কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা চলাকালীন বিধানসভায় বিক্ষোভ BJP বিধায়কদের। আর সেই নিয়ে চরমে উঠল বাক-বিতণ্ডা। রোজ রোজ বিধানসভায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি নিয়ে BJP-কে নিশানা করেন মমতা। পাশাপাশি, BJP ধর্মীয় কার্ড খেলছে বলেও অভিযোগ করেন। মমতা জানান, মানবিকতা সবচেয়ে বড। ধর্ম দিয় কিছু হয় না। মানুষের মতন আচরণ করতে হয়। কোনও ধর্মকে অপমান করা যায় না বলে BJP-র উদ্দেশে মন্তব্য করেন মমতা। (Mamata Banerjee)
বুধবারও বিধানসভার অধিবেশন উত্তাল হয়ে ওঠে। আজ BJP বিধায়করা একরকম ভাবে তৈরিই হয়ে এসেছিলেন। কালো পোশাকে এদিন বিধানসভা কক্ষে প্রবেশ করেন BJP বিধায়করা। বিধানসভায় বিক্ষোভ দেখাবেন বলে ঠিক করেছিলেন আগেই। আর সেই আবহেই আজ বিধাসভায় উপস্থিত হন মমতা। গতকাল বিধানসভার বাইরে শুভেন্দু অধিকারী বিতর্কিত মন্তব্য করেন। তিনি জানান, ২০২৬ সালে BJP রাজ্যে ক্ষমতায় এলে তৃণমূলের বিজয়ী মুসলিম বিধায়কদের ছুড়ে ফেলে দেওয়া হবে। সেই নিয়ে আজ উত্তাপ ছড়ায় বিধানসভায়। (West Bengal Assembly)
আজ প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হওয়ার পর তৃণমূলের বিধায়করা শুবেন্দুর ওই মন্তব্যের বিরোধিতা করেন। শুভেন্দুর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওঠে। মন্ত্রী গোলাম রব্বানি বলেন, “শুভেন্দু যে মন্তব্য করেছেন, তা দেশের সংবিধানের পরিপন্থী। তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হোক।” গোলামের বক্তৃতা চলাকালীনই বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে ঢোকেন। তাঁকে দেখে তীব্র চিৎকার শুরু করে দেন BJP বিধায়করা। এর পর মমতা বক্তৃতা শুরু করলে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন BJP বিধায়করা।
সেই পরিস্থিতিতেই নিজের বক্তৃতা চালিয়ে যান মমতা। তিনি বলেন, “যেভাবে একটা ধর্মকে আক্রমণ করা হচ্ছে, যেভাবে মুসলিম ধর্মের নাম করে বিরোধী দলনেতা আক্রমণ করছেন, তা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বিরোধী দলনেতা সাসপেন্ডেড। কিন্তু বাইরে দাঁড়িয়ে তিনি যে মন্তব্য করছেন, তাও বিরোধী দলনেতার মন্তব্য হিসেবেই ধরতে হবে। কারণ আমি যখন বাইরে কোনও মন্তব্য করি, সেটা কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেই কটাক্ষ করা হয়। তাহলে বিরোধী দলনেতার মন্তব্যকে কেন ধরা হবে না?”
এতে অতীতে মমতার নেতৃত্বে বিধানসভা ভাঙচুর হয় বলে অভিযোগ করেন BJP-র শঙ্কর ঘোষ। এই ধরনের মন্তব্য বিধানসভায় করা যায় না বলে পাল্টা শঙ্করকে জানান স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু BJP-কে আক্রমণ করে যান মমতা। তিনি বলেন, “আমি নিজে হিন্দু। আমার বাড়িতে কালীপুজো হয়, সব ধরনের পুজো হয়। আপনারা ধর্মীয় কার্ড খেলছেন। মানবিকতা সবচেয়ে বড়। ধর্ম দিয়ে কিছু হয় না। মানুষের মতন আচরণ করতে হয়। কোনও ধর্মকে অপমান করা চলতে পারে না। জালিয়াতি করবেন না ধর্মের নামে।”
নাম না করে শুভেন্দুকে তীব্র আক্রমণ করেমন মমতা। নিজে তিন-তিন বার দল বদল করেছেন, ভবিষ্যতে কী করবেন, বিজেপি-র সভাপতি হতে দৌড়াদৌড়ি করছেন বলে কটাক্ষ ছুড়ে দেন। BJP-র কাছ থেকে ধর্ম শিখবেন না, তাদের আমদানি করা ধর্ম শিখতে আগ্রহী নন বলে জানিয়ে দেন। ফিরহাদ হাকিম, হুমায়ুন কবীর, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীদের মন্তব্যের ব্যাখ্যা কী, পাল্টা প্রশ্ন তোলেন BJP বিধায়করা। এর পাল্টা মমতা বলেন, “ফিরহাদকে বলা হয়েছে এমন মন্তব্য না করতে। বাকিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ধর্ম BJP-র কাছে শিখব না।” এতে আরও উত্তাল হয়ে ওঠা বিধানসভা। বিধানসভা থেকে ওয়ার আউট করেন BJP বিধায়করা। রাজ্যের তৃণমূল সরকার ‘হিন্দু বিরোধী’ বলে স্লোগান ওঠে।
অন্য দিকে, বিধানসভার বাইরে শঙ্কর বলেন, “বিরোধী দলনেতাকে সাসপেন্ড করে নিজের ভোটব্যাঙ্ক, অর্থাৎ সংখ্যালঘুদের তুষ্ট করতে এখানে এসেছেন। ওঁর দলের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ধর্মান্তরণের কথা বলেছিলেন, মিনি পাকিস্তানের কথা বলেছিলেন। ওঁর দলের বিধায়ক হামিদুল ৩০ শতাংশ হিন্দুকে কাটিয়ে ভাসিয়ে দেওয়ার কথা। ওঁর দলের মন্ত্রী জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে হিন্দুদের ছাপিয়ে যেতে হবে বলেছিলেন। সেই মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারের মর্যাদার কথা মনে পড়েনি। হঠাৎ করে বিরোধী দলমেতার চেয়ারের মর্যাদার কথা মনে পড়েছে। বিরোধী দলনেতার অপরাধ, তিনি তৃণমূলের দুর্নীতির মুখো খুলে ফেলেছেন, পশ্চিমবঙ্গকে পশ্চিম বাংলাদেশ বানাতে বাধা দিচ্ছেন, হিন্দুদের হয়ে কথা বলছেন, তাই বিরোধী দলনেতাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। উনি (মমতা) তুষ্টিকরণের রাজনীতি করছেন। উত্তর দিতে না পেরে বলছেন দলের মন্ত্রীদের বলেছি।”
আরও দেখুন