জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ইরান এখন পাল্লা দিচ্ছে দুনিয়ার অন্যতম শক্তি ইসরায়েলের সঙ্গে। তেহরানের উপরে আছড়ে পড়েছে ইসরায়েলি মিসাইল। পাল্টা দিচ্ছে ইরানও। ইসরায়েলের বন্দরশহর হাইফা থেকে শুরু করে আইডিএফের সদর দফতরে মিসাইল দেগেছে তেহরান। ইসরায়েলের দাবি, পরমাণু বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছে ইরান। ইতিহাস ঘাঁটলে ইরানকে এই জায়গায় এনেছেন রুহুল্লা খোমেইনি, আয়াতোল্লা খোমেইনিরা। পাশাপাশি, আরও একটি চমকপ্রদ তথ্য হল, খোমেইনিদের শিকড় ছিল যোগীরাজ্যের বারাবাঁকিতে। চমকে দেওয়ার মত হলে এটাই সত্যি।
ইরানে ইসলামি বিপ্লব হয়েছিল ১৯৭৯ সালে। সেই বিপ্লবের রূপকার ছিলেন রুহুল্লা খোমেইনি, দেশের বর্তমান ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা খোমেইনির বাবা। রুহুল্লা যখন ইরানে বড় হচ্ছিলেন তখন দেশটা এমন ছিল না। ইরান ছিল খোলামেলা দেশ। রাস্তায় মেয়েদের পর্দা করতে হত না। মানুষের চালচলন ছিল পশ্চিমাদের মতো। এরকম এক পরিবেশে শৈশবেই দাদু সৈয়দ আহমেদ মাসুভি হিন্দির কাছে শিয়া মতাদর্শের দীক্ষা পান রুহুল্লা খোমেইনি। এই সৈয়দ আহমেদ মাসুভি ছিলেন উত্তর প্রদেশের বারাবাঁকির মানুষ। ভারতে থেকে তিনি ইরান চলে যান। আর নিজের নামের সঙ্গে হিন্দি কথাটা জুড়ে নেন। তার শিক্ষাতেই কড়া ধর্মীয় ভাবাপন্ন হয়ে ওঠেন রুহুল্লা খোমেইনি। তার হাত ধরেই ইরান হয়ে ওঠে এক ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে।
ইসলামিক বিপ্লবের পর পর রুহুল্লা খোমেইনির আমলে ঘুরে দাঁড়ায় ইরান। গোটা দেশ এক কট্টরপন্থার দিকে চলে যায়। মহিলাদের বাইরে বের হওয়া, পর্দা করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন নিয়মকানুন তৈরি হয়ে যায়। পাশাপাশি গোটা দেশটা স্বনির্ভর হয়ে ওঠার চেষ্টা করতে শুরু করে। শুরু হয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরির কাজ। ধীরে ধীরে শিয়া মুসলিম অধ্যুসিত দেশটি মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী দেশ হিসেবে উঠে আসে। পাশাপাশি প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে সৌদি আরব-আমেরিকা অক্ষের। এইসব হয়তো হতই না যদি উত্তর প্রদেশের এক ছোট্ট শহর থেকে ইরানে চলে না যেতেন খোমেইনির দাদু সৈয়দ আহমেদ মাসুভি হিন্দি। তিনিই ইরানের আধুনিক ইতিহাস লিখে দেন। এমনটাই দাবি করেছেন বিবিসির সাংবাদিক বকর মইন।
উত্তর প্রদেশের বারাবাঁকির কিন্তু শহরে জন্মেছিলেন সৈয়দ আহমেদ মাসুভি। শিয়া মওলানা ছিলেন। ইরানে নিজের নামের সঙ্গে ‘হিন্দি’ কথাটা জুড়ে দেন। এই হিন্দি-র নাতি হলে রুহুল্লা খোমেইনি। তাকেই ইরানে ১৯৭৯ সালের ইলামিক বিপ্লবের জনক বলে মনে করা হয়। সৈয়দ আহমেদ মাসুভি হিন্দির বাবা ১৮ শতকে ইরান থেকে ভারতে এসেছিলেন। ১৮৩০ সালে ইরাকের নাজাফে হজরাত আলি কবর দর্শন করতে যান সৈয়দ আহমেদ মাসুভি হিন্দি। এর চার বছর পর তিনি চলে যান ইরানের শহর খোমেইনে। সেখানেই বাড়ি কিনে বসবাস শুরু করেন। ইরানেরই এক মহিলাকে বিয়ে করেন। তাদের ৫ সন্তান হয়। এর মধ্যে রুহুল্লা খোমেইনির বাবা মোস্তাফার জন্ম হয় ১৯০২ সালে। সৈয়দ আহমেদ মাসুভি হিন্দি মারা যান ১৮৬৯ সালে। তাঁকে সমাধিস্ত করা হয় কারবালায়।
আরও পড়ুন-‘আয়রন ডোম’ কি ফাঁপা আওয়াজ! ইজরায়েলের সেনা সদরে আছড়ে পড়ল ইরানি মিসাইল
আরও পড়ুন-ইরানের সরকারি টিভির দফতরে আছড়ে পড়ল ইসরায়েলি মিসাইল, পালালেন অ্যাঙ্কর
রুহুল্লা খোমেইনির যখন মাত্র ৫ বছর বয়স তখন স্থানীয় এক ল্যান্ডলর্ডের নির্দেশে তার বাবা মোস্তাফাকে খুন করা হয়। এরপর বিভিন্ন ওঠাপড়ার মধ্য দিয়ে বড় হন রুহুল্লা। শিয়া মতাদর্শের একনিষ্ঠ ভক্ত হয়ে ওঠেন। ধীরে ধীরে তিনি ধর্মীয় স্কলার হয়ে ওঠেন। পাশাপাশি সেইসময় ইরান ক্রমশ পশ্চিমী সংস্কৃতির ভক্ত হয়ে ওঠে।
১৯৬০১৯৭০ সাল এই এক দশকে শাহদের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ প্রকাশ্যে রাস্তায় আছড়ে পড়ে। শাহদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে ধর্মীয় ব্যক্তিক্তরা, ছাত্ররা, খেটে খাওয়া মানুষজন। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েই দেশে ইসলামিক বিপ্লব হয়ে যায় রুহুলা খোমেইনির নেতৃত্বে। ১৯৭৯ সালে ইরানের ক্ষমতা থেকে উত্খাত হয় শাহ-রা। এরপরই ক্ষমতায় চলে আসেন রুহুল্লা খোমেইনি। দেশ শাসন করেন ১৯৮৯ পর্যন্ত। তার পরেই দেশের সর্বোচ্চ নেতা হয়ে ওঠেন আজকের আয়াতোল্লা খোমেইনি।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)