কলকাতা: মুর্শিদাবাদে অশান্তির জন্য এবার সীমান্তরক্ষী বাহিনী BSF-কে কাঠগড়ায় তুললেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর দাবি, BSF-এর একাংশের সহযোগিতায় সীমান্ত থেকে হামলাকারী ঢোকানো হয় মুর্শিদাবাদে। ইচ্ছাকৃত ভাবে, প্ররোচনা জুগিয়ে গন্ডগোল করানো হয়েছে। BSF-এর একাংশকে কাজে গালিয়ে দুষ্কৃতীদের দিয়ে হামলার পর সরানো হয়েছে বলে বিস্ফোরক দাবি করেছেন কুণাল। (Kunal Ghosh on Murshidabad Unrest)
আদালতের নির্দেশে মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় বাহিনী নেমেছে। তবে ইতিমধ্যেই তিন জনের প্রাণ চলে গিয়েছে। আজও একজনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর মিলেছে। সেই আবহেই সাংবাদিক বৈঠক করে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তোলেন কুণাল। তিনি বলেন, “বিজেপি-র পাতা ফাঁদে পা দেওয়া হচ্ছে। এটা করবেন না। আমাদের কাছা মারাত্মক সব অভিযোগ আসছে। এই সব অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখতে, যথাযথ তদন্তের অনুরোধ করছি আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।” (Anti Waqf Protests in Murshidabad)
বাংলাকে বদনাম করতেই মুর্শিদাবাদে গন্ডগোল করানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন কুণাল। তিনি বলেন, “যে জায়গাগুলিতে হিংসাত্মক ঘটনা কিছু ঘটেছে, সেখান থেকে অভিযোগ আসছে যে, BSF-এর একাংশের সহযোগিতায় সীমান্ত থেকে কিছু আপত্তিকর হামলাকারীকে ঢুকিয়ে বাংলাকে বদনাম করার জন্য, ইস্যু করার জন্য, প্ররোচনা দেওয়ার জন্য এই গন্ডগোল করানো হয়েছে। যে মুখগুলো গন্ডগোল করেছে, তাদের মূল পান্ডাদের এলাকার মানুষ চিনতে পারছেন না। যারা অশান্তি করেছে নিশ্চয়ই পুলিশ তাদের মতো করে ধরছে, ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু মাস্টারমাইন্ড যারা, অভিযোগ আসছে যে, কোনও কোনও রাজনৈতিক দলের অংশ, কেন্দ্রের কোনও কোনও এজেন্সির সঙ্গে হাত মিলিয়ে বা কেন্দ্রের কোনও কোনও এজেন্সির পরিচালনায়, একটা গোপন ব্লুপ্রিন্টের মাধ্যমে, BSF-এর একাংশকে কাজে লাগিয়ে…দুষ্কৃতী, হামলাবাজ, যারা এই ধরনের কাজ করে, তাদেরকে BSF-এর একাংশের সহযোগিতায় ঢুকিয়ে, গন্ডগোল করিয়ে আবারও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
যারা মারাত্মক ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না, এলাকার মানুষও কেউ তাদের চিনতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন কুণাল। তাঁর কথায়, “যারা বেশি উস্কানি দিয়েছে, তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এলাকার মানুষ চিনতেই পারছেন না। অথচ তারাই লোক ক্ষেপিয়েছে, তারাই আগুন জ্বেলেছে, গন্ডগোলটা তৈরি করেছে। আমরা শুধু বলছি, এতে পা দেবেন না। কারণ এতে বিজেপি-র অ্যাজেন্ডা…পশ্চিমবঙ্গে গন্ডগোল হলে, পশ্চিমবঙ্গ আগুন জ্বলার ছবি দেখালে, কাদের লাভ? বিজেপি-র লাভ! আর বিজেপি-র বি টিম কংগ্রেস-সিপিএম, আর দু’একটা দল যারা ওদের সঙ্গে আছে, তাদের লাভ।”
মুর্শিদাবাদ নিয়ে এই মুহূর্তে রাজ্য রাজনীতির পারদ তুঙ্গে। শাসকদল তৃণমূলকে বিঁধছেন বিরোধীরা। রাজ্যে AFSPA চালুর দাবি নিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছেন বিজেপি-র সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতোও। সেই আবহে রাজ্যের ডিজি রাজীব কুমার এদিন মুর্শিদাবাদ থেকে বার্তা দেন। জানান, পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রমে রয়েছে। মুর্শিদাবাদের এসপি জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই ভাল। কেউ যাতে গুজবে পা না দেন, অনুরোধ করেছেন তিনি। প্রয়োজনে কন্ট্রোল রুমে ফোন করে তথ্য জানা যাবে বলে জানিয়েছেন। দফায় দফায় প্রায় শতাধিক মানুষ গ্রেফতার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
যদিও পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় AFSPA জারির দাবিতে অনড়। তাঁর কথায়, “পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতি একদম ভয়ঙ্কর। ১৯৯০ সালে কাশ্মীরের পরিস্থিতি ঠিক যেমন ছিল। হিন্দু পণ্ডিতদের বাড়িতে হঠাৎ সন্ত্রাসবাদীরা পৌঁছে যেত, হুমকি দিত, না শুনলে হামলা করত, মহিলাদের নির্যাতন করত, ধর্ষণ করতস পুরুষদের উপর প্রাণঘাতী হামলা হতো। বাধ্য করা হতো পালাতে। ওয়াকফকে সামনে রেখে একই জিনিস হচ্ছে। এটা নিছকই অজুহাত। দিদিমণির ভোটব্যাঙ্ক মজবুত করতে পুলিশকে নিষ্ক্রিয় রাখা হয়েছে। আমি চিঠি দিয়ে উপদ্রুত এলাকা ঘোষণা করে, AFSPA জারির অনুরোধ জানিয়েছি।”
অন্য দিকে, দক্ষিণবঙ্গে বিএসএফ-এর ডিআইজি নীলোৎপলকুমার পাণ্ডে বলেন, “আমরা ৯ কোম্পানি সেনা বাড়িয়েছি। সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আমরা চাই শীঘ্রই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক রেখে কাজ করছি। ঘোষপাড়ায় আমাদের বাহিনীর উপর চারদিক থেকে হামলা হয়। পেট্রোল বোমা, পাথর, লাঠি…পরিস্থিতি এত খারাপ ছিল যে বলপ্রয়োগ করতে হয়। ভয় দেখাতে শূন্যে গুলি ছুড়তে হয় আমাদের।”
আরও দেখুন