দিঘা: রাজ্যের নিজস্ব জগন্নাথধাম গড়ে উঠেছে। দিঘায় দর্শনে যাবেন বলে জানিয়েছিলেন আগেই। কিন্তু উদ্বোধনের দিনই, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত থাকাকালীনই যে দিলীপ ঘোষ দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে হাজির হবেন, তা কল্পনা করেননি কেউ। কিন্তু শুধু একই সময়ে একজায়গায় উপস্থিত হলেন না, হাসিমুখে কুশল বিনিময়ও হল দু’জনের মধ্যে। চলল খোশগল্পও। (Dilip-Mamata Meet)
বুধবার অক্ষয় তৃতীয়ায় দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন হয়েছে। পুজোপাঠ, আচারানুষ্ঠান যখন মিটে গিয়েছে, সেই সময় হঠাৎই স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদারকে নিয়ে হাজির হন দিলীপ। তার কয়েক মিনিট আগেই মন্দিরের ভিতরে ঢোকেন মমতা। তাই দিলীপের সঙ্গে দেখা হবে কি না, কথা হবে কি না, সেই নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে যায় গুঞ্জন। শেষ পর্যন্ত জল্পনাই সত্য হয়। শুধু দেখা, কথা নয়, পাশাপাশি বসে কথা বললেন তাঁরা। (Digha Jagannath Temple)
দিলীপের সঙ্গে সাক্ষাতের যে ভিডিও সামনে এসেছে, তাতে দিলীপ এবং রিঙ্কুকে একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে বসানো হয়। তাঁদের অনুসরণ করে ঘরে ঢোকেন মমতাও। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের উদ্দেশে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “অরূপ জল খা।” এর পর দিলীপ, রিঙ্কু এবং তাঁদের সঙ্গে থাকা একজনকে বসতে বলেন তিনি।
সেই সময় দিলীপই বার্তালাপ শুরু করেন। মমতাকে শুধোন, “আপনি কখন এসেছেন?”
মমতা জবাব দেন, “আরে আমি তো তিন দিন ধরে বসে আছি। ভগবানের কাছে আছি। কার্পেট তুলে পরিষ্কার করা, কত কাজ…।”
মন্দিরের প্রশংসা করে দিলীপ বলেন, “অনেক বড় পরিসর। ১০০, ২০০ বছর, অনেক লোক আসতে পারবে। আমাদের দেশের সব মন্দিরগুলো এত ছোট হয়ে গিয়েছে, ঢোকা যায় না।”
এতে মমতা বলেন, “২৫ একর ছিল…বাড়িয়ে পুলিশ, স্বাস্থ্য, দমকলের জন্য ব্যবস্থা করতে হল।”
মমতার আমন্ত্রণ রক্ষা করতেই দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে যান দিলীপ। টিভির পর্দায় সেই দৃশ্য থেকে যেমন সকলে চমকে যান, মন্দির চত্বরে উপস্থিত সকলেও অবাক হয়ে যান। চারপাশ টের পেয়েই দিলীপ বলেন, “আমাদের মুখ্যসচিবের নাম লেখা থেকে যাবে। এই যে বড় কাজটা করেছেন উনি, আমাদের নিমন্ত্রণ করেছেন।”
এর পর মমতা বাকিদের সঙ্গে দিলীপের পরিচয় করে দেন। জেলাশাসক, এসপি এবং বাকিদের মধ্যে অনেককে যে তিনি চেনেন, তা জানাতে ভোলেননি দিলীপ। মমতাকে তিনি ধরিয়ে দেন, “এই যে…ওর নামটা আপনি বললেন না। এত আলো জ্বালাল। এই যে অরূপ। যে যাই বলুক। আমরা সব পুরনো বন্ধু। বিধানসভায় আড্ডা দিতাম।”
মমতা দিলীপ ও রিঙ্কুকে এর পর বলেন, “এত গরম বাপরে। যজ্ঞ হয়েছে। কাল থেকে শুধু আগুনে পুড়েছি।” এতে দিলীপ যোগ করেন, “ওদিকে তো বৃষ্টি হয়েছে! আপনি বিশ্রাম নিন। দেখলাম রোদে মাথায় কাপড় দিয়ে বসে আছেন।” তাহলে কি লাইভ সম্প্রচার দেখছিলেন দিলীপ? প্রশ্নের জবাবে দিলীপ বলেন, “দেখতে দেখতে আসছিলাম।” দিলীপ যে ধুতি পরেছেন, তার জন্যও তাঁর প্রশংসা করেন মমতা।
দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে মমতা এবং দিলীপের এই সাক্ষাৎ ঘিরে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। রাজনীতিতে এমনিতে সৌজন্যের চল থাকলেও, একদা রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপের সঙ্গে মমতার এমন সমীকরণ আগে চোখে পড়েনি। বরং ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মমতাকে তীব্র আক্রমণ করতে ছাড়েননি দিলীপ। নন্দীগ্রামে পায়ে চোট পেয়ে মমতা যখন হুইলচেয়ারে বসে প্রচার সারছেন, সেই সময় তাঁকে ‘বারমুডা’ পরার পরামর্শ দিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন দিলীপ। তার পরও একাধিক বার মমতাকে আক্রমণ করতে গিয়ে মাত্রা ছাড়িয়েছেন তিনি। কিন্তু রাজ্য বিজেপি-তে দিলীপের গুরুত্ব যত কমে আসতে থাকে, ততই তাঁর প্রতি সুর নরম হতে থাকে তৃণমূলের।
ষাটোর্ধ্ব দিলীপ বিয়ে করছেন জেনে সম্প্রতি বিজেপি-তে যখন নীরবতা, সেই সময় তৃণমূলের তরফে শুভেচ্ছায় ভরিয়ে দেওয়া হয় দিলীপকে। মমতা নিজে ফুলের তোড়া, চিঠি পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানান দিলীপ ও রিঙ্কুকে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেচ্ছা জানিয়ে বেঁধে বেঁধে থাকার পরামর্শ দেন দিলীপ ও রিঙ্কুকে। আর তার পরই মমতার ডাকে সাড়া দিয়ে সোজা দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে হাজির হলেন দিলীপ ও রিঙ্কু, যাকে ঘিরে এই মুহূর্তে সরগরম রাজ্য রাজনীতি।
আরও দেখুন