‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পে টাকা বাড়ল না, বাজেটে সংস্কারে জোর মমতার, সব জল্পনা নস্যাৎ

কলকাতা: ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের শেষ বাজেট। তাই জনমোহিনী প্রকল্প ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর আওতায় টাকা বাড়ানো হবে বলে জল্পনা ছিল। কিন্তু বুধবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় যে বাজেট পেশ হল, তাতে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পে টাকা বাড়ানো হল না। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ সকলে যখন টাকা বাড়ানো হতে পারে বলে সরব হচ্ছিলেন, সেই সময়ই একেবারে উল্টো পথে হাঁটলেন মমতা। জনমোহিনী প্রকল্পের পরিবর্তে এবারে সংস্কার এবং সামাজিক প্রকল্পে বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছেন তিনি। (Lakshmir Bhandar)
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের মহিলাদের জন্য ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প এনেছিলেন মমতা। প্রথমে বাড়ির মহিলাদের হাতে মাসোহারা ৫০০ টাকা এবং তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অনগ্রসরদের জন্য আর একটু বেশি টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা হয়। পরবর্তীতে তা আরও বাড়িয়ে সাধারণ মহিলাদের হাতে মাসে মাসে ১০০০ টাকা এবং তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অনগ্রসরদের জন্য ১২০০ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা করে রাজ্য। (West Bengal Budget 2025)
তাই ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে জনমোহিনী প্রকল্প ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর বরাদ্দ বাড়ানো হতে পারে বলে জল্পনা ছিল। এমনকি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী একদিন আগেই দাবি করেন যে, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর টাকা আরও বাড়িয়ে ১৫০০ করে দেওয়া হবে। রাজ্য যদি ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর টাকা ১৫০০ করে দেয়, তাহলে বিজেপি ক্ষমতায় এলে ৩০০০ করে দেবে বলেও ঘোষণা করে দেন শুভেন্দু। কিন্তু মমতা ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর টাকা বাড়ালেন না। অর্থাৎ আগের হারেই টাকা পাবেন রাজ্যের মহিলারা।
মমতার ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের অনুকরণে দেশের অন্য রাজ্যগুলিতেও এমন জনমোহিনী প্রকল্প চালু হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনেও মহিলাদের হাতে নগদ তুলে দেওয়ার এই প্রকল্প খবরের শিরোনামে উঠে আসে। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি ২১০০ টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে, বিজেপি মহিলাদের ২৫০০ করে দেওয়ার ঘোষণা করে। খয়রাতির রাজনীতির এই বাড়াবাড়িতে নজর পড়ে আদালতেরও। নির্বাচনের আগে বিনামূল্যে রেশন, বিদ্যুৎ, নগদ খয়রাতির পরিবর্তে সাধারণ মানুষকে উন্নয়নের মূলস্রোতে তুলে আনার ভাবনা কেন কেউ ভাবছে না প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট। পরজীবী শ্রেণি তৈরি না করে, মানুষকে স্বাবলম্বী করে তোলার কথা বলে শীর্ষ আদালত। আর সেই আবহেই ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর টাকা না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন মমতা।
কিন্তু ২০২১ সালে মমতার যে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প গোটা দেশের রাজনৈতিক কৌশল পাল্টে দেয়, সেই প্রকল্পের টাকা না বাড়ানো কি ভোটবাক্সেও প্রভাব ফেলবে? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। কারণ মূল্যবৃদ্ধি যে জায়গায় পৌঁছেছে, তাতে খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বাজেটের আগেও তাই ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর টাকা বাড়বে বলে আশা ছিল অনেকের। তাই মমতার সিদ্ধান্তে তাঁদের আশাভঙ্গ হতে পারে বলে আশঙ্কা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের। কারণ বিজেপি ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, ক্ষমতায় এলে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর টাকা বাড়িয়ে প্রায় তিন গুণ করে দেবে তারা। তাই মানুষ এবার কোন দিকে ঝুঁকবেন, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
আরও দেখুন