স্বরূপ দত্ত
আজ ২৪ অক্টোবর। জন্মদিন বলিউড অভিনেত্রী মল্লিকা শেরওয়াতের। নামটা বললেই আপনার চোখে ভেসে আসবে মল্লিকার হয়তো কোনও খোলামেলা ছবি। অথচ, এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। সেই আলোচনাতে ঢোকার আগে একটা উদাহরণ দিতে চাই। ইদানিং টেলিভিশন চ্যানেলে খেলা দেখার সময় প্রায়ই দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞাপনটা। মহেন্দ্র সিং ধোনি প্রেস কনফারেন্সে ঢুকছেন। তাঁর পিছনে লেখা তাঁর মায়ের নাম। সাংবাদিকরা সেই নাম ধরে জিজ্ঞেস করছেন, কে তিনি? ক্যাপ্টেন কুল হাসতে হাসতে জানিয়ে দিচ্ছেন, ওটা তাঁর মায়ের নাম। ধোনির উত্তর শোনার পরই ফের প্রশ্ন। কোনও বিশেষ কারণ আছে এর পিছনে? এবার ক্যাপ্টেন কুল আরও বেশি কুল হাসি দিয়ে বলছেন, এতদিন ধরে বাবার নাম বলেছেন তিনি, কেউ তো কখনও তাঁকে জিজ্ঞেস করেননি যে, কোনও বিশেষ কারণ? মাকে, কিংবা মেয়েদের সম্মান দেওয়ার জন্য এই নতুন ভাবনা মনে জায়গা করে নিয়েছে বেশ। এই ভালোটা লাগছে বলেই আরও বেশি করে মনে পড়ছে মল্লিকা শেরওয়াতকে। আজ ছেলেদের দিয়ে মায়ের কথা মনে করাতে হচ্ছে। অথবা সচেতন করতে হচ্ছে সমাজকে। কিন্তু এই কাজটা তো কত কত মেয়েরা নিজেরাই করে থাকেন প্রতিনিয়ত। তাঁদের সচেতনতার কথা অতটা দাম পায় না কেন, কে জানে!
এই যেমন মল্লিকা শেরওয়াত। আমাদের দেশ তাঁকে সেক্স সিম্বল বানিয়ে দিল। কিন্তু মল্লিকা শেরওয়াতকে যে মনে করার আরও অনেক কারণ আছে। জানেন মল্লিকার আসল নাম কি? রীমা লাম্বা। এটাই তাঁর আসল নাম। তিনি হরিয়ানার মেয়ে। হ্যাঁ, হরিয়ানার। দেশের মধ্যে কন্যাভ্রুণ হত্যায় যারা একেবারে প্রথম সারির! সেই হরিয়ানা থেকে উঠে এসে নিজেকে সেক্স সিম্বল হিসেবে তুলে ধরার লড়াইটা একবার চোখ বুজে ভাবার চেষ্টা করুন। জাঠ পরিবারে জন্ম। কিন্তু মল্লিকা বরাবরই অন্যরকম। তিনি বাবার লাম্বা পদবী ব্যবহারই করলেন না, নিজের জীবনে কোনওদিন বড় হওয়ার পর থেকে! শেরওয়াত, তাঁর মায়ের বিয়ের আগের পদবী! ভাবুন তো কাজটা কত বড়! একজন মেয়ে আমাদের সমাজে তাঁর গোটা কেরিয়ারে নিজের মায়ের পদবী ব্যবহার করলেন, তাঁর মাকে সম্মান জানানোর জন্য। এটা আমাদেরও শেখার নয়?
কিন্তু ক’জন শিখলাম আমরা তাঁর থেকে? যিনি নারীদের সম্মান করা শেখালেন, নারীদের অস্তিত্বের অধিকারের জন্য এমন দৃষ্টান্তমূলক কাজ করলেন, সেই মানুষটাকেই আমরা বানিয়ে দিলাম সেক্স সিম্বল! (অবশ্যই তাঁর মতো লাখ লাখ নারীরা এমনটা শিখিয়েছেন) আর কত কত বলিউড নায়িকারা শুধু সৌন্দর্যের ঢ্যাড়া পিটিয়ে, ফিল্মি পরিবার থেকে এসে জাঁকিয়ে বসলেন। কত কত কথা বলে গেলেন। আমরা তাঁদের নিয়েই নাচানাচি করলাম বেশি করে। কিন্তু মল্লিকা শেরওয়াতকে দূরেই ঠেলে রাখলাম। নিচে না নামালেও, অতটা উপরেও তুললাম না, যতটা উপরে তাঁকে হয়তো রাখা যেত। তাই তো হরিয়ানার মেয়ে একা লড়াই করে হলিউডে পৌঁছে গেলেন। অথচ, ফিল্মি পরিবারের অভিনেত্রী হয়েও, কত মানুষ ওই পর্যন্ত পৌঁছতে পারলেন না। কে জানে, এটাকেই মায়ের বা মেয়েদের আশীর্বাদ পাওয়া বলে কিনা! যাক, আজ যাঁরা মল্লিকা শেরওয়াতের সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানলেন, তাঁরা এবার থেকে মল্লিকাকে একটু অন্য চোখেই দেখা শুরু করুন। দেখবেন মনটায় ভালো লাগবে। সত্যিই তো। এতবড় তারকা কিনা চিরকাল নিজের মায়ের পদবীটা ব্যবহার করলেন! তারিফ না করে উপায় আছে? ধোনিদের দিয়ে বলানো হচ্ছে বটে নতুন ভাবনা। কিন্তু বাস্তব বলছে, মল্লিকা শেরওয়াতদের মতো অনেকেই এগুলো অনেক আগে থেকে করে এসেছেন। আমরাই তাঁদের কাজের সম্মান করে উঠতে পারিনি। তাতে কারও কিছু আটকে থাকলো না বোধহয়। মল্লিকা শেরওয়াত অনেক এগিয়ে গেলেন। আমরা অনেকটা পিছিয়ে পড়ে তাঁদের ভাবনাকে নতুন করে জেনে বলছি, নতুন ভাবনা, এই যা!