জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: যখন-তখন বিয়ে, রাত পোহালেই বিয়ে, চোখ মেললেই বিয়ে। যেন বিয়ের ধুম লেগে গিয়েছে পাকিস্তানে। সেখানে কেউ স্কুল থেকে ফিরতেই শুনছে তার বিয়ে, কাউকে আবার কসমেটিকসের প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এদের সকলেরই বয়স– ১২ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। যে বয়স তাদের বেড়ে ওঠার গড়ে ওঠার, স্বপ্নের-কল্পনার, ভাবনার-জানবার — সেই বয়সেই তাদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে! তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে আস্ত সংসারের দায়িত্ব!
আরও পড়ুন: Glacial Lake Outburst: ভয়ংকর শব্দে দুরন্ত গতিতে এসে আছড়ে পড়ল বরফের বিশাল পাহাড়! তারপর…
বাল্যবিবাহ যে কোনও সময়েই যে কোনও প্রেক্ষিতেই খারাপ। কিন্তু ঠিক এই সময়টায় কেন এত বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটছে? যেসব পরিবারে এই বিয়ে হচ্ছে, সেই সব পরিবারের দাবি, এই সব বিয়ে হচ্ছে স্রেফ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই নাকি তাদের এই রকম সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিয়ে? ধাঁধার মতো শোনাচ্ছে?
না, কোনও রহস্য নেই। সত্যই বিয়ে বাড়ছে। প্রায় দ্বিগুণ বয়সি পাত্রদের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে পাক নাবালিকা ও কিশোরীদের।
কেন বাড়ছে বাল্য বিবাহ?
জানা গিয়েছে, প্রতি বছর বন্যায় বিধ্বস্ত হয় পাকিস্তান, আর এই বন্যার কারণেই সে পড়ে আর্থিক সংকটের কবলে। এই আর্থিক সংকটের কবলে পড়ে হাঁসফাঁস করে পরিবারগুলি। বাঁচবার কোনও উপায় থাকে না, তাদের হাতে। তাই প্রায় খড়কুটোর মতোই তারা আঁকড়ে ধরেছে বিয়ের বিষয়টিকে। কেন বিয়ে? কারণ বিয়ের বদলে মিলছে মোটা টাকা। পোশাকি নাম যৌতুক, তবে তা পাত্রপক্ষ নয়, পাচ্ছে কন্যাপক্ষ। কন্যাপক্ষ এই টাকার লোভেই নিজের পরিবারের মেয়েদের তড়িঘড়ি বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। এতে দুটো লাভ। এক, সংসার থেকে একজন সদস্য কমছে, খাওয়া-পরার খরচ বাঁচছে, দুই, বিয়ে সূত্রে পরিবারের হাতে এককালীন কিছু টাকা চলে আসছে। পাত্রীর পরিবারকেও দোষ দেওয়া যাচ্ছে না, কারণ, তারা বড়ই নিরুপায়। দারিদ্র্য থেকে বাঁচতে, একটু সচ্ছলতার সঙ্গে সংসার চালাতেই বাবা-মায়েরা তাদের কন্যাসন্তানদের অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন!
এবং দেখা গিয়েছে, বিগত কয়েক বছর ধরেই পাকিস্তানে বাড়ছে বাল্যবিবাহ। তবে ২০২২ সালে ভয়ংকর বন্যার পর থেকেই সংখ্য়াটা আরও কয়েকগুণ বেড়েছে! গত মে-জুন মাসেই কমপক্ষে ৪৫ জন নাবালিকার বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছে সেখানে!
পাকিস্তানে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস ক্রমশ আতঙ্কের হয়ে উঠেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে সেখানে বছরের পর বছর ভারী বৃষ্টি হচ্ছে, বাড়ছে ধস, বাড়ছে বন্যার আশঙ্কাও। আশঙ্কা কেন, বন্যা হচ্ছেও। আর এর জেরে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে ফসলের।
আরও পড়ুন: Earthquake in Russia: তীব্র ভূমিকম্প সঙ্গে ভয়ংকর সুনামি-আতঙ্ক, ওদিকে আগুন ঝরছে আকাশ থেকে…
২০২২ সালের হড়পা বানের পর এখনও সেখানকার অনেক গ্রামই সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। চাষজমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ওই সব গ্রামের কৃষকদের রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বড় পরিবারের পেট চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই বাধ্য হয়েই তারা তাদের নাবালিকা মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। এরাই পরিচিত হচ্ছে ‘মনসুন ব্রাইড’ হিসেবে!
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)