে দেবে না।
কার্তিক দাসের পরিবার: প্যান্ডেল ভাড়া দিয়েছে। তারপর এই বাজনার বায়না দিয়েছে। কার্ড ছাপাতে দিয়েছে। এসত্ত্বেও মেয়ের বাবা এসে, বললেন যে, না এখানে বিয়ে হবে না। আপনাদের গ্রামে অশান্তি চলছে। বিয়ে দেওয়া হবে না।
কেউ ভাত বসিয়েছিলেন। তখনই হামলা হয়েছে। পরিবারের ১৫ জনের প্রাণ বাঁচাতে এক কাপড়ে ছাড়তে হয়েছে ভিটেমাটি! কারও মেয়ের বিয়ের জন্য তিল তিল করে জমানো দেড় লক্ষ টাকার জিনিস লুঠ করে নিয়ে গেছে হামলাকারীরা। বাধ্য হয়ে পরিবার নিয়ে পালাতে হয়েছে বাড়ি ছেড়ে। মুর্শিদাবাদের ঘটনায় এরকম একাধিক পরিবার নিজের রাজ্যেই উদ্বাস্তু হয়ে গেছে রাতারাতি।
মালদায় ঠাঁই নেওয়া মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা বলেন, দাদা পেটে লাথি মেরেছে। এই বাচ্চাকে নিয়ে পালিয়ে এসেছি। খাব কী? কবে ফিরব? উস্কে গেছে দেশভাগের যন্ত্রণার স্মৃতি! ওয়াকফ-অশান্তি ঘিরে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠা মুর্শিদাবাদ থেকে। রাতারাতি ভিটেমাটি ছাড়তে হয়েছে বহু মানুষকে। নিজেভূমে পরবাসী। দুষ্কৃতীদের সীমাহীন অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে, সামশেরগঞ্জ থানার বেতবনা গ্রাম থেকে। নদী পেরিয়ে মালদার বৈষ্ণবনগরে চলে আসতে বাধ্য হয়েছে। একের পর এক পরিবার।তাদের সকলের চোখে মুখেই এখন একরাশ আতঙ্ক আর উদ্বেগ।
এই ছবি বৈষ্ণবনগরের পারলালপুর হাইসকুলে করা ত্রাণশিবিরের। এখানেই আশ্রয় নিয়েছেন সামশেরগঞ্জের বেদবনা গ্রামের প্রামাণিক পরিবার। এক পরিবারে ১৫ জন সদস্য।সকলেই এখন এই ত্রাণশিবিরে। ঘরছাড়াদের গলায় একরাশ আতঙ্ক! বলছেন, ভাত রান্নার সময় হামলা হয়েছিল…ওই অবস্থাতেই রান্না ফেলে ঘর ছেড়ে পালাতে হয়েছে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে। ৩ মেয়ে নিয়ে ৯ জনের সংসার বনবাসী মণ্ডলের।
আরও দেখুন