কলকাতা : হুগলির গুড়াপে শিশুকন্যাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার ৫৫ দিনের মাথায় সাজা ঘোষণা করল আদালত। চুঁচুড়ার পকসো আদালতে দোষী অশোক সিংহকে ফাঁসির সাজা শোনানো হয়েছে। আর দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত-প্রক্রিয়া শেষ করায় হুগলি গ্রামীণ পুলিশকে ধন্যবাদ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘এ ধরনের অপরাধে শাস্তি পেতেই হবে’, বলে সমাজ মাধ্যমে পোস্টও করলেন। অন্যদিকে, দ্রুত বিচার-প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু, অন্য ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে, গুড়াপের ঘটনায় রায়দান হাইকোর্টে কতটা অপরিবর্তিত থাকবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি কামদুনির ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। তাঁর সংশয়, ‘কামদুনি মামলার মতোই না পরিণতি হয় এই মামলার ! কামদুনি মামলার মতোই ছাড়া পেয়ে যেতে পারে অভিযুক্ত।’
‘
একনজরে গুড়াপের ঘটনা-
গত ২৪ নভেম্বর গুড়াপের এই শিশুকে চকোলেটের প্রলোভন দেখিয়ে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ ওঠে প্রতিবেশী ব্যক্তির বিরুদ্ধে। সেই সময় তার বাবা বাজারে গিয়েছিলেন। বাজার থেকে এসে যখন বাড়িতে মেয়েকে পাচ্ছিলেন না, তখন প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে রক্তাক্ত এবং অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে ধনেখালি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। এই ঘটনার পরেই পুলিশ তদন্তে নামে। পকসো ভারতীয় ন্যায় সিংহিতার একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়। অভিযুক্ত প্রতিবেশীকে আটক করা হয়। এরপর অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য হুগলি জেলা গ্রামীণ পুলিশের ডিএসপির নেতৃত্বে বিশেষ টিম গঠন করা হয়। ২৬ নভেম্বর ঘটনাস্থলে আসেন রাজ্য ফরেনসিক ল্যাবরেটরি বিশেষজ্ঞরা এবং সমস্ত তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করেন। এই ঘটনার ১৩ দিনের মাথায় চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। এই মামলায় ২৭ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দান করেন। গত ১৫ জানুয়ারি অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। এরপর আজ তার সাজা ঘোষণা করা হল।
এরপর এদিন ফেসবুক ও এক্স হ্যান্ডেল পোস্টে মুখ্যমন্ত্রী লিখলেন, “আজ, গুড়াপের ছোট্ট মেয়েটিকে ধর্ষণ ও হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে আদালত এবং আমি এর জন্য বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানাই। আমি হুগলি গ্রামীণ জেলা পুলিশকে তাদের দ্রুত পদক্ষেপ এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের জন্য ধন্যবাদ জানাই যা ৫৪ দিনের মধ্যে দ্রুত বিচার এবং দোষী সাব্যস্ত করাকে নিশ্চিত করেছে। আমার হৃদয় পরিবারের জন্য রইল এবং আমি তাদের ব্যথা এবং আকাঙ্ক্ষা ভাগ করে নিতে চাই।” তাঁর সংযোজন, “আমাদের বিশ্বে ধর্ষকের কোনও জায়গা নেই। আমরা সবাই মিলে কঠোর আইন, সামাজিক সংস্কার, কার্যকর ও ক্ষমাহীন প্রশাসনের মাধ্যমে এটিকে আমাদের শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ স্থান করে তুলব। এ ধরনের কোনো অপরাধ শাস্তির বাইরে থাকবে না।”
এনিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে শুভেন্দু লেখেন, “গুড়াপের নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় দ্রুত বিচার এবং মৃত্যুদণ্ডকে স্বাগত জানাই। আশা করি, সময়ের পরীক্ষায় এই রায় উতরে যাবে এবং হাইকোর্টে তা অপরিবর্তিত থাক। কারণ রাজ্যে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য মামলায় দোষীদের ভাগ্য পাবলিক প্রসিকিউটর এবং পুলিশের উদাসীনতার কারণে পরিবর্তিত হয়েছে।” কামদুনির প্রসঙ্গ টেনে তাঁর বক্তব্য, “আমার সন্দেহ, এই মামলাটিও কামদুনির মতো হয়ে যাবে। কামদুনি মামলার মতোই দোষী ছাড়া পেয়ে যাবে। কাজেই, আগেভাবে কাউকে কৃতিত্ব দেওয়ার দৌড়াদৌড়ির আগে আমাদের একটু অপেক্ষা করা যাক।”
আরও দেখুন
+ There are no comments
Add yours