কলকাতা: সরস্বতী পুজো উপলক্ষে গোটা রাজ্যে যখন উৎসবের আমেজ, বর্জ্য ও দুর্গন্ধে ভরা ম্যানহোল পরিষ্কার করতে নেমেছিলেন তিন শ্রমিক। আর তাতেই বিপত্তি ঘটে গেল কলকাতার লেদার কমপ্লেক্সে। ম্যানহোলে তলিয়ে যান তাঁরা। বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে ভিতরে আটকে থাকার পর তিনজনেরই দেহ উদ্ধার হয়। আর তাতেই ফের প্রশ্ন উঠে গেল সরকারের ভূমিকায়। কারণ শ্রমিকদের দিয়ে ম্যানহোল পরিষ্কার করা নিয়ে আগেই নিষেধাজ্ঞা জারি করে সুপ্রিম কোর্ট। তার পরও ম্যানহোল পরিষ্কার করতে শ্রমিকদের কেন নামানো হল উঠছে প্রশ্ন। (Manual Scavenging)
রবিবার সকাল ৯টা নাগাদ কলকাতার লেদার কমপ্লেক্সে বড় বিপদ ঘটে যায়। রাসায়নিক ও বর্জ্যে ভরা ম্যানহোল পরিষ্কার করতে নামেন KMDA-র তিন শ্রমিক। প্রথমে এক শ্রমিক নীচে নামেন। তিনি উঠে আসছেন না দেখে, তাঁকে বাঁচাতে আর একজন নেমে যান ম্যানহোলের ভিতরে। তিনিও উঠছেন না দেখে নেমে যান তৃতীয় জন। তার পর বেশ কয়েক ঘণ্টা কেটে গেলেও তিনজনের একজনও ম্যানহোল থেকে উঠে আসেননি। লেদার কমপ্লেক্স থানার পুলিশ, দমকল এবং স্থানীয় লোকজন উদ্ধারকার্যে হাত লাগালেও জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা যায়নি কাউকে। (Kolkata News)
কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম যদিও জানিয়েছেন, ওই তিন শ্রমিক কেন ম্যানহোলে নামলেন, উত্তর নেই তাঁদের কাছেও। ঠিকাদার বা কোনও আধিকারিক যদি যুক্ত থাকেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন। ফিরহাদের দাবি, বিষাক্ত গ্যাস আছে কি না, তা আগে খতিয়ে দেখা উচিত ছিল। পাম্প দিয়ে পরিষ্কার করানোর কথা। তা না করে শ্রমিকদের নামানো উচিত হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি। মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণাও করেছেন তিনি।
আর এই পরিস্থিতিতেই প্রশ্ন উঠছে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকায়। কারণ গত ২৯ জানুয়ারি দেশের ছয়টি বড় শহর- কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই এবং বেঙ্গালুরুতে শ্রমিক দিয়ে ম্যানহোল পরিষ্কার করায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে সুপ্রিম কোর্ট। ম্যানহোল পরিষ্কার করতে গিয়ে কারও মৃত্যু হলে পরিবারকে ১০ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশও দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তার পরও কেন শ্রমিকদের দিয়ে ম্যানহোল পরিষ্কার করানোর কাজ চলছে, উঠছে প্রশ্ন।
তবে কলকাতাই নয় শুধু, বিভিন্ন রাজ্যে এখনও পর্যন্ত শ্রমিকদের দিয়েই ম্যানহোল পরিষ্কার করানো হয়। দেশের সংসদে এ নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা হলেও, সুপ্রিম কোর্টে নির্দেশ দিলেও, পরিস্থিতি বদলায়নি। সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে সম্প্রতি কেন্দ্র জানায়, ৭৭৫ জেলার মধ্যে ৪৫৬টি থেকেই সাফাইকর্মীর মৃত্যুর খবর মেলেনি।
আরও দেখুন