জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: গেরুয়াধারী যুবকদের হুমকি। দিল্লির বহুল পরিচিত বাঙালি এলাকা চিত্তরঞ্জন পার্কে মন্দিরঘেঁষা এক মাছের বাজার বন্ধের হুমকি দিলেন সেই উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। অন্তত তেমনই অভিযোগ। ভুক্তভোগীদের দাবি, বাজারে গিয়ে মাছ ব্যবসায়ীদের তাঁরা জানিয়েছেন, এই বাজার বন্ধ করতে হবে, কারণ, এই বাজার মন্দির-লাগোয়া এবং সেটা মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করছে। গেরুয়াধারী ওই যুবকেরা দোকানি ও ক্রেতাদের বলেন, এই বাজার সনাতন ধর্মের পরিপন্থী। সনাতন ধর্মে প্রাণীহত্যা নিষিদ্ধ। এই মন্দির ও মাছবাজার একেবারে পরস্পর লাগোয়া। তাই এই বাজার বন্ধ করতে হবে।
দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কের একটা ইতিহাস আছে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পরে দক্ষিণ দিল্লির এই চিত্তরঞ্জন পার্কে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে বহু বাঙালি হিন্দু উদ্বাস্তু চলে এসেছিলেন। সেখানেই তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এটি যেন উত্তর প্রদেশের মধ্যে এক টুকরো বাংলা। যেন দিল্লির মধ্যে এক টুকরো কলকাতা।
প্রসঙ্গত, বিষয়টি রাজনৈতিকও হয়ে উঠেছে। তৃণমুল কংগ্রেস নেত্রী ও সাংসদ মহুয়া মৈত্র ঘটনার একটি ভিডিয়ো শেয়ার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন– ‘দেখুন, কীভাবে বিজেপির গুন্ডারা চিত্তরঞ্জন পার্কের মৎস্যপ্রেমী বাঙালিদের হুমকি দিচ্ছেন। স্থানীয় লোকজনের দাবি, ৬০ বছরে এমন ঘটনা এই প্রথম!’ সত্যি বলতে কী, চিত্তরঞ্জন পার্কের পুরনো বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী প্রত্যেকেই এক বাক্যে জানিয়েছেন, গত ৬০ বছরের মধ্যে এখানে এ ধরনের হুমকি কখনও শোনা যায়নি! এই তল্লাটের কোনো বাজারের কোনও দোকানিরই এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি। তাছাড়া, বাঙালি ও মাছ প্রায় সমার্থক। অবাঙালিদেরও সেটা খুব ভালো রকম জানা।
আরও পড়ুন: Bengal Weather Update: ন’টি জেলায় ঝড়বৃষ্টির সতর্কতা! তবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়বৃষ্টি হতে পারে প্রায় সব জেলাতেই, সঙ্গে…
আরও পড়ুন: Indian Students in US: ট্রাম্পের অভিবাসী বিলের কোপে পড়ে এবার কি দেশে ফিরে আসতে হবে লক্ষ লক্ষ ভারতীয় পড়ুয়াদের?
তা হলে কেন এবং কীভাবে এমনটা ঘটতে পারল?
ওই ভিডিয়োতে দেখা যায়, ওই মাছ-বাজারের ১ নম্বর মার্কেটের এক দোকানি ওই যুবকদের বলছেন, এই বাজার দিল্লি উন্নয়ন পর্ষদের (ডিডিএ) তৈরি করা। তাঁরাই এই বাজারে মাছ বিক্রির অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু এর জবাবে এক গেরুয়াধারীকে বলতে শোনা যায়, ডিডিএ এমন বহু অকাজ করেছে, তারও ব্যবস্থা করা হবে। আপাতত আপনাদের বলা হচ্ছে এখানে মাছ বিক্রি বন্ধ করতে। কেননা সনাতন ধর্মে প্রাণীহত্যা অপরাধ। তাঁর আরও দাবি, মন্দির ও বাজারের দেয়াল প্রায় লাগোয়া। মাছ বিক্রির দরুন মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে। দোকানিরা পাল্টা যুক্তি দেন, বাজারের মাছবিক্রেতারাই এই মন্দিরটি তৈরি করিয়েছিলেন। সেখানে নিয়মিত পুজোও করা হয়।
দিল্লি বিজেপির সভাপতি বীরেন্দ্র সচদেব এই প্রসঙ্গে বলেছন, মনে হচ্ছে ভিডিয়োটি ভুয়ো। ওটা যাঁরা করেছেন, তাঁরা চিত্তরঞ্জন পার্ক এলাকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চান। সচদেব হুমকির কড়া নিন্দা করেন ও পুলিসকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলেন। সচদেব বলেন, মন্দিরের পবিত্রতা প্রত্যেকেরই রক্ষা করা উচিত। এই বাজারের দোকানিরা প্রত্যেকেই সব সময় সেই পবিত্রতা রক্ষা করে চলেছেন। এই বাজার বেআইনি নয়। তা ছাড়া এই তল্লাটের বাসিন্দাদের কাছেও মাছ প্রয়োজনীয়।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)