কলকাতা: অবশেষে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সূচনা হয়ে গেল। নেতাজি ইন্ডোরের পরিবর্তে এবার ধনধান্য স্টেডিয়ামে চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। জায়গাবদল নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, এবছর জেনেশুনেই ছোট জায়গায় চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। মাঝে মধ্যে জায়গা বদল করা প্রয়োজন। এতে মানুষও অন্যত্র যাওয়ার সুযোগ পান। (Kolkata International Film Festival 2024)
যদিও অন্যান্য বছরের মতো, এবছর কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে জৌলুস কম বলে মনে করছেন অনেকেই। আরজিকর কাণ্ড এবং সম্প্রতি টলিউড শিল্পী বনাম ফেডারেশন সংঘাতের প্রভাবও এর নেপথ্যে কাজ করছে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও মমতা এদিন বাংলার সিনেমা বাংলার শিল্পীদেরকেই এগিয়ে রাখেন। সিনেমায় বিশ্বায়নের ডাক দেন তিনি। (Mamata Banerjee)
বুধবার সন্ধেয় ধনধান্য স্টেডিয়ামে ৩০তম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন করেন মমতা। এবছর কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের থিম ফ্রান্স। সেই সূত্র ধরে সিনেমার মাধ্যমে বিশ্বায়নের বার্তাও দেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, সিনেমার দেশ-কাল, সীমানা বলে কিছু হয় না।
আগামী ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব চলবে, বুধবার যার শুভ উদ্বোধন করলেন মমতা। এবছর ২১টি দেশের ১৭৫টি ছবি দেখানো হবে। এবছর বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক সিনেমাকে। এদিনের অনুষ্ঠানে তাই বিদেশি চিত্রশিল্পী এবং নির্মাতাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বাংলা যেমন আন্তর্জাতিক সিনেমাকে গুরুত্ব দিচ্ছে, তেমনই বাংলার শিল্প, বাংলার শিল্পীদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির সপক্ষে এদিন সওয়াল করেন মমতা।
এদিন মমতা বলেন, “সিনেমার কোনও সীমানা (বাউন্ডারি)। পৃথিবী একটাই দেশ, আমরা সবাই এক। ইতিহাস, ভুগোল, গায়ের রং, পোশাক, ভাষা হয়ত আলাদা, কিন্তু সিনেমার প্রতি অগাধ ভালবাসা আমাদের একসুতোয় বেঁধে দিয়েছে। অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরাও এখন সিনেমাকে জীবন ও জীবিকা করে নিয়েছেন। তাঁদের প্রতিভা বলিউড, হলিউডকেও হার মানায়। কিন্তু অনেক উঁচুতে পৌঁছতে যে লবির প্রয়োজন হয়, সেটা হয়ত তাঁরা পাচ্ছেন না। কিন্তু আমার বিশ্বাস, আজ যেমন বিশ্বের সিনেমা বাংলায় এসেছে, একদিন বাংলার সিনেমাও বিশ্বের দরবারে জায়গা করে নেবে।” বিদেশের দৃশ্যপট যেমন সিনেমার পর্দায় আমরা দেখি, বাংলার জল-জঙ্গল, পাহাড়ও যাতে বিদেশি সিনেমায় জায়গা করে নেয়, বাংলার শিল্পীরা যাতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিভার পরিচয় দিতে পারেন, সিনেমা শিল্পে যাতে কর্মসংস্থান বাড়ে, তা নিয়েও এদিন কথা বলেন মমতা। বিদেশি চিত্রশিল্পীদের বাংলায় আসতে, বাংলার শিল্পীদের সঙ্গে কাজ রতে আহ্বান জানান।
ফ্রান্স যেহেতু এবারের থিম, তাই ফ্রান্সের ২১টি ছবি এবার দেখানো হবে। অন্য বিদেশি ছবিও দেখানো হবে। তার ফাঁকে বাংলা ছবিও দেখাতে বলেছেন মমতা। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রঞ্জিত মল্লিক, শত্রুঘ্ন সিনহা, দেব, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, সব্যসাচী চক্রবর্তী, জিশু সেনগুপ্ত, জুন মালিয়ারা। বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে মঞ্চে ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। মমতা জানান, অমিতাভ বচ্চনের বাড়িতে গতবছর গিয়েছিলেন তিনি। অমিতাভের শরীর ভাল নেই। তিনি তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি না আসতে পারলেও, শত্রুঘ্ন যে রয়েছেন, তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানান মমতা।
এদিন চলচ্চিত্র উৎসবের সূচনায়, উত্তমকুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, তপন সিনহা, ঋতুপর্ণ ঘোষ, মনোজ মিত্র, উৎপলেন্দু চক্রবর্তীদেরও শ্রদ্ধা জানান মমতা। ঋত্বিক ঘটকের স্ত্রীর সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। আবার তিনি যখন অনশন আন্দোলনে নেমেছিলেন, সেই সময় তপন তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে যে চিঠি লিখেছিলেন, সেকথাও তুলে ধরেন মমতা। জানান, আজও সেই চিঠি যত্ন করে রেখে দিয়েছেন তিনি।
আরও দেখুন