কলকাতা: পেশায় শিল্পপতি। ব্যবসার আটঘাট সব বোঝেন। কিন্তুূ বাংলার সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক নেহাত ব্যবসায়িক নয়। এই সম্পর্ক আবেগের, অনুভূতির। বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে এসে এমনই মন্তব্য করলেন রিলায়্যান্স কর্ণধার মুকেশ আম্বানি (Mukesh Ambani)। পশ্চিমবঙ্গের পুণ্যভূমির প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ বলে জানালেন। সেই সঙ্গে আগের তুলনায় বিনিয়োগ দ্বিগুণ করার ঘোষণা করলেন। (Bengal Global Business Summit)
বিশ্ব বঙ্গ সম্মেলন থেকে এদিন বাংলাকে পাঁচটি প্রতিশ্রুতি দেন মুকেশ। তিনি বলেন-
১) “২০১৬ সালে বাংলার মাটি থেকেই Jio-র বাণিজ্যিক পরিষেবা শুরু হয়। দিদি আমাদের জন্য লাকি। এই বাংলা থেকেই ডিজিটাল বিপ্লব শুরু হয়, যার উপর ভর করে ভারত ডিজিটাল সুপার পাওয়ার হয়ে ওঠে। আজ জিও শুধু ভারতের ১ নম্বর ডিজিটাল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা নয়, পৃথিবীর ১ নম্বর সংস্থা, যার সূচনা হয় কলকাতা থেকে। ২০২৩ সালের শেষ দিকে Jio-র 5জি পরিষেবাও এখান থেকে শুরু হয়। বাংলায় ১০০ শতাংশ পরিষেবা দেয় Jio।”
“বাংলার মানুষের কাছে, প্রত্যেক গ্রাহকের কাছে কৃতজ্ঞ আমরা। Jio-র ডেটা সবচেয়ে বেশি বাংলাতেই ব্যবহৃত হয়। গ্রামীণ বাংলাকে বদলে দিয়েছে Jio. 5জি হাইস্পিড ইন্টারনেটের দৌলতে স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের পড়াশোনা সহজতর হয়েছে। ঘরে ঘরে তো বইকি, হাতে হাতে বিনোদন, খেলা পৌঁছে গিয়েছে।”
“বাংলার প্রথম কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন তৈরি হচ্ছে দিঘায়। ফাইবার কানেক্টিভিটি তৈরি হয়েছে। আগামী বঠরের গোড়া থেকে শুরু হচ্ছে। পূর্ব-ভারতে ডিজিটাল লিডারশিপে নেতৃত্ব দেবে বাংলা।” Jio পৃথিবীর সেরা AI পরিকাঠামো গড়ে তুলছে দেশে। আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি, আগামী ন’মাসে কলকাতায় ডেটা সেন্টারকে AI ডেটা সেন্টারে পরিণত করব।”
“5জি স্ট্যাক, Jio ফাইবার, Air ফাইবার, যন্ত্রমেধা, ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে আধুনিক হয়ে উঠবে বাংলা। নতুন কর্মসংস্থান হবে, ব্যবসার সুযোগ বাড়বে বাংলায়। আমার আশা, Jio AI পরিকাঠামো বাংলার প্রতিভাধরদের তুলে ধরবে। নিজের রাজ্যেই তাঁরা অসাধ্য সাধন করবেন।”
২) এই মুহূর্তে বাংলায় ১৩০০ স্টোর আছে Reliance Retail-এর। আগামী তিন বছরে সংখ্যাটি বাড়িয়ে ১৭০০০ করার লক্ষ্য আমাদের। আমাদের নিউ কমার্স, এক্সপ্রেস ডেলিভারি পরিষেবায় খুচরো ব্যবসায়ীরা উপকৃত হয়েছেন। আয় বেড়েছে তাঁদের।
৩) “বাংলার হস্তশিল্পকে আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে দেবে Reliance-এর Swadesh প্ল্যাটফর্ম। বাংলার শিল্পীদের পণ্য দেশ এবং বিদেশে পৌঁছে দেওয়া হবে। লন্ডন, নিউইয়র্ক, প্যারিসে Swadesh স্টোর খোলা হবে। সেখানে বাংলার জামদানি, বালুচরি, তাঁত, মুর্শিদাবাদ সিল্ক, বিষ্ণুপুরী সিল্ক, তসর সিল্ক, কাঁথা শাড়ি, মসলিন এবং জুট ও খাদি পণ্য তুলে ধরা হবে আন্তর্জাতিক বাজারে। বিস্কফার্ম, আনমোল রাজা, সিটি গোল্ট, প্রভুজি, বিশ্ববাংলার খাদ্যপণ্য রাখা হবে বিদেশে Swadesh-এর স্টোরে।”
৪) “নিউ এনার্জি ইনিশিয়েটিভ নিচ্ছে Reliance. গ্রিন এনার্জি, গ্রিন ইকোনমিতে বাংলা এগোবে। আমি বলছি, সোলার বাংলা ফর সোনার বাংলা।”
৫) “রাজ্য সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কালীঘাট মন্দির সংস্কারে হাত দিয়েছে Reliance. আমাদের সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। রাজ্য সরকারই অধিকাংশ কাজ করেছে। রাজ্যের মানুষের চাহিদাপূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমরা।”
মুকেশ আরও বলেন, “বাংলার পুণ্যভূমির সঙ্গে আমাদের পারিবারিক সংযোগ রয়েছে। শুধু ব্যবসায়িক নয়, আবেগের সম্পর্ক। দিদিকে শ্রদ্ধা করি আমি। সকলকে বলব, বাংলায় বিনিয়োগ করুন। বাংলায় Reliance-এর অভিজ্ঞতা খুব ভাল। মমতাদি দেশের অন্যতম তক্ষ শাসক। উনি থাকাকালীন ব্যবসায়ীদের জন্য এখানে লাল গালিচা পাতা রয়েছে। বাংলায় আসুন, নতুন অধ্যায়ের সূচনা করুন। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে বলব, Reliance বাংলার বিশ্বস্ত বন্ধু। আপনার বাংলা আমাদের বাংলা।”
মুকেশ এদিন জানান, বাংলায় বিনিয়োগের এটাই আদর্শ সময়। বাংলার ১০ কোটি মানুষ পরিশ্রমী, প্রতিভাশালী এবং সংস্কৃতি সম্পন্ন। বাংলার সম্পদ বাংলার মানুষ। ২০১৬ সালে প্রথম বার সম্মেলনে এসে ২০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ করেছিলেন। আজ তা ২০ গুণ বেড়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। এই দশক শেষ হতে হতে তা আরও বাড়িয়ে দ্বিগুণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তিনি। মুকেশ জানান, তাঁদের হাত ধরে বাংলায় ১ লক্ষ প্রত্যক্ষ চাকরি হয়েছে। বাংলার অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ঘটেছে।
আরও দেখুন
+ There are no comments
Add yours