‘মেয়রকে ডাকুন’, ট্যাংরায় বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে গেলে উত্তেজনা, গেট আটকালেন মহিলারা
কলকাতা: ট্যাংরার ক্রিস্টোফার রোডে হেলে পড়া নির্মীয়মাণ বহুতল ভাঙার কাজ শুরু হওয়ার কথা। সেই মতো পৌঁছে গিয়েছেন কলকাতা পুরসভার লোকজন এবং পুলিশ। কিন্তু বাড়ি ভাঙাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল এলাকায়। সেখানে পৌঁছেছেন ফ্ল্যাট এবং জমির মালিকরাো। নির্মীয়মান বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়েছেন মহিলা এবং পুরুষরা। ভিতর থেকে লোহার গেটে আটকে দিয়েছেন তাঁরা। পুলিশ ও পুরসভার কর্মীদের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে সাফ জানাচ্ছেন। বাড়ি তৈরির সময় যখন টনক নড়েনি, এখন কেন ভাঙতে এত তৎপরতা, প্রশ্ন তুলেছেন মহিলারা। জানিয়েছেন, বাড়ি ভাঙতে দেবেন না তাঁরা। তাঁদের কথা শুনতে হবে আগে। কেউ কেউ কেঁদেও ফেলেন। অনেক কষ্টার্জিত টাকায় ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। বাড়ি ভাঙলে কোথায় যাবেন, প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। (Kolkata News)
কলকাতা পুরসভার ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের, ১১/২ ক্রিস্টোফার রোডের নির্মীয়মাণ বহুতলটিকে বেআইনি বলে চিহ্নিত করেছে পুরসভা। সেই বহুতলটি যেমন হেলে রয়েছে, হেলে রয়েছে পাশের সবুজ রঙের বহুতলটিও। হরিয়ানার বিশেষজ্ঞ সংস্থা জানিয়েছে, সাদা রঙের বাড়িটিই হেলে পড়েছে সবুজ রঙের বহুতলের গায়ে। সবুজ রঙের বহুতল সোজা করা সম্ভব। এর পরই সাদা রঙের বাড়িটি ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মতো নোটিস দেওয়া হয়। কিন্তু বাসিন্দাদের দাবি, আশেপাশে প্রচুর বেআইনি নির্মাণ হয়েছে। পুরসভা আগে কেন নোটিস দেয়নি? এখন তাঁরা কোথায় যাবেন? (KMC News)
পুলিশ এবং পুরসভার তরফে নোটিস দেখানো হলেও, স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বলা হয়েছিল ৩ তারিখে বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হবে। হঠাৎ করে তা এগিয়ে আনা হল ৩০ তারিখে। এত অল্প সময়ের মধ্যে কোথায় যাবেন তাঁরা, প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা। এক মহিলা বলেন, “আমরা ভাঙতে দেব না। আমাদের সঙ্গে এসে কথা বলুক আগে। আমরা এখানে রক্তাক্ত হয়ে যাবে। ৩ তারিখে ভাঙার কথা ছিল, সেটা ৩ তারিখে হল কেন? রাতারাতি কী করে সিদ্ধান্ত পাল্টে গেল?” ওই মহিলা আরও বলেন, “লোকের কাজ করে, পরিশ্রম করে ফ্ল্য়াট কিনেছি থাকব বলে। আমার বুড়ি মা আছে। এখনও স্বপ্ন নিয়ে বসে আছে সে। পুরোটা ভাঙা হবে, না হবে না, কিছু জানিনা। ভাঙতে দেব না আমরা। কবে স্বাধীনতা পাব আমরা? এভাবে বাঁচা যায় না।”
পুরকর্মী এবং পুলিশের লোকজন বোঝানোর চেষ্টা করেন বাসিন্দাদের। জানান, অর্ডার অনুযায়ী লোকজন এসেছে ভাঙার কাজ শুরু করতে। কিন্তু একদিনে ভাঙা হবে না। হয়ত কিছুটা হবে আজ। কিন্তু বাসিন্দারা নিজেদের অনড় অবস্থা জানিয়ে দেন। বাড়ি ভাঙতে দেবেন না বলে জানিয়ে দেন। নোটিস তো আগেই দেওয়া হয়েছিল, বাড়ি খালি করে দিতে বলা হয়েছিল বলে পাল্টা যুক্তি দেয় পুলিশ। কিন্তু বাসিন্দারা প্রশ্ন তোলেন, তাঁরা কোথায় যাবেন? যখন বাড়ি তৈরি হচ্ছিল, তখন পুরসভা, পুলিশ কোথায় ছিল প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। নির্মাণ বেআইনি বলেই ভাঙা হচ্ছে, যুক্তি দেয় পুলিশ। এর পাল্টা বাসিন্দারা জানান, তাহলে বিকল্প ব্যবস্থা করে দিতে হবে তাঁদের। পুনর্বাসন দিতে হবে। তবেই ভাঙা যাবে বহুতল। বাসিন্দারা বলেন, “মেয়রকে ডাকুন। বাড়ি ছাড়ব না আমরা। মেয়র ছাড়া কারও সঙ্গে কথা বলব না।” গোটা ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে এলাকায়।
আরও দেখুন