সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুগলি: কাশ্মীরের জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছেন ২৬ জন নিরীহ পর্যটক। বেঘোরে প্রাণ গিয়েছে ভূস্বর্গে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের। বিভীষিকার মধ্যে রয়েছেন সেখানে আটকে থাকা বাকি পর্যটকরা। হুগলির কোন্নগরের সৌরভ সরকার। বছর পাঁচেক আগে তিনি বিবাহ সম্পন্ন করেছেন। বিয়ের পর এই প্রথম বউকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন তিনি। প্ল্যান করেছিলেন এটাই তাঁদের হানিমুন।
আরও পড়ুন, কাশ্মীরে নিহত বিতান অধিকারীর বাড়িতে শুভেন্দু, ‘বদলা চাই, ২৬-এর বদলে ২৬০ টা মুন্ডু চাই..’ !
মিনি সুইজারল্যান্ড দেখতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের। তবে টুর গ্রুপের বাকি পর্যটকরা দেরি করায় তাদের বেরোতে দেরি হয়ে যায়। তাতেই শাপে বর হয় গোটা পরিবারের। কারণ যখন তাঁরা হোটেল ছেড়ে বেরোচ্ছেন সেই সময় সেনাবাহিনীর তরফ থেকে খবর দেওয়া হয় পেঁহেলগাও-এর ওই জায়গায় টেরোরিস্ট অ্যাটাক হয়েছে। ওই জায়গায় যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। হয়তো সেই সময় বাকি সকলে যদি সঠিক সময় বেরিয়ে পড়তেন তাহলে যে সময় ঘটনা ঘটেছে সেই সময়তে মিনি সুইজারল্যান্ডে উপস্থিত থাকতেন তাঁরাও। তবে এখন ভগবানের কাছে তারা প্রার্থনা করছেন যে যে কোনওরকম ভাবেই তাদের প্রাণ যাতে বাঁচিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন।
সৌরভ সরকারের মা সুপর্ণা সরকার তিনি জানান, তার ছেলে বউ এই বছর প্রথম ঘুরতে গিয়েছিল কাশ্মীর। যখন ঘটনা ঘটে তারপরে তার ছেলে তাকে ফোন করে জানায় যে তাঁরা সুরক্ষিত রয়েছে। তবে আতঙ্ক তাদের গ্রাস করেছে। চারিদিকে কার্ফিউ জারি করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে তারা হোটেলের মধ্যে গৃহবন্দী এখন। বাড়িতে বসে তিনি প্রার্থনা করছেন যাতে তার ছেলে বউ সঠিকভাবে বাড়ি ফিরে আসতে পারে।
জঙ্গি হামলায় রক্তাক্ত কাশ্মীরের পহেলগাঁও। ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২ জন বাঙালি। এদের একজন আমেরিকা প্রবাসী তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী। ছুটিতে দেশে ফিরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কাশ্মীরে ঘুরতে গেছিলেন। জঙ্গি হামলা প্রাণ কেড়েছে বেহালার এক বাসিন্দারও। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীও স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে গেছিলেন। ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলতে এখনও শিউরে উঠছেন নিহতদের প্রিয়জনেরা। ভূস্বর্গ কাশ্মীর এখন মৃত্যু উপত্যকা। ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। কাশ্মীরে ঘুরতে গিয়ে প্রাণ গেছে দুই বাঙালির। এদেরই একজন বিতান অধিকারী। ফোনে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন নিহত পর্যটকের স্ত্রী। বলছেন, বেছে বেছে হিন্দুদের মারা হয়েছে।
বছর চল্লিশের বিতান ফ্লোরিডার থাকতেন। কাজ করতেন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায়।বিতানের পৈতৃক বাড়ি বেহালায়। বাড়ির ছোট ছেলে। জঙ্গিদের গুলিতে সন্তানের মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেনবৃদ্ধ দম্পতি। যে সন্ত্রাসের হাত থেকে বাঁচতে ১৯৬৪ সালে ওপার বাংলা থেকে এপারে এসেছিলেন বীরেশ্বর অধিকারী। এত বছর পর নিজের দেশে সেই সন্ত্রাসেরই বলি হল তাঁর সন্তান। নিহত বিতান অধিকারীর স্ত্রী সোহিনী অধিকারী বলেছেন, দিন কাউকে একজনকে দিন। বলছে, যারা যারা মুসলিম তারা সরে যান, কালমা পড়ুন, আর মেরে দিল। যাদের কপালে সিঁদুর দেখেছে…মেরে দিল।
আরও দেখুন