যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজের ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া শুভেন্দুর, ‘এটাও বাংলাদেশ বানিয়ে দিয়েছে..’!
পার্থপ্রতিম ঘোষ, সুজিত মণ্ডল, বিটন চক্রবর্তী,কলকাতা : একই কলেজের ২ পক্ষের মধ্যে সংঘাতের জের। আর এর জেরে এবার কলেজ ক্যাম্পাসেই উঠল উই ওয়ান্ট জাস্টিস স্লোগান। শিক্ষামন্ত্রীর সামনে স্লোগান দিলেন যোগেশচন্দ্র চৌধুরী আইন কলেজের পড়ুয়ারা। আর এই নিয়ে কড়া অবস্থানে কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি মালা রায়। এহেন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ইস্যু টেনে, মমতার সরকারকে জোর নিশানা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর।
এই ঘটনায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘এটাও বাংলাদেশ বানিয়ে দিয়েছে। ওপারের যশোরে, সেখানেও পুলিশ দিয়ে আর্মি দিয়ে পুজো হচ্ছে। আর এপারেও কলকাতাতে পুলিশ দিয়ে পুজো হচ্ছে। তাও হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে।’একই কলেজের ২ বিভাগের সরস্বতী পুজো ঘিরে নজিরবিহীন সংঘাত। আর সেখানেই এবার খোদ শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাণী বন্দনাতেও উঠল উই ওয়ান্ট জাস্টিস স্লোগান। যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজের দুটি বিভাগের সরস্বতী পুজো করা নিয়ে জল গড়িয়েছে হাইকোর্ট পর্যন্ত। আদালতের নির্দেশেই, রবিবার সকাল থেকে পুলিশি প্রহরায় যোগেশচন্দ্র চৌধুরী আইন কলেজের তরফে আয়োজন করা হয় পুজোর। এরপর শিক্ষামন্ত্রী সেখানে পৌঁছতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন পড়ুয়ারা। যোগেশচন্দ্র চৌধুরী আইন কলেজের পড়ুয়াদের দাবি, আমরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চাই। কারণ আমাদের ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নেই। আমরা সেফ ফিল করছি না। নিজের কলেজ ক্যাম্পাসে রেপ থ্রেট দেওয়া হবে ভাবিনি।’
এরপর শিক্ষামন্ত্রী যতক্ষণ আইন কলেজের অধ্যক্ষের ঘরে ছিলেন, বাইরে টানা স্লোগান দিতে থাকেন পড়ুয়ারা। অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে এসে, পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দেন ব্রাত্য বসু। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, প্রিন্সিপ্যালের ঘরে এসো ৪ জন। আমি কথা বলব। এদিন ব্রাত্য বসুর সঙ্গেই যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজে যান পরিচালন সমিতির সভাপতি ও কলকাতা উত্তরের তৃণমূল সাংসদ মালা রায়। উই ওয়ান্ট জাস্টিস স্লোগান দেওয়া নিয়ে তীব্র আপত্তি জানান তিনি। কলকাতা উত্তর তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মালা রায় বলেন ,’পুজোর দিনে আমরা এইরকম মাস ভাবে উই ওয়ান্ট জাস্টিস শুনব না। এটা স্টুডেন্টদের কিন্তু রাজনীতি নয়। এখানে কিছু কিছু রাজনৈতিক মনোভাবাপন্ন, অন্য দলের রাজনৈতিক মনোভাবাপন্ন তাঁরা চাইছেন কলেজটা ঘিরে একটা রাজনীতি হোক।’
যোগেশচন্দ্র চৌধুরী আইন কলেজের পড়ুয়া রেশমা ঘোষ বলেন, এই উই ওয়ান্ট জাস্টিসের সাথে আমাদের মূল দাবি, কারা দিয়েছে, মূলত আমরা যারা ভিতরে ঢুকেছিলাম। আমি আবারও বলছি আমরা যারা ভিতরে ঢুকেছিলাম এবং যাদের কনসার্নড ছিল যে আমরা কথা বলব, আমরা একটাই দাবি জানিয়েছি আপনাদের কাছে নিশ্চয়ই ভিডিও ক্লিপস রয়েছে। আমরা কমপ্লিটলি অ্যাপলিটিক্যাল, এটা কোনও রাজনৈতিক ইস্যু নয়। সন্ধেয় যোগেশচন্দ্র কলেজে যান কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। যোগেশচন্দ্র আইন কলেজের পড়ুয়াদের উই ওয়ান্ট জাস্টিস স্লোগান দেওয়া নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেন তিনি। কামারহাটি তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র বলেন, ‘ভেবেছিল মালাদি, ব্রাত্য দুই পকেটে জাস্টিস নিয়ে এসেছে। আমাকে দেখে বোঝে ল্যাবেনচুস থাকলেও জাস্টিস নেই, তাই স্লোগান দেয় না।’এদিকে যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ডে কলেজের প্রাক্তনী ও দক্ষিণ কলকাতার টিএমসিপি সহ সভাপতি সাব্বির আলির বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি অভিযোগ করছেন আইন কলেজের পড়ুয়ারা। তাদের দাবি, গন্ডগোলের নেপথ্যে রয়েছে সাব্বিরই।
আরও পড়ুন, RG কর কাণ্ডে এবার নতুন করে তদন্তের দাবি অভয়ার মা-বাবার, হাইকোর্টে আবেদনের প্রস্তুতি..
যোগেশচন্দ্র চৌধুরী আইন কলেজের এক পড়ুয়া বলেন, ‘এই বহিরাগতরা একটা গ্রুপ। সাব্বির আলির গ্রুপ। মোটকথা তোলাবাজি করে।’ দক্ষিণ কলকাতা টিএমসিপি সহ সভাপতি সাব্বির আলি বলেন, বহিরাগত আর পাস আউটের মধ্যে তফাৎ আছে। কলেজের ছাত্র অ্যালুমনি, কলেজের ছাত্র এক্স স্টুডেন্ট এবং বহিরাগত এর মধ্যে তফাৎ আছে। এদিকে এই টানাপোড়েনের মাঝে, কলেজের গাড়ি বারান্দার নীচে চেয়ার পেতে আলাদা করে পুজো করেন যোগেশচন্দ্র চৌধুরীর ডে কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ রায়। যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ডে কলেজ অধ্যক্ষ পঙ্কজ রায় বলেন , ‘যেহেতু হাইকোর্ট এখানে পুজো করতে বলেছিল তাই টোকেন হিসাবে এই পুজো করলাম। আর ব্রাত্য এসে তো আমার সঙ্গে কথা বলল না।’সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ২ পক্ষের বিবাদ মেটাতে এবার সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে কলেজের পরিচালন সমিতি। ৬ বা ৭ ফেব্রুয়ারি কলেজে এসে বৈঠক করবেন পরিচালন সমিতির সভাপতি মালা রায়। এদিকে এরই কলেজের অন্দরে এই টানাপোড়েন ঘিরে তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক চাপানউতর।
আরও দেখুন