সেলিম রেজা, ঢাকা: বদলের বাংলাদেশে গত কিছুদিন ধরে প্রতিদিনই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে। গত এক সপ্তাহে দেশটির কয়েকটি জেলায় বজ্রপাতে ২০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার যে দেশগুলোয় বজ্রপাতের প্রবণতা বেশি, তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। কিন্তু এর কারণ কি?
বাংলাদেশে বজ্রপাত নিয়ে গবেষণা করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ ফারুখ। তিনি বলেন, ”বাংলাদেশে বজ্রপাতের মূল কারণ দেশটির ভৌগলিক অবস্থান। বাংলাদেশের একদিকে বঙ্গোপসাগর, এরপরই ভারত মহাসাগর। সেখান থেকে গরম আর আর্দ্র বাতাস আসছে। আবার উত্তরে রয়েছে পাহাড়ি এলাকা, কিছু দূরেই হিমালয় রয়েছে, যেখান থেকে ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকছে। এই দুইটা বাতাসের সংমিশ্রণ বজ্রপাতের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে”।
ফারুক আরও বলেন, ”শীতের পর বঙ্গোপসাগর থেকে উষ্ণ বাতাস আসতে শুরু করে, অন্যদিকে হিমালয় থেকে আসে ঠাণ্ডা বাতাস। দক্ষিণের গরম আর উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাসে অস্থিতিশীল বাতাস তৈরি হয় আর এর থেকে তৈরি হয় বজ্রঘন মেঘের। এরকম একটি মেঘের সঙ্গে আরেকটি মেঘের ঘর্ষণে বজ্রের তৈরি হয়। এরকম উচ্চ ভোল্টের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ যখন মাটিতে নেমে আসে, তখন সবচেয়ে কাছে যা পায়, তাতেই আঘাত করে।” আকাশ থেকে মাটিতে ছাড়াও, আকাশ থেকে আকাশে বা মেঘ থেকে মেঘে অথবা মেঘের মধ্যেও বজ্রপাত হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন-২৩-এর শিক্ষিকা কামের টানে পালাল! ১১-এর ছাত্রকে নিয়ে হোটেলের ঘরে চলল শরীরী…
আরও পড়ুন-চোখ টানছে দীঘার জগন্নাথ মন্দির, মানতে পারছে না ওড়িশা সরকার! তদন্তের নির্দেশ…
বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৭ বছরে বাংলাদেশে বজ্রপাতে সারা বাংলাদেশে ১৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বিপুল সংখ্যক গবাদি পশু মারা গিয়েছে।
তবে গত ছয় বছরের বাংলাদেশের গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বজ্রপাতে হতাহতের সংখ্যা আসলে দুই হাজারের বেশি। বাংলাদেশের জাতীয় দুর্যোগের তালিকায় ২০১৬ সালের ১৭ই মে বজ্রপাত অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তবে বাংলাদেশের আয়তন হিসাবে বাংলাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। এর কারণ সচেতনতার অভাব। ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা বা নেপালে বজ্রপাত হলেও সেখানে মৃত্যুর হার এতো বেশি নয়।
আবহাওয়াবিদদের পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর পশ্চিমাঞ্চল বজ্রপাত-প্রবণ এলাকাগুলোর অন্যতম। গ্রীষ্মকালে এ অঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি থাকায় এ পরিস্থিতির তৈরি হয় বলে তারা বলছেন।
তাদের মতে, যেসব এলাকায় গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে সেসব এলাকায় যে মেঘের সৃষ্টি হয়, সেখান থেকেই বজ্রপাতের সম্ভাবনা থাকে। কোন কোন গবেষক বলেন তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বাড়লে বজ্রপাতের সম্ভাবনা ১০ শতাংশ বেড়ে যায়। পৃথিবীর যে কয়েকটি অঞ্চল বজ্রপাত প্রবণ তার মধ্যে দক্ষিণ-এশিয়া অন্যতম। উন্নত দেশগুলোতে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু কমলেও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ সংখ্যা বাড়ছে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)