ঊজ্জ্বল মুখোপাধ্য়ায়, শিবাশিস মৌলিক ও রাজীব চৌধুরী, কলকাতা: বেড়াতে গিয়ে হাড়হিম করা অভিজ্ঞতা। পহেলগাঁওয়ে বেছে বেছে হিন্দু পর্যটকদের খুন।ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। ২৪ ঘণ্টার মধ্য়ে বদলা নেওয়া হোক, মন্তব্য় শুভেন্দু অধিকারীর। এদিকে, এই ঘটনাকে হাতিয়ার করেই মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিরোধীরা। কেন গোয়েন্দাদের কাছে কোনও খবর ছিল না? উঠেছে প্রশ্ন। শীঘ্রই জোরালো ও স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া দখতে পাবে দেশ, মন্তব্য় রাজনাথ সিংহের। 

আরও পড়ুন, কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় নিহত কলকাতার বিতান অধিকারী, স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন

BSF প্রাক্তন এডিজি পি কে মিশ্র বলেন,  আমি বুঝতে পারিনা, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যেখানে প্রতিদিন প্রচুর পর্যটক জমায়েত হন, সেখানে নিরাপত্তা প্রায় শূন্য! সেখানে কোনও বাহিনী মোতায়েন ছিল না! কেন সেখানে নিরাপত্তারক্ষী ছিল না? পহেলগাঁওয়ে এত হামলা জঙ্গিরা ঘটাল কী করে, তা বুঝে উঠতে পারছে না নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা!একই প্রশ্ন বিরোধীদেরও!বিরোধীরা একসুরে জঙ্গি হামলার নিন্দা করে বলছে, এই সঙ্কটকালে গোটা দেশ একজোট হয়ে লড়াই করবে! কিন্তু একইসঙ্গে তাদের প্রশ্ন, যে মোদি সরকার বারবার দাবি করে তারা সন্ত্রাসবাদ দমন করে কাশ্মীরকে শান্ত করে দিয়েছে, তাদের আমলেই গত এক বছর ধরে বারবার জঙ্গি হামলায় সেনা-পুলিশের মৃত্য়ুর পর, এবার একসঙ্গে ২৬জনের মৃত্য়ু হল কী করে?

এনসিপি-এসসিপি সাংসদ  সুপ্রিয়া সুলে বলেন, ২ সপ্তাহ আগে, খবর এসেছিল, এরকম একটা অ্য়াটাক হতে পারে। কিন্তু এখন ‘তু তু ম্য়ায় ম্য়ায়’ করার সময় নয়। আমরা অবশ্য়ই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জবাব চাইব। কিন্তু এখন ২ দিন মানুষের নিরাপত্তা, সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কাশ্মীরে থাকা সমস্ত নাগরিক যেন সুরক্ষিত থাকে। প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন,   অমিত শাহ আমাদেরকে বলেছিল, আগের আমলে পাথর মারত সবাই। আজ কাঁকর ছোড়ারও ক্ষমতা নেই, এমন করে দিয়েছি। ঔদ্ধত্য়, বাস্তব অবস্থার, বাস্তব বিশ্লেষণ না করে, কাশ্মীরের মাটি এবং সেখানকার মানুষের মানসিকতাকে যদি বিচার করতে না পারা যায়, তাহলে কিন্তু এ সমস্য়া থামানো যেতে পারে, বন্ধ করা যাবে না। 

দেশের বিভিন্ন রাজ্য় থেকে কাশ্মীরে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের বেছে বেছে খুন করে, গোটা ভারতকে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে জঙ্গিরা…এর জবাব কীভাবে দেওয়া হবে পাকিস্তানকে? বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্য়ে বদলা নিয়ে দেখাক। রাজনীতি পরে। নির্বাচন অনেক পরে। ভোট অনেক দূরে। আমরা সনাতনী। আমরা ভারতীয়, আমরা বদলা চাই। মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন, কী হয়েছে, না হয়েছে ডিটেলস পরে দেখব। এখন আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। টেররিজম একটা আইডেনটিটি, জন্মগত ক্রিমিনাল। এদের কোনও জাত হয় না, ধর্ম হয় না। এদের ক্ষমতাও করা যায় না। আমি ভেবে পাচ্ছি না, এতক্ষণ সময় লেগেছে, বেছে বেছে করেছে যেগুলো। যেগুলো আমরা শুনতে পাচ্ছি, দেখতে পাচ্ছি। ওখানে অনেক আর্মি ছিল। এমনিতেই বর্ডার এরিয়া সেন্সিটিভ এরিয়া। যা হোক সেইসব বাছাবাছি নিয়ে আমি এখন কথা বলব না। আমরা এখন চাই কঠোর ব্য়বস্থা যেন নেওয়া হয়। 

 বারবার প্রশ্ন উঠছে, কাদের ব্য়র্থতার জন্য় কাশ্মীরে কখনও সেনা, কখনও আধা সেনা, কখনও নিরীহ পর্যটকদের প্রাণ যাচ্ছে? তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক  কুণাল ঘোষ বলেন, সীমান্ত পেরিয়ে তারা এল, থাকল, হামলা করল৷ কোথাও সেনা দেখা গেল না? পালটা গুলি চলল না? এত বড় নিরাপত্তা ব্যর্থতা। এই অপদার্থতার দায়িত্ব নিয়ে অমিত শাহ কেন ইস্তফা দেবেন না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী হিসাবে? চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরে মৃতদেহে মালা দিতে ছবি তুলতে গেছেন।

 সমাজবাদী পার্টি নেতা  আবু আজমি বলেন, সরকার বলেছিল ৩৭০ ধারা বাতিল হয়ে গেলে এবং নোটবন্দির পর, সন্ত্রাসবাদ শেষ হয়ে যাবে। এটা গোয়েন্দা ব্য়র্থতা। এত লোক মারা গেছে। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বারবার বলছে, পাকিস্তানের লোক করছে। মুম্বইতে এর আগে হামলা হয়েছে, তার সঙ্গে পাকিস্তানের যোগ, পুলওয়ামায় হয়েছে, পাকিস্তান-যোগ। তাহলে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে না? কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী  শিবরাজ সিংহ চৌহান বলেন, এটি কাশ্মীরিদের কর্মসংস্থানের উপর আক্রমণ। দোষীদের কোনও মূল্যেই রেহাই দেওয়া হবে না, তাদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে। ভয়াবহ জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।একটাই দাবি উঠছে যোগ্য় জবাব দেওয়া হোক!

আরও দেখুন