অয়ন ঘোষাল: মধ্যমগ্রামের বৃদ্ধা খুনকাণ্ডে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট হাতে এল পুলিসের। মধ্যমগ্রামের বীরেশ পল্লীর বাড়িতে কাল সন্ধ্যেবেলা অভিযুক্ত ফাল্গুনী ঘোষকে নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করেছে পুলিস। অকুস্থলের ফরেনসিক পরীক্ষা হয়ে গেছে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পুলিশের হাতে এসেছে। মাথার পিছনে ভারী ভোঁতা কিছু দিয়ে তীব্র আঘাত (এক্ষেত্রে ইট) করার ফলে মৃত্যু। খুনের পর কোনোভাবেই ট্রলি ব্যাগে গোটা দেহ ঢোকানো যাচ্ছিল না বলে গোড়ালির নিচে পা কাটা হয়। মৃত সুমিতার কাঁধ এবং দুই হাতে কালসিটে দাগ আছে। পরশু ভোরের দিকে খুন করা হয় বলে প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন-কেন মধ্যমগ্রামে বাড়ি ভাড়া মা-মেয়ের? ছিল রহস্যময় লোকজনের আনাগোনা! ফুঁসছে পাড়া…
দেহের কেমিক্যাল অ্যানালিসিস রিপোর্ট এখনও পুলিসের হাতে আসেনি। ট্যাক্সি চালকের দাবি, তিনি বিমানবন্দর এলাকাতে নিয়মিত গাড়ি চালান। দুই মহিলার সঙ্গে থাকা ট্রলি ব্যাগে কী ছিল তা তিনি ঘুণাক্ষরেও টের পাননি।
রাগের মাথায় খুন হলেও বাড়িতেই প্রায় ২৪ ঘণ্টা দেহ রেখে দিয়ে পরিকল্পনা মাফিক সেটি সরিয়ে দেওয়ার মতলব ছিল আরতি ঘোষ ও ফাল্গুনি ঘোষের। পরশু ভোরে খুন হলেও গতকাল ভোরে দেহ নিয়ে বেরোয় মা মেয়ে। গতকাল সকাল ৬ টা ৬ মিনিটে বাড়ি থেকে একটি সাইকেল ভ্যান ভাড়া করে ট্রলি ব্যাগ নিয়ে তাদের মধ্যমগ্রামের দোলতলা মোড়ে পৌঁছাতে দেখা যায় সিসিটিভিতে।
সম্পত্তিগত বিবাদ নাকি ব্যক্তিগত কোনো আক্রোশ তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুই ধৃতকে আজ আদালতে পেশ করবে পুলিস। কুমোরটুলি এলাকার এক নাপিত, যিনি প্রথম মা মেয়েকে ট্রলি জলে ফেলার আগে আটকান, তার নাম গৌতম ঠাকুর। তার বয়ান এবং সই করা স্টেটমেন্ট এর ভিত্তিতে নর্থ পোর্ট থানার পুলিশ ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৩(১) এবং ২৩৮/৩(৫) ধারায় মামলা রুজু করেছে।
ফাল্গুনী ঘোষকে নিয়ে গতকাল তাদের মধ্যমগ্রামের বাড়িতে পুনর্নির্মাণের সময় মাথায় আঘাত করা ইট খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। পা খুব সম্ভবত বঁটি দিয়ে কাটা হয়েছে। সেটি এখনও পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। রাত পর্যন্ত সেখানেই ছিল পুলিস। রাত হওয়ায় বাড়ির আশেপাশে খুব বেশি খোঁজাখুঁজি করা যায়নি।
উল্লেখ্য, গতকাল আহিরীটোলায় উদ্ধার হয় ট্রলি ব্যাগবন্দি মহিলার দেহ। ঘটনার তদন্তে পরতে পরতে উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গিয়েছে, মাথায় ভারী ভোঁতা অস্ত্রের আঘাতে মৃত্যু। তারপর দেহ গায়েব করার চেষ্টা। গতকাল রাতেই খুন করা হয় বলে জানা যাচ্ছে। আরও জানা গিয়েছে, খুনের পর দেহ নিয়ে বেরিয়ে শহরের দিকে আসে দুই মহিলা। পারিবারিক কোনও অশান্তির জেরে খুন বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান। দুই মহিলাই সবটা করেছে নাকি আরও কেউ জড়িত? ধৃত দুই জনকে টানা জেরা করে জানার চেষ্টায় পুলিস। কলকাতা পুলিস ইতোমধ্য়েই মধ্যমগ্রাম থানার সঙ্গে যোগযোগ করছে। পিসি শাশুড়ির সঙ্গে বেশ কিছু দিন ধরে কোনও একটা বিষয়ে বিবাদ চলছিল। বিবাদ চরমে ওঠায় রাগের মাথায় খুন বলেই অনুমান করা হচ্ছে। খুনের পর ঠান্ডা মাথায় দেহ লোপাটের পরিকল্পনা।
প্রতিবেশীরা বলছেন ওই দুই মহিলা সবাইকে একটু এড়িয়েই চলতেন। একাএকা থাকতেন। রাতে ওদের বাড়িতে বাইরের লোক আসত। ওদের জিজ্ঞাসা করলে বলত, আত্মীয়। এনিয়ে থানা, কাউন্সিলরকে জানানো হয়েছিল। এক মহিলা পাড়ার বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করত।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)