কলকাতা: আর জি কর কাণ্ডে এখনও রাস্তায় নামছেন মানুষজন। সেই আবহে এবার কলকাতা শহরের প্রাণকেন্দ্র, ধর্মতলায় বেআইনি জমায়েত নিষিদ্ধ করল কলকাতা পুলিশ। আগামী দু’মাসের জন্য ধর্মতলা চত্বরে পাঁচ জনের বেশি জমায়েত করা যাবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হল। কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে সিপিএম এবং জয়েন্ট ডক্টর্স ফোরাম। আগামী কাল তাঁদের মিছিলেও অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। শুক্রবার এই জোড়া মামলার শুনানি রয়েছে। (Kolkata No Gathering Order)
কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ধর্মতলা চত্বরে ১৬৩ ধারা (আগে যা ১৪৪ ধারা ছিল) জারি থাকবে। এই সময়ে ধর্মতলা চত্বরে পাঁচ জনের বেশি জমায়েত করতে পারবেন না। মিছিল করা যাবে না হাতে লাঠি বা অস্ত্র নিয়ে। শহরের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থেই এমন পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। (Kolkata Police) বেআইনি জমায়েতের অর্থ গন্ডগোল বা ঝামেলার উদ্দেশে পাঁচ জন বা তার বেশি সংখ্যক মানুষের একত্রিত হওয়া। এক্ষেত্রে বেআইনি জমায়েতর উল্লেখই রয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
পুলিশ জানিয়েছে, কেসি দাস ক্রসিং থেকে ভিক্টোরিয়া হাউজ এবং সংলগ্ন এলাকায় জমায়েত নিষিদ্ধ আগামী দু’মাস। বেন্টিং স্ট্রিট বাদ দিয়ে আগামী দু’মাস ধর্মতলা চত্বরে পাঁচ জনের বেশি মানুষ জমায়েত করতে পারবেন না। পুলিশের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে গিয়েছে সিপিএম-এর ছাত্র-যুব-মহিলা সংগঠন। তাদের দাবি, আর জি কর নিয়ে প্রতিবাদ, আন্দোলন ঠেকাতেই এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। আর জি করের ঘটনায় এযাবৎ যত প্রতিবাদ, মিছিল সংগঠিত হয়েছে, তার গন্তব্য বহু ক্ষেত্রই ধর্মতলা। আবার ধর্মতলা থেকে বহু মিছিল শুরুও হয়েছে। তাই ধর্মতলায় জমায়েত নিষিদ্ধ করা হল বলে দাবি সিপিএম-এর।
আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, বিজ্ঞপ্তির প্রথম অংশে তিনটি এলাকার কথা বলা হয়েছে, হেয়ার স্ট্রিট, বউবাজার থানা এবং ট্রাফিক গার্ডের সদর দফতরের এক্তিয়ারভুক্ত এলাকায় ১৬৩ ধারা জারি হয়েছে। কোনও জমায়েত, মিটিং-মিছিল করা যাবে না বলে জানানো হয়েছে। এই বিজ্ঞপ্তি ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সিপিএম পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে, পুজো আসছে। ওই এলাকাগুলিতেও বেশ কিছু বড় এবং মাঝারি পুজো হয়। পুজোর সময়ও কি মানুষ ওই এলাকায় ভিড় করতে পারবেন না? গল্প করা যাবে না প্যান্ডেলে বসে? যাঁরা উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতায় নিয়মিত যাতায়াত করেন, এই বিজ্ঞপ্তির ফলে তাঁদেরও সমস্যা হবে বলে মত সিপিএম-এর।
শুধু তাই নয়, আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, বিজ্ঞপ্তিটি সমস্ত ডিসি অফিস এবং কলকাতা পুরসভার দফতরে পাঠাতে হবে। বিজ্ঞপ্তি যদি তিনটি এলাকার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ হয়, তাহলে সব জায়গায় কেন পাঠাতে হবে, সেই নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। আইনজীবী শামিম আহমেদ বলেন, “মানুষ যাতে যেতে না পারেন, তার জন্য আটকানো হচ্ছে। প্রতিদিন প্রতিবাদ চলছে, শান্তিপূর্ণ মিছিলে অনুমতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আসলে মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।” এতদিন এমন কোনও নির্দেশিকা জারি হয়নি, তাই এর নেপথ্যে কুমতলব রয়েছে বলে মত তাঁর।
চিকিৎসব সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, “এটা বেআইনি নির্দেশনামা। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে দেশের কোথাও আইনি বাধা নেই। সংবিধান অধিকার দিয়েছে আমাদের। আমাদের রাজ্যে নিশ্চয়ই তালিবানি শাসন বা পুলিশের শাসন চলছে না। একটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকার কী ভাবে এটায় সায় দেয়?” যদিও তৃণমূলের কুমাল ঘোষের দাবি, প্রশাসনিক কারণেই এমন করে থাকবে পুলিশ। যাঁদের আপত্তি জানানোর জানিয়েছেন। এ নিয়ে রাজনৈতিক মন্তব্য করতে চাননি তাঁরা।
আরও দেখুন