NOW READING:
মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু মায়ের, মিলল না ডেথ সার্টিফিকেট, ক্ষতিপূরণ নিয়ে সংশয়ে ছেলে
January 30, 2025

মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু মায়ের, মিলল না ডেথ সার্টিফিকেট, ক্ষতিপূরণ নিয়ে সংশয়ে ছেলে

মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু মায়ের, মিলল না ডেথ সার্টিফিকেট, ক্ষতিপূরণ নিয়ে সংশয়ে ছেলে
Listen to this article


কলকাতা: মহাকুম্ভের মৃত্যুমিছিলে নাম রয়েছে কলকাতার বিজয়গড়ের বৃদ্ধা বাসন্তী পোদ্দারের। ছেলে, মেয়ে এবং বোনের সঙ্গে অমৃত স্নানে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হয়ে গিয়েছে। সেই শোকের মধ্যেই চরম হেনস্থার হতে হচ্ছে ছেলেকে। তিনি জানিয়েছেন, মায়ের ডেথ সার্টিফিকেটই দেয়নি উত্তরপ্রদেশের সরকার। দেহ হস্তান্তরের কোনও নথিও পাননি। তাই যোগী আদিত্যনাথ ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করলেও, সেই টাকা আদৌ মিলবে কি না সন্দিহান তিনি। এমতাবস্থায় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকার। (Mahakumbh Stampede)

সোমবার ছেলে-মেয়ে-বোনের সঙ্গে প্রয়াগরাজ গিয়েছিলেন বাসন্তী পোদ্দার। মঙ্গলবার রাতে মৌনী অমাবস্যার অমৃত স্নানের জন্য যাচ্ছিলেন। কিন্তু সেখানে বেঘোরে মৃত্যু হয় বাসন্তীদেবীর। তাঁর ছেলে জানিয়েছেন, সঙ্গন ঘাটের দিকে যাচ্ছিলেন তাঁরা। সেই সময় পুলিশের কেউ ছিল না ধারেকাছে। হঠাৎই হাজার দশেক লোক জমা হয়ে যায়। ধাক্কাধাক্কিতে নীচে পড়ে যান তাঁরা। দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে যায়। ভিড়ের মধ্যে তাঁর মা বেঘোরে প্রাণ হারান। কেউ সাহায্য় করতে এগিয়ে আসেনি বলে জানিয়েছেন তিনি। হাসপাতালেও নিয়ে যেতে পারেননি মাকে। ঘটনাস্থলেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। (Kolkata News)

নিহতের ছেলে জানিয়েছেন, দেহ নিয়ে যেতে গাড়ি দেওয়া হয়েছিল। এখনও ডেথ সার্টিফিকেট দেয়নি। বলা হয়েছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। দেহ হস্তান্তরের সময় যে কাগজ দেওয়া হয়, তাতে সরকারি স্ট্যাম্পও নেই, স্বাক্ষর নেই সরকারি আধিকারিকদের। তাঁকে দিয়ে কাগজে সই করিয়ে নেওয়া হলেও, সরকারি সিলমোহর নেই তাতে। ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়া দেহ পাঠিয়ে দেওয়া হল কী করে, ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়া দেহ সৎকারই বা হবে কী করে, আর্থিক ক্ষতিপূরণই মিলবে কী করে, প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় কাউন্সিলর তপন দাশগুপ্ত। তাঁর দাবি, ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দাদের ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার জন্যই এভাবে দেহ পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গোটা ঘটনায় জটিলতা তৈরি হয়েছে। 

রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানিয়েছেন, গোটা ঘটনা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছেন তিনি। দেহ সৎকারে কোনও সমস্যা না হয়, নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কোটি কোটি মানুষ যে শাহিস্নানে অংশ নেবেন, তা আগে থেকেই জানা ছিল। তাও কেন পুলিশ ছিল না, নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না, উঠছে প্রশ্ন। নিহতদের পরিবারের থাকা-খাওয়া থেকে কী ভাবে রাজ্যে ফিরবেন, তার দায়িত্বও উত্তরপ্রদেশ সরকার নেয়নি বলে অভিযোগ। অরূপ বলেন, “একটি কাগজ দেওয়া হয়েছে, যাতে কারও সই নেই। এটা সরকারি প্রক্রিয়া নয়। যেখানে মৃত্যু হয়, সেখান থেকে কাগজ দিতে হয়। ময়নাতদন্ত করতে হয় দেহ। ডেথ সার্টিফিকেট লাগে। কিছুই করেনি। যত তাড়াতাড়ি বিষয়টি লুকনো যায়, সেই ব্যবস্থাই করছেন। তবে যার কেউ নেই, তার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন। যা যা করণীয় আমরাই করব। কিন্তু ওখানকার পুলিশ-প্রশাসনের পুণ্যার্থীদের প্রতি দেখভালের দায়িত্বই ছিল না। এখানে গঙ্গাসাগরে সাড়ে তিন কিলোমিটার নদী পেরোতে হয়। ওখানে সড়ক পথ রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা দেয়। তাহলে কেমন হল? ওরা পুরোপুরি ব্যর্থ।”

এই ঘটনায় উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কাউন্সিলর তপন। তিনি বলেন, “যথাস্থানে সবকিছু জানিয়েছেন। দেহ ফেরত পাঠানোর কথা বললাম। কিন্তু ওখানকার পুলিশ চাইছেন না। কিন্তু কাগজে কারও সই নেই। ডাবল ইঞ্জিন সরকার নিয়ে বড় বড় কথা বলে। কী অবস্থা দেখা যাচ্ছে। মানুষের প্রাণের কোনও দাম নেই। এই ভদ্রমহিলা ক্ষতিপূরণ পাবেন কি না, সন্দেহ আছে। কোনও নথি নেই।” পরিবারের দাবি, নিরাপত্তা বলে কিছুই ছিল না মহাকুম্ভে। উত্তরপ্রদেশ সরকার ভিআইপি-দের নিয়ে ব্যস্ত ছিল বলে অভিযোগ তাঁদের। 

যদিও বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “উত্তরপ্রদেশ সরকার যখন কথা দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী যখন বলেছেন, ক্ষতিপূরণ পাবেন। পোস্তার ব্রিজ যখন ভেঙে পড়ে, কার ব্যর্থতায় জানা নেই। পরিবারগুলি এখন কী অবস্থায় রয়েছে, কারও জানা আছে? খোঁজ নিয়েছেন অরূপ বিশ্বাস। ওঁর যে উত্তেজনা দেখলাম, তাতে ওঁর কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে। এখানে তো ওঁদের নিজেদের দলের লোকেদেরই গুলি করে মারা হচ্ছে। কাউন্সিলররা ভয়ে বেরোচ্ছেন না। এরা দুর্ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করে। মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি করা ওদের কাজ। ভারতের সর্বকালীন জনপ্লাবন যে মেলায় ঘটেছে, কোনও জায়গায় সামান্য বিচ্যুতি হয়ে থাকলে জানা নেই আমাদের। সরকার যখন বলেছে, আমাদের দল ক্ষতিপূরণ দেবে। অরূপ বিশ্বাস নিজের দলের লোকেদের বাঁচান।” কিন্তু এই জটিলতা কাটবে কী করে, সংশয়ে পরিবার।

আরও দেখুন



Source link