কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, অতসী মুখোপাধ্য়ায় ও পুরুষোত্তম নারায়ণ পণ্ডিত: তৃণমূলের ছত্রছায়ায় রয়েছেন, মমতা-অভিষেকের সঙ্গে এক মঞ্চে দেখা যায়। কিন্তু, দল বিতর্কিত ইস্যুতে পড়লেই কেন বন্ধ মুখ? টলিউডের তৃণমূলপন্থী তারকাদের এভাবেই নিশানা করলেন কুণাল ঘোষ। কুণাল নিজের ব্যক্তিগত মতামত জানিয়েছেন বলে মত দলের তারকা বিধায়ক লাভলি মৈত্রের। এইভাবে বলাটা ঠিক নয় বলে মত সুদেষ্ণা রায়ের। এরই মধ্য়ে আবার কুণালকে কার্যত সমর্থন করেছেন দলের সাংসদ শতাব্দী রায় এবং বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী। (Kunal Ghosh)
আর জি কর কাণ্ডে যখন উত্তাল গোটা দেশ, রাজ্যের অন্দরেও লাগাতার প্রশ্নে বিদ্ধ হচ্ছে ক্ষমতাসীন তৃণমূল সরকার। আর সেই আবহেই শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে ‘দ্য ডায়েরি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’ নামে একটি ছবি। যেখানে বাংলার ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ কুণাল। আর সেই নিয়েই দলের তারকা সাংসদ-বিধায়ক থেকে টলিউডের তৃণমূল ঘনিষ্ঠ তারকাদের নিশানা করেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “টলিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির উচিত, বিশেষ করে যাঁরা প্রযোজক, পরিচালক, বড় অভিনেতা-অভিনেত্রী, যাঁদের প্রভাব রয়েছে। তাঁদের মধ্যে যাঁরা সরাসরি আমাদের দলের সঙ্গে যুক্ত আছেন, যাঁদের কাছ থেকে দলের সৈনিক হিসেবে তৎপরতা আশা করি আমরা।” (Tollywood on RG Kar)
দেব হোন বা রচনা বন্দ্যাপাধ্য়ায়, সোহম হোন বা সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, লোকসভা এবং বিধানসভায় তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের মধ্য়ে এখন টলিউড তারকাদের ছড়াছড়ি। আর জি কর কাণ্ডের প্রেক্ষাপটে এবার সেই তারকাদের নিশানা করলেন কুণাল। তৃণমূলে যাঁরা সক্রিয়, দলের পদে রয়েছেন, তৃণমূলের ছত্রছায়ায় রয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একমঞ্চে যাঁদের দেখা যায়, তাঁরা এখন কী করছেন প্রশ্ন তোলেন।
এ নিয়ে কুণালকে জবাব দিয়েছেন লাভলি। তাঁর কথায়, “এটা কুণালদার ব্যক্তিগত বিষয়। উনি কী বলছেন, তা নিয়ে আমি কিছু বলব না। যা ভাল মনে করেছেন বলেছেন। আমি টেলিভিশন থেকে এসেছি। দিদি আমাদে বিধায়ক হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। আমি কী কাজ করি, সেটা দল জানে।” রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণার কথায়, “এভাবে বলাটা ঠিক নয়। এর থেকে বেশি কিছু বলব না কুণালকে নিয়ে। এই ধরনের কথা বলাকে সমর্থন করি না আমি।”
আর জি করের ঘটনায় তৃণমূলের তারকা সাংসদ-বিধায়করাও নিন্দায় সরব হয়েছেন। ভিডিও বার্তায় চোখের জল ফেলেছেন রচনা। প্রতিবাদ করতে দেখা গিয়েছে সায়ন্তিকাকেও। আর্টিস্ট ফোরামের প্রতিবাদে শামিল হন দেবও। ‘দ্য ডায়েরি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’ নামের ‘প্রোপাগান্ডা’ ছবি যেখানে পশ্চিমবঙ্গকে বদনাম করছে, তাঁরা কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বায়োপিক, আন্দোলন বা পশ্চিমবঙ্গের প্রতি শুভ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ছবি করছেন না, প্রশ্ন তোলেন কুণাল।
এ নিয়ে সায়ন্তিকা বলেন, “ছবি তৈরি হয় বিনোদনের জন্য। ছবি তৈরির উদ্দেশ্য যদি বিনোদন না গয়, সামাজিক বার্তা বা রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত করার জন্য, প্ররোচিত করার জন্য যদি ছবি তৈরি হয়, তাহলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে দেখে শেখা উচিত। সময় দেখে ছবি রিলিজ করানো উচিত ছিল। এই সময় বাংলাকে অশান্ত করে, প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে। কুমালদার যেটা মনে হয়েছে, সেটা তিনি বলেছেন।”
কুণালের প্রতি তাঁর সমর্থন ব্যক্ত করেছেন শতাব্দী। তিনি বলেন, “আমি দেখেছি। কুণালের ট্যুইট সমর্থন করি। কুণাল ঠিক বলেছে। যাারা তৃণমূলে পদে রয়েছে, তাদের এই পদক্ষেপ করার কথা। পদক্ষেপ করতেই বলেছে কুণাল। যারা তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত, তাদের রাজ্যের সম্মান বজায় রাখার জন্য সচেষ্ট হওয়া উচিত।” এ প্রসঙ্গে সোহমের বক্তব্য, “উনি (মমতা) বাংলার অভিভাবিকা। ওঁর পাশে থাকা সুযোগ যতটা হয়েছে, তাতে বুঝেছি, উনি সর্ব ক্ষণ বাংলার মানুষের ভাল চান। বাংলাকে কালিমালিপ্ত করা হচ্ছে। এর আগে যাঁরা এসব করেছেন, বাংলার মানুষ তাঁদের জবাব দিয়েছেন। এবার সিনেমাটি যেভাবে মুক্তি পেয়েছে, তাতে কুণালদার বক্তব্যকে সমর্থন করছি আমি।”
কুণালের মন্তব্য়কে কার্যত লুফে নিয়েছে বিজেপি। দলের নেতা রুদ্রনীল ঘোষ বলেন, “আমাদের বন্ধু, সহকর্মী রাজ চক্রবর্তী, পরমব্রত বলুন, এমনকি শতাব্দী রায়, জুন মালিয়া, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরিন্দম শীল, কেউই তো বাদ গেলেন না! শাসক দলের যে পরিকল্পিত, সংঘটিত অন্যায় হয়েছে, তাকে সাপোর্ট করছেন না এঁরা। দুর্নীতিতে রাজ্য সরকারের পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগ, পূর্ত দফতর জড়িয়ে, প্রমাণ লোপাট হয়েছে বলে দেখতে পাচ্ছে সকলে। এই সময়ে দলের পাশে ক্রিমিনালদের হয়ে আমার এই বন্ধুদের কুণাল ঘোষ পাশে চাইছেন।” আর জি করের প্রেক্ষাপটে যেভাবে দলের তারকা নেতাদের নিশানা করেছেন কুণাল, তা নিয়ে এই মুহূর্তে তোলপাড় বঙ্গ রাজনীতি।
আরও দেখুন