জি ২৪ ঘণ্টা ডিডিটাল ব্যুরো: বাংলাদেশে প্রতি বছর বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বের বহ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। রঙবেরঙের মুখোশ, মূর্তি নিয়ে বের হয় ওই শোভাযাত্রা। এতদিন এর পোশাকি নাম ছিল ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। শেখ হাসিনা সরকার চলে যাওয়ার পর তা হয়ে গিয়েছে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। কিন্তু কেন?
বাংলাদেশে নতুন সরকার আসার পর ওই শোভাযাত্রার নাম নিয়ে আপত্তি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। বিশেষ করে ওই শোভাযাত্রার বিরুদ্ধে আপত্তি তোলেন ইসলামপন্থীরা। তার পরও ওই শোভাযাত্রার নাম বদল করে দেওয়া হয়। দাবি তোলা হল মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে একটি ধর্মীয় অনুসঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। শোভাযাত্রাটি হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতি থেকে এসেছে। পাশাপাশি, বাংলা নববর্ষের ওই শোভাযাত্রার আদি নাম ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা-ই।
মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদল নিয়ে আপত্তি তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, এতবড় একটা নাম বদল, এনিয়ে কোনও কথাই বলা হয়নি তাদের সঙ্গে। মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনেস্কোর বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। তাহলে সেই স্বীকৃতির কী হবে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা হল, এ জিনিস সমর্থন করছি না। চারুকলার শিক্ষার্থীদের মতামত ছাড়া এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শোভাযাত্রার প্রস্তুতির মধ্যে চারুকলায় দুটি মোটিফে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তিরও দাবি জানান তিনি।
নাম বদলের ব্যাপারে সওয়াল করেছেন চারুকলা বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম শেখ। তিনি বলেন, এবার নববর্ষ উদযাপন ‘একপেশে সাংস্কৃতিক চর্চা’ থেকে বেরিয়ে এসে ‘ইনক্লুসিভ সাংস্কৃতিক চর্চা’হবে। নাম পরিবর্তনের বিষয়ে আমি পরিবর্তন বলতে চাই না। শুরুতে বর্ষবরণ ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা। আগে যেভাবে হয়েছিল, সেটির স্বতঃস্ফূর্ততা কতখানি ছিল সেটা বিশ্লেষণের বিষয়। পরবর্তীতে মঙ্গল শোভাযাত্রার ক্ষেত্রে কী ঘটেছে এজন্য পরিবর্তন নয়, পুনরুদ্ধার বলছি আনন্দ শোভাযাত্রাকে,”
আরও পড়ুন-কঙ্কালীতলার পবিত্র কুণ্ড থেকে উঠল পঞ্চমশিব, ভক্তকুলের ভিড় সতীপীঠে…
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে বাংলা বর্ষবরণের এই মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পায়। তবে এর যাত্রা শুরু হয়ে ১৯৮৯ সালে। তখন এই শোভাযাত্রার নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। এবার হাসিনার উত্খাতের পর এবার নাম বদল করে বর্ষবরণ করা হচ্ছে।
নতুন সরকারের আমলে এই নাম বদলের বিষয়টির সমালোচনা করেছেন অনেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের যে ব্যাচ প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনকারীদের সঙ্গে ছিলেন নাজিব তারেক। তিনি বলেন, শোভাযাত্রার নাম বদলের চেষ্টা হাস্যকর। যে নামটি আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃতি পেয়ে গিয়েছে তা বদলের কী প্রয়োজন পড়ল। জাতি সংঘের কাছে এটি মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে পরিচিত। এখন মনে হতে পারে মঙ্গল শোভাযাত্রা বলে আর কিছুই নেই। এর ফলে আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হবে।
আরও পড়ুন-পরকীয়ায় জড়িয়েছে স্ত্রী! সন্দেহে ভয়ংকর সিদ্ধান্ত স্বামীর! হতভম্ব পরিবার-পড়শিরা…
প্রসঙ্গত, মঙ্গল শোভাযাত্রাকে নতুন সরকারের অনেকে আওয়ামী লীগের অনুসঙ্গ বলেই মনে করেন। তাই এর বিরুদ্ধ অনেকে আপত্তি তোলেন। নাজিব তারেক এক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্য়মে বলেন, অমঙ্গল বলতে আমরা স্বাধীনতা বিরোধী বা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে বুঝিয়েছিলাম। তাদের বিরুদ্ধে মঙ্গলের বার্তা দেওয়াকে কোনো অবস্থাতেই বাতিল করার কোনও সুযোগ নেই।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)