<p><strong>সন্দীপ সরকার, কলকাতা :</strong> তিনি কোনও দিন সরকারি চাকরি করেননি। সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার অঙ্গও নন। কিন্তু, চিকিৎসক মহলে…স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরে কান পাতলে শোনা যায় …তিনিই নাকি সব ! একেবারে সুইপার থেকে শুরু করে সুপার পর্যন্ত তাঁর অঙ্গুলিহেলন ছাড়া নাকি বদলি হয় না। একথা শোনা যায়। কেউ বলেন তিনি ‘মেঘনাদ’, কেউ বলেন তিনি ‘অরণ্যদেব।’ তিনি চিকিৎসক শ্যামাপ্রসাদ দাস। আর জি কর-কাণ্ডের তোলপাড়ের মধ্যে অবশেষে মুখ খুললেন এস পি দাস। এবিপি আনন্দে বিস্ফোরক মুখ্যমন্ত্রীর এই চিকিৎসক। আর জি কর-কাণ্ড থেকে থ্রেট সিন্ডিকেট, দুর্নীতি নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন দক্ষিণ কলকাতার এই নামি অর্থোপেডিক সার্জন। </p>
<p><span style="color: #e03e2d;"><strong>এবিপি আনন্দ : আপনি নাকি আড়ালে থেকে স্বাস্থ্য ভবন চালান ?</strong></span></p>
<p><strong>চিকিৎসক শ্যামাপ্রসাদ দাস :</strong> আমি কোনও দিন সরকারি চাকরি করিনি। সরকারের সিস্টেমগুলো জানি না। আমি কোনও কাগজে সই, পদে থাকা….কোনও জায়গায় নেই। কিন্তু, একটাই জিনিস হল, আমি মুখ্যমন্ত্রীর ডাক্তার। বহুদিনের। ওঁর পরিবারের ডাক্তার। এখন সেই সূত্রে উনি হয়ত অনেক সময় মতামত জিজ্ঞাসা করেছেন। এটা করলে ভাল হয় কি হয় না ? তখন হ্যাঁ – না উত্তর দিয়েছি আমি। কিন্তু, এগুলোতে আমার কোনও হাত নেই। সম্পূর্ণ বিষয়টা নিয়ন্ত্রণ করেন স্বাস্থ্য কর্তারা। এখানে আমি কী করে নিয়ন্ত্রণ করব ? আমি কোনও উপদেশ দিলে সেটার প্রয়োগ করার ক্ষমতা তো আমার নেই। উনি (মুখ্যমন্ত্রী) সবসময় ভাবেন কীভাবে ভাল স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া যায়। কীভাবে ভাল দেওয়া যায় আমি সবসময় ভাবি। আমি কিছু বুদ্ধি…মানে কিছু হলে আপনাকে জিজ্ঞাসা করি…আপনি বলেন যেটা ভাল…সেটা বলেন হ্যাঁ ঠিক আছে…আর খারাপটা না করা…। সেটা যদি হয়ে থাকে যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরো চালাচ্ছি…এটা ঠিক নয়। </p>
<p><strong><span style="color: #e03e2d;">এবিপি আনন্দ : চিকিৎসক মহলের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আপনার এই সখ্যর কারণেই আপনি এত প্রভাবশালী ?</span></strong> </p>
<p><strong>চিকিৎসক শ্যামাপ্রসাদ দাস :</strong> ওঁর তো ডাক্তার অনেক আছে। অনেক ডাক্তার ওঁকে দেখেছেন। আমি এক প্রভাবশালী তাঁরা নন, সেটা তো ঠিক নয়। তাছাড়া আমি এমনিতে সিস্টেম জানি না। প্র্যাক্টিসে ব্যস্ত। তাহলে, আমি কী করে প্রভাবশালী হলাম বুঝতে পারছি না। </p>
<p><strong><span style="color: #e03e2d;">এবিপি আনন্দ : আপনার পরামর্শেই নাকি মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালাচ্ছেন ?</span></strong></p>
<p><strong>চিকিৎসক শ্যামাপ্রসাদ দাস :</strong> সেটা ঠিক নয়। কারণ, ওখানে অনেক প্রশাসনিক অফিসার রয়েছেন। তাঁরা সেটা চালান। কারণ, আমার পক্ষে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দেখা-চালানো সম্ভব নয়। কারণ, আমি তো চাকরি করি না। আমি তো প্র্যাক্টিস করি। তাতে ব্যস্ত। আমি যে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখি, সেটা যদি কারো ব্যথার কারণ হয় তাহলে আমার কিছু বলার নেই। সেটাই হয়ত হয়েছে। </p>
<p><strong><span style="color: #e03e2d;">এবিপি আনন্দ : মুখ্যমন্ত্রী আপনার পরামর্শ নিতেন কেন ?</span></strong> </p>
<p><strong>চিকিৎসক শ্যামাপ্রসাদ দাস :</strong> উনি আমাকে এতদিন ধরে দেখেছেন। দেখেছেন যে এই ডাক্তার…পরামর্শ ঠিক নয়…মানে প্রশ্ন…কোনটা করলে ভাল হয়, কোনটা করলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আরও উন্নতি করা যায়…সেটা উনি অনেক সময় আলোচনা করেন। ভাল হলে ‘হ্যাঁ’ বলি, খারাপ হলে ‘না’ বলি। </p>
<p><span style="color: #e03e2d;"><strong>এবিপি আনন্দ : গত ২-৩ বছরে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় একটা নতুন শব্দের উৎপত্তি হয়েছে, তা হল ‘উত্তরবঙ্গ লবি।’ বলা হয়, এই উত্তরবঙ্গ লবির পৃষ্ঠপোষক নাকি আপনি ?</strong></span></p>
<p><strong>চিকিৎসক শ্যামাপ্রসাদ দাস :</strong> এই ব্যাপারে আমার কোনও ধারণা নেই। এখন কতগুলো জিনিস চলে। যাঁদের ব্যথা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ডাক্তার বলে…যাঁদের মনে অনেক কষ্ট…। জিনিসটা ক্রিয়েটেড। ফেক, রিউমার। আমার উপরেই থ্রেট কালচার চলছে। আমি তো এতদিন কিছু বলিনি। </p>
<p><span style="color: #e03e2d;"><strong>এবিপি আনন্দ : সন্দীপ ঘোষকে কীভাবে চিনতেন। অনেকে বলছেন, তাঁর মাথায় আপনার হাত ?</strong></span> </p>
<p><strong>চিকিৎসক শ্যামাপ্রসাদ দাস :</strong> সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে আমার চেনা এই যে, উনি অর্থোপেডিক সার্জন, আমিও অর্থোপেডিক সার্জন। কনফারেন্স হত…হয়ত হায়, হ্যালো হয়েছে। এইটুকু চেনা। এর বাইরে আমার চেনা নেই সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে। কোনও মাথায় হাত কিছু…আমি আরজি কর মেডিক্যালে কোনওদিন যাইনি। সন্দীপের সঙ্গে কোনও দিন কথা বলিনি সেভাবে। সন্দীপকে ট্রান্সফার-পোস্টিং…এসব তো করার ক্ষমতা নেই আমার। </p>
<p><strong><span style="color: #e03e2d;">এবিপি আনন্দ : সন্দীপ ঘোষ ২ বার বদলি হয়েছেন। ২ বারই সেই অর্ডার লং টার্মে কার্যকর হয়নি…এর কি কোনও ব্যাখ্যা আপনার কাছে আছে ?</span></strong></p>
<p><strong>চিকিৎসক শ্যামাপ্রসাদ দাস :</strong> আমার কাছে কোনও ব্যাখ্যা নেই। আমার হাত নেই। প্রশাসন ঠিক করেছে। প্রশাসন করেছে। এই ছোট ছোট জিনিস দেখার মতো আমার সময় নেই। আমি এগুলো জানি না, দেখিনি। </p>
<p><strong><span style="color: #e03e2d;">এবিপি আনন্দ : ইদানীংকালে শুভেন্দু অধিকারী বারবার আপনার গ্রেফতারির দাবি তুলছেন…</span></strong></p>
<p><strong>চিকিৎসক শ্যামাপ্রসাদ দাস :</strong> ব্যাপারটা কিন্তু একই জায়গা থেকে আসছে। শুভেন্দু অধিকারী বাবার সঙ্গে আমার আলাপ আছে। উনি একজন ভাল মানুষ। শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে আমার কোনও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নেই। শুভেন্দু অধিকারী সম্পর্কে আমি কোনও দিন কোনও খারাপ কথা বলিনি। কিন্তু, শুভেন্দু অধিকারীকে দিয়ে জোর করে এই কথাগুলো বলানো হচ্ছে। উনি বলতে বাধ্য হচ্ছেন। বলানো হচ্ছে ওঁকে দিয়ে। <a title="শুভেন্দু অধিকারী" href="https://bengali.abplive.com/topic/suvendu-adhikari" data-type="interlinkingkeywords">শুভেন্দু অধিকারী</a>র এটা মনের কথা নয়। যে সোর্সটা তৈরি করেছিল…কালচারটা। যে ফেক নিউজ তৈরি করেছিল। সোর্সটা সেখান থেকে আসছে। </p>
<p><strong><span style="color: #e03e2d;">এবিপি আনন্দ : শুভেন্দুকে দিয়ে জোর করে কারা বলাচ্ছে ?</span></strong></p>
<p><strong>চিকিৎসক শ্যামাপ্রসাদ দাস :</strong> সেটা তো বেরোবে পরে। ঠিকই বেরোবে। কোন অদৃশ্য শক্তি…তা আঁচ করে বলা মুশকিল। </p>
<p><span style="color: #e03e2d;"><strong>এবিপি আনন্দ : সুকান্ত মজুমদারও বলছেন, আপনার গ্রেফতারি দরকার। আপনি নাকি এই ষড়যন্ত্রের কিংপিন…</strong></span></p>
<p><strong>চিকিৎসক শ্যামাপ্রসাদ দাস :</strong> টার্গেটেড। শুভেন্দু বললে সুকান্ত মজুমদারকেও তো বলতে হবে। নাহলে সাপোর্ট কোথা থেকে হল ? উনি হয়ত আমার সম্বন্ধে কিছু জানেনই না। উনি হয়ত গল্প শুনেছেন। এই ওই…</p>
<p><strong><span style="color: #e03e2d;">এবিপি আনন্দ : সুশান্ত রায়, অভীক দে, বিরূপাক্ষ…এদের কি আপনি চেনেন ?</span></strong></p>
<p><strong>চিকিৎসক শ্যামাপ্রসাদ দাস :</strong> সুশান্তকে চিনি। উনি আমাদের কলেজের জুনিয়র ছেলে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের। সুশান্তর সঙ্গে থাকতেন বা স্নেহ করতেন অভীককে। অভীককে চিনি আমি। কিন্তু, বিরূপাক্ষকে কোনওদিন দেখিনি। চিনিও না। </p>
<p><span style="color: #e03e2d;"><strong>এবিপি আনন্দ : বলা হল যে, আপনারাই হচ্ছেন ভয়ের পরিবেশ বা থ্রেট কালচার চালানোর মূল চক্রী ?</strong></span></p>
<p><strong>চিকিৎসক শ্যামাপ্রসাদ দাস :</strong> পুরো চক্রান্ত। ইট ইজ ক্রিয়েটেড। আমি কী চালাব ? কিছু লোক যদি আমার নাম ভাঙিয়ে কিছু করে থাকে সেটা তো আমি জানতে পারব না। কোনও অবকাশ নেই। সেই দোষ আমার ঘাড়ে বর্তাবে হতে পারে না। সুশান্ত একমাসে -দু’মাসে কথা বলতেন। অভীক হয়ত ২-১ বার কথা বলতেন। সৌরভের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। সন্দীপের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই।</p>
<p><strong><span style="color: #e03e2d;">এবিপি আনন্দ : ৯ অগাস্ট ঘটনাটা কখন জানতে পারলেন ?</span> </strong></p>
<p><strong>চিকিৎসক শ্যামাপ্রসাদ দাস :</strong> আমাকে অভীক ফোন করে বললেন, এরকম একটা বাজে ঘটনা ঘটে গেছে আরজি করে। আমি বললাম কী করে হল ? বললেন, এখন তো পুলিশ এসেছে। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাব্যক্তিরা এসেছেন। তদন্ত-পোস্টমর্টেম হবে। আমি পরে একবার ফোন করে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কেউ কি গ্রেফতার হল ? কৌতূহল …আর কিছু না। এরকম ঘটনা কোনওদিন শুনিনি। ৩-৪ বার কথা হয়েছে অভীকের সঙ্গে। সুশান্ত রায়ের সঙ্গে একবারও হয়নি।</p>
<p><strong><span style="color: #e03e2d;">এবিপি আনন্দ : সিবিআই থেকে কল পেয়েছেন ?</span></strong></p>
<p><strong>চিকিৎসক শ্যামাপ্রসাদ দাস :</strong> প্রশ্নই ওঠে না। আপনার যেখানে, আমিও সেখানে। আমার কাছে তথ্য কতটুকু আছে ? টিভি, খবরের কাগজ আর বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে শুনে। এর বাইরে নেই। সিবিআইয়ের ডাকার প্রশ্ন আসছে না…যদি ডাকে নিশ্চয়ই যাব।</p>
Source link
সন্দীপ ঘোষ থেকে উত্তরবঙ্গ লবি, এবিপি আনন্দে একান্ত সাক্ষাৎকারে মুখ্যমন্ত্রীর চিকিৎসক
