জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: নারীদের মা হওয়ার ইচ্ছা কমছে এবং অনাগ্রহী নারীদের সমর্থনে ‘নানকা মাদ্রেস’ নামে একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। সন্তানহীন জীবন বেছে নেওয়ার জন্য নারীরা সমালোচনার মুখে পড়ছেন। শুধু কলম্বিয়া নয়, অন্যান্য দেশেও এ নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
ইসাবেল সন্তানহীন জীবন বেছে নিয়েছেন নিজ ইচ্ছায়। অনেকের জন্য এটি শারীরিক কারণে হতে পারে, আবার অনেকের ক্ষেত্রে এটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ফল।
সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষরা সন্তান নিতে চাইলেও তাদের কম আয়ের জন্য এই ঘাটতি বেশি। ২০২১ সালে নরওয়েতে একটি সমীক্ষায় দেখা যায় যে সবচেয়ে কম আয়ের পাঁচ শতাংশ পুরুষের ৭২ শতাংশ পুরুষই সন্তানহীন, আর সবচেয়ে বেশি উপার্জনকারীদের মধ্যে এ হার মাত্র ১১ শতাংশ।
আরও পড়ুন- Hero Alom: ‘ফারুকী উপদেষ্টা হলে, আমার কী দোষ?’, প্রশ্ন হিরো আলমের…
রবিন হ্যাডলি ত্রিশের বয়সে বাবা হওয়ার তীব্র ইচ্ছা পোষণ করতেন। তিনি টেকনিক্যাল ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করতেন এবং বিয়ের পর সন্তান নেওয়ার চেষ্টাও করেছিলেন কিন্তু টাকার অভাবের কারণে তিনি সন্তান-বাবার সম্পর্ক গড়ে তোলার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেন।
বন্ধুদের বাবা হতে দেখে তিনি একাকীত্ব অনুভব করেন। এই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি পুরুষদের সন্তানহীন থাকা নিয়ে একটি বই লেখেন। হ্যাডলি বুঝতে পারেন যে, প্রজনন ক্ষমতা আর্থিক, জৈবিক এবং অন্যান্য সামাজিক কারণ দ্বারা প্রভাবিত হয়। তার মতে, সন্তানহীন থাকা নিয়ে আলোচনা এবং সেই নীতিমালায় পুরুষদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
অন্যদিকে, ফিনল্যান্ডের সমাজবিজ্ঞানী আনা রটকির্চ মনে করেন ‘সামাজিক বন্ধ্যাত্ব’ বা নানা সামাজিক কারণে সন্তানহীন থাকা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফিনল্যান্ডে শিশু-বান্ধব নীতি থাকা সত্ত্বেও জন্মহার কমে যাচ্ছে। রটকির্চ জানান, একসময় বিয়ে ও সন্তানধারণকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা হত। কিন্তু বর্তমানে জীবনের বিভিন্ন লক্ষ্য অর্জনের পরেই সন্তানের চিন্তা করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, বড়লোক মেয়েদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সন্তানহীন থাকা তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ। তবে কম আয়ের পুরুষদের অনিচ্ছাসত্ত্বেও সন্তানহীন থাকার প্রবণতা বেশি। আগে, দরিদ্র পরিবারগুলো দ্রুত বড় হয়ে উঠত এবং অল্প বয়সেই পরিবার শুরু করত।
আরও পড়ুন- মন্ত্রীদের মতোই যাবতীয় সুবিধা পাচ্ছেন শেখ হাসিনা, নয়া ঠিকানা …
হ্যাডলি ও অন্যান্য গবেষকরা দেখেছেন, সন্তানহীন থাকা ও প্রজনন সংক্রান্ত আলোচনায় পুরুষদের বিষয়ে তেমন কিছুই বলা হয় না। শিশু জন্মহার বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও এর বেশিরভাগই মহিলাদের কেন্দ্র করে পরিকল্পিত। হ্যাডলির মতে, পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতার বিষয়টি স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে গণ্য করা উচিত এবং বাবা হিসেবে তাদের যত্ন নেওয়ার সুবিধাটাও নিশ্চিত করা দরকার।
ইসাবেল জানান, দক্ষিণ আমেরিকায় অনেক পুরুষ মনে করেন যে সন্তান লালনপালন শুধুমাত্র নারীদের কাজ। মেক্সিকোতে একটি বড় ব্যাংকের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করেন, যারা জানান সদ্য বাবা হয়েছে এমন পুরুষদের ছয় সপ্তাহের পিতৃত্বকালীন ছুটির প্রস্তাব দেওয়া হলেও, কেউই তা গ্রহণ করেনি।
আরও পড়ুন- Child Actor : সেদিনের শিশুশিল্পী আজকের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী অভিনেতা-অভিনেত্রী…
ড. হ্যাডলির মতে, পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা নিয়ে সচেতনতা জরুরি। নারীদের মতও পুরুষদেরও একটি প্রজনন সময়কাল আছে, এবং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রজনন ক্ষমতা কমতে থাকে। রটকির্চ জানান, সমাজে দীর্ঘকাল ধরেই ‘অ্যালোপেরেন্টিং’ প্রথা চলে আসছে। অনেক নিঃসন্তান পুরুষ শিশুদের দেখাশোনা করে থাকেন, তবে এই বিষয়টি সামাজিকভাবে তেমন গুরুত্ব পায় না। নিঃসন্তান পুরুষদের এই লালনপালন ভূমিকার স্বীকৃতি দেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)