আগুনে কেড়েছে বাড়ি, ছাড়েনি বাবাকেও ! এক বুক যন্ত্রণা নিয়েও মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থী..

সুনীত হালদার, হাওড়া: মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর ৫ দিন আগে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পরীক্ষার্থীর ঘরবাড়ি ভষ্মীভূত হয়ে যায়। বাবা-সহ তিনজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন বাড়িতে আসে, ওই পরীক্ষার্থীর বাবার মৃত্যু সংবাদ। সন্ধ্যায় বাবার মৃত্যুর কথা জানতে পেরে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। এদিকে রাত পেরোলেই তো আবার পরীক্ষা। তবুও হার মানেনি ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। এক বুক যন্ত্রণা নিয়েও, আজও মাধ্যমিকে বসল পরীক্ষার্থী।
গত মঙ্গলবার রাত আড়াইটে নাগাদ বাগনানের হল্যান গ্রামের একটি বাড়িতে ভয়াবহ আগুন লাগে। বাড়ির মধ্যে থাকা একটি গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে যাওয়ায় গোটা বাড়ি দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে। বাড়ির সমস্ত আসবাবপত্র এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বাদ যায়নি ওই পরিবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর বই পত্র, নোটস, খাতা এবং অ্যাডমিট কার্ড। গুরুতর জখম হয় পরীক্ষার্থীর বাবা-সহ চার জন। এরমধ্যে ওই পরীক্ষার্থী নিজেও আহত হয়। পরে বাগনান গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসার পর দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে সবরকম সহযোগিতা করা হয়।
গত শুক্রবার তাঁর নতুন অ্যাডমিট কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়। হল্যান গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তাঁকে মেয়ের মত নিজের বাড়িতে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। সেখান থেকেই ওই ছাত্রী সোমবার রুপসাগোড়ি হাইস্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যায়। পরীক্ষা শুরুর আগে সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ কলকাতার হাসপাতাল থেকে ওই ছাত্রীর বাবার মৃত্যু সংবাদ বাড়িতে আসে। যেহেতু ছাত্রীটি জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিচ্ছিল সেই কারণে তার পরিবারের লোকজন তাকে এই মৃত্যু সংবাদ দেয়নি।
আরও পড়ুন, পরীক্ষা নিয়ে চাপ বাড়ছে ? বাস্তুর কোন বিষয়গুলি মেনে চললে সাফল্য আসবেই
পরে বাড়িতে আসার পর সন্ধ্যায় বাড়ির পরিস্থিতি অনুমান করে সে কান্নায় ভেঙে পড়ে। আজকেও সে মনের জোরকে সম্বল করে ইংরেজি পরীক্ষা দিতে যায়। পরীক্ষার্থী জানিয়েছে, দুটো পরীক্ষা মোটের ওপর ভালো হয়েছে। বাকি পরীক্ষাগুলো সে একইভাবে দিতে চায়। হল্যান গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান জানিয়েছেন, ‘ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ওই পরিবারের সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। মেয়েটি যাতে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পারে তার জন্য প্রশাসনের তরফ থেকে সব রকম ব্যবস্থা করা হয়। ওই ছাত্রীকে নিজের বাড়িতেও রাখার ব্যবস্থা করা হয়। বাবার মৃত্যু সংবাদে সে প্রচণ্ড ভেঙে পড়ে। তবে আমরা সকলেই তাঁকে মানসিকভাবে সহায়তা করার চেষ্টা করছি।’
আরও দেখুন