NOW READING:
কমেছে গোল, অ্যাসিস্টের সংখ্য়া, ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে উদ্বেগ্ন বাড়ছে পেত্রাতোসের?
January 16, 2025

কমেছে গোল, অ্যাসিস্টের সংখ্য়া, ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে উদ্বেগ্ন বাড়ছে পেত্রাতোসের?

কমেছে গোল, অ্যাসিস্টের সংখ্য়া, ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে উদ্বেগ্ন বাড়ছে পেত্রাতোসের?
Listen to this article


কলকাতা: গত দুই মরশুমে তিনি হয়ে উঠেছিলেন মোহনবাগান (Mohun Bagan Super Giants) জনতার নয়নের মণি। দলের ৩৬টি গোলে তাঁর অবদান ছিল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে। কিন্তু এ মরশুমে ১৩টি ম্যাচ খেলা হয়ে গেলেও সেই চেনা তারকাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, যাঁর নাম দিমিত্রিয়স পেত্রাতোস (Dimitrios Petratos)। এ বার ১৩টি ম্যাচে ৭৮৪ মিনিট মাঠে থেকে তিনি দু’টি গোল করেছেন এবং তিনটি গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন। স্বাভাবিক ভাবেই সমর্থকদের মনে হতে পারে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ দলে থাকা এই খেলোয়াড় কি তা হলে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছেন?

গত দুই মরশুমে দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল করেছিলেন শুধু নয়, অ্যাসিস্টেও তিনি ছিলেন দলের মধ্যে সেরা। আইএসএলে এ পর্যন্ত দলের ৪১টি গোলে অবদান রেখে তিনিই এখন এক নম্বরে। তাঁর পিছনেই রয়েছেন মনবীর সিংহ। যিনি আর তিনটি গোলে অবদান রাখলে পেত্রাতোসকে ছুঁয়ে ফেলতে পারবেন। কিন্তু পেত্রাতোস কি আর এগোতে পারবেন না?

গত দুই মরশুমে যে গতিতে গোল ও অ্যাসিস্টের সংখ্যা বেড়েছিল তাঁর, এ মরশুমে হয়তো সেই গতিতে এই সংখ্যাগুলি বাড়ছে না তাঁর। আসলে গত দুই মরশুমে তিনি ছিলেন দলের আক্রমণের প্রধান অস্ত্র। আন্তোনিও লোপেজ হাবাস ও হুয়ান ফেরান্দো তাঁকে ছাড়া আক্রমণ বিভাগ সাজানোর কথা ভাবতেই পারতেন না। কারণ, তখন তাঁদের হাতে আর সে রকম অস্ত্র ছিল না। গত মরশুমে সঙ্গী হিসেবে জেসন কামিংসকে পান তিনি। কিন্তু যে মরশুমে পেত্রাতোস মোহনবাগানে যোগ দেন, সেই মরশুমে তিনিই ছিলেন দলের আক্রমণে একমাত্র ভরসা।

বদলে যাওয়া ছবিতে দিমি

এ বার ছবিটা সম্পুর্ণ অন্যরকম। এ বার দলে যোগ দিয়েছেন আরও দুই দুরন্ত অ্যাটাকার জেমি ম্যাকলারেন ও গ্রেগ স্টুয়ার্ট। তাই পেত্রাতোসের গুরুত্ব অনেকটাই কমে গিয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিহবাল মহল। কিন্তু সত্যিই কি তাঁর গুরুত্ব কমে গিয়েছে?

পেত্রাতোসকে নিয়ে উঠলেই মোহনবাগান কোচ হোসে মোলিনা বলেন, ‘দিমি যথেষ্ট ভাল ফুটবলার। ওকে নিয়ে আমি একটুও চিন্তিত নই। আসলে অ্যাটাকেরদের সবাই গোলের সংখ্যা দিয়ে বিচার করে। আসলে ঘটনাটা তা নয়। শুধু গোল করাই অ্যাটাকারদের কাজ নয়, আরও কাজ আছে। সেই কাজগুলো কিন্তু যথেষ্ট ভালই করছে দিমি। কিন্তু ওর এই কাজগুলো কারও নজরে আসে না!’

এ মরশুমে চার বিদেশী অ্যাটাকারদের মধ্যে প্রথম দলে জায়গা পাওয়ার জন্য জমজমাট একটা প্রতিযোগিতা চলছে অনবরত। জামশেদপুরের বিরুদ্ধে আসন্ন ম্যাচের আগে সাংবাদিক বৈঠকে এই নিয়ে জেসন কামিংস বলেন, ‘আমাদের দলের মধ্যে সব সময়ই একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা চলে, যেটা একটা ভাল দলের পক্ষে খুবই জরুরি। সাফল্য পেতে গেলে, ট্রফি জিততে হলে একটা ভাল স্কোয়াড অবশ্যই প্রয়োজন, যে দলে প্রত্যেকেই খেলতে চায় ও খেলার জন্য তৈরি। ফলে প্রত্যেকেই রোজ নিজের সেরাটা দিতে বাধ্য হয়। এটা দলের পক্ষে খুবই ভাল। পরিবর্ত হিসেবে যারা মাঠে নামে, তারাও দলকে দারুন ভাবে সাহায্য করে। আমরা একটা পরিবার, যে পরিবারে প্রত্যেকেই একে অপরের জন্য গর্বিত’।

নীচে চার বিদেশী অ্যাটাকারের পরিসংখ্যানের দিকে যদি তাকানো যায়, তা হলে দেখা যাবে, এ মরশুমে সবচেয়ে বেশিক্ষণ মাঠে থেকেছেন ম্যাকলারেন। ১০১২ মিনিট খেলেছেন তিনি। সেখানে ৫৩৪ মিনিট খেলেছেন কামিংস, ৭৮৪ মিনিট খেলেছেন পেত্রাতোস ও ৫৫৭ মিনিট খেলেছেন স্টুয়ার্ট। এই তালিকায় দু’নম্বরে রয়েছেন। পেত্রাতোস যদি ব্যর্থই হবেন, তা হলে এত বেশিক্ষণ তাঁকে মাঠে রাখলেন কেন?

জেমি ম্যাকলারেন

মাঠে কতক্ষণ- ১০১২ মিনিট, গোল- , অ্যাসিস্ট- , গোল অবদান- , সুযোগ তৈরি- ১১, লক্ষ্যে শট- , ম্যাচ পিছু লক্ষ্যে শট- ০.৫৭, শট থেকে গোলের হার (ব্লক-সহ)- ২৭.২৭, প্রতিপক্ষের বক্সে বলে পা- ৫৩, ফাইনাল থার্ডে পাস- ১৩, সফল ড্রিবলের হার- ৬৬.৬৭, ক্রস (কর্নার-সহ)- , সফল ক্রস/কর্নার- 

জেসন কামিংস

মাঠে কতক্ষণ- ৫৩৪ মিনিট, গোল- , অ্যাসিস্ট- , গোল অবদান- , সুযোগ তৈরি- ১০, লক্ষ্যে শট- , ম্যাচ পিছু লক্ষ্যে শট- ০.৬৪, শট থেকে গোলের হার (ব্লক-সহ)- ২৬.৬৭, প্রতিপক্ষের বক্সে বলে পা- ২৮, ফাইনাল থার্ডে পাস- ১৮, সফল ড্রিবলের হার- ৫৭.১৪, ক্রস (কর্নার-সহ)- ২২, সফল ক্রস/কর্নার- ৪০.৯১

দিমিত্রিয়স পেত্রাতোস

মাঠে কতক্ষণ- ৭৮৪ মিনিট, গোল- , অ্যাসিস্ট- , গোল অবদান- , সুযোগ তৈরি- ৩২, লক্ষ্যে শট- ১০, ম্যাচ পিছু লক্ষ্যে শট- ০.৭৭, শট থেকে গোলের হার (ব্লক-সহ)- ৮.৭, প্রতিপক্ষের বক্সে বলে পা- ৪১, ফাইনাল থার্ডে পাস- ৪৬, সফল ড্রিবলের হার- ২৫, ক্রস (কর্নার-সহ)- ৯১, সফল ক্রস/কর্নার- ২৮.৫৭

গ্রেগ স্টুয়ার্ট

মাঠে কতক্ষণ- ৫৫৭ মিনিট, গোল- , অ্যাসিস্ট- , গোল অবদান- , সুযোগ তৈরি- ২৩, লক্ষ্যে শট- , ম্যাচ পিছু লক্ষ্যে শট- ০.৩, শট থেকে গোলের হার (ব্লক-সহ)- ৭.১৪, প্রতিপক্ষের বক্সে বলে পা- ২১, ফাইনাল থার্ডে পাস- ৪৫, সফল ড্রিবলের হার- ৬০, ক্রস (কর্নার-সহ)- ২৫, সফল ক্রস/কর্নার- ৩২

গোলে না থাকলেও আক্রমণে আছেন

ওপরের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে গোল করতে না পারলেও বাকি তিনজনের চেয়ে পেত্রাতোস সবচেয়ে বেশি গোলের সুযোগ (৩২) তৈরি করেছেন। অন্যদের চেয়ে তাঁর গোলের লক্ষ্যে শটও বেশি। ম্যাচপিছু গোলে শটও তিনিই অন্যদের চেয়ে বেশি নিয়েছেন।

প্রতিপক্ষের বক্সে সবচেয়ে বেশিবার (৫৩) বল ছুঁয়েছেন ম্যাককলারেন। তার পরেই রয়েছেন পেত্রাতোস (৪১)। ম্যাচপিছু প্রতিপপক্ষের বক্সে বল ছোঁয়ার হারেও তিনি রয়েছেন দুই নম্বরে, ম্যাকলারেনের পরেই। দিমির ক্রসের সংখ্যা অন্য তিনজনের চেয়ে অনেক বেশি (৯১)। তবে ক্রসের সাফল্যের দিক থেকে তিনি পিছিয়েই রয়েছেন।

অর্থাৎ, বোঝাই যাচ্ছে গোল করা বা করানোর ব্যাপারে পেত্রাতোস অন্যদের চেয়ে এগিয়ে না থাকলেও গোলের সুযোগ তৈরি, ক্রসের সংখ্যা, লক্ষ্যে থাকা শট-সহ বিভিন্ন আক্রমণাত্মক পরিসংখ্যানে তিনি অন্য তিন বিদেশীর চেয়ে এগিয়ে। এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে দিচ্ছে যে তিনি আক্রমণে যথেষ্ট সক্রিয় ও কার্যকরী ভূমিকা পালন করছেন ঠিকই। কিন্তু যেটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং যে জন্য সবার নজরে পড়া যায়, সেই গোল করা ও অ্যাসিস্টের ক্ষেত্রে তিনি এ বার পিছিয়েই রয়েছেন। ফলে তাঁকে এই মরশুমে ব্যর্থ, এ কথা বলা যায় না।

‘আমার কাছে দলের পারফরম্যান্সই গুরুত্বপূর্ণ’

দিমিকে এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, গত দু’বারের তুলনায় তাঁর এ বারের পারফরম্যান্স নিয়ে তিনি কী বলছেন। যার উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘আমি সবসময়ই নিজের পারফরম্যান্সে উন্নতি করার চেষ্টা করি। তবে নিজের পারফরম্যান্সের চেয়ে দলের পারফরম্যান্স ও ফলকে আমি বেশি গুরুত্ব দিই। কারণ, দলের সাফল্যই আমাদের সবার কাছে আসল লক্ষ্য। দলের ভালর জন্য যা যা করা দরকার, তা সবই করার চেষ্টা করি। নিয়মিত গোল না পেলেও আমার তাতে কোনও আফসোস নেই। আমি গোল পাচ্ছি না তো কী হয়েছে, অন্যেরা তো গোল পাচ্ছে, দল তো জিতে চলেছে। আমার কাছে এটাই আসল’।

এমন একজন টিমম্যান দলে থাকলে তার চেয়ে ভাল আর কীই বা হতে পারে? তাই পেত্রাতোস যতই কম গোল পান বা অ্যাসিস্ট করুন, তাঁকে নিয়ে মোলিনার কোনও অভিযোগ নেই। কারণ, তিনি জানেন গোল না করলেও পেত্রাতোস একজন অ্যাটাকারের অন্যান্য যে কাজগুলি করা দরকার, তা সবই যথেষ্ট দায়িত্ব সহকারে করছেন। দীর্ঘ লিগে চার বিদেশী অ্যাটাকারকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলালে আখেরে দলেরই যে লাভ, তা কোচের চেয়ে ভাল আর কে-ই বা বুঝবেন?

(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)

আরও পড়ুন: হারের মুখ থেকে এক পয়েন্ট ছিনিয়ে নিয়েছে দল, দুরন্ত প্রত্যাবর্তনের কারণ জানালেন মহামেডান কোচ 



Source link