নয়াদিল্লি: সমালোচনার মুখে পড়েও নিজের অবস্থানে অনড় উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়। আবারও সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনায় মুখ খুললেন তিনি। ধনকড়ের দাবি, দেশের সংসদের হাতেই সর্বোচ্চ ক্ষমতা। তাই সংসদের উপর কারও কর্তৃত্ব চলবে না। শুধু তাই নয়, ধকড়ের দাবি, সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই ‘আল্টিমেট মাস্টার্স’। সংবিধানে কী থাকবে, সেই সিদ্ধান্ত তাঁরাই নেবেন। (Jagdeep Dhankhar)
মঙ্গলবার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করতে গিয়ে ফের সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনা করেছেন ধনকড়। তিনি বলেন, “যে প্রধানমন্ত্রী জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন, ১৯৭৭ সালে তাঁর কাঁধে দায়বচাপে। তাই এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ থাকা উচিত নয়… সংসদের উপর কারও কর্তৃত্বের কথা বলা নেই সংবিধানে। দেশের সংসদই চূড়ান্ত। নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই আল্টিমেট মাস্টার্স। সংবিধানে কী থাকবে, তাঁরাই ঠিক করবেন।” (Supreme Court)
রাজ্য বিধানসভায় বিল পাস হওয়ার পর রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতি অনির্দিষ্ট কালের জন্য় তা আটকে রাখতে পারবেন না বলে সম্প্রতি ঐতিহাসিক রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতিকে এক্তিয়ার স্মরণ করিয়ে দেয় বিল নিয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণের জন্য সময়সীমাও বেঁধে দেয় শীর্ষ আদালত। সেই নিয়ে আগেই সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনা করেছিলেন ধনকড়। সংবিধানে বিচারব্যবস্থাকে যে ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে, তাকে ‘পরমাণু অস্ত্র’ বলেও উল্লেখ করেন। কিছু বিচারপতি নিজেদের ‘Super Parliament’ মনে করছেন বলেও দাবি করেন সেই সময়।
VIDEO | Speaking at an event in Delhi University, Vice-President Jagdeep Dhankhar (@VPIndia) said, “A prime minister, who imposed Emergency, was held accountable in 1977. Therefore, let there be no doubt about it – Constitution is for the people and it’s a repository of… pic.twitter.com/mjXt84tLcS
— Press Trust of India (@PTI_News) April 22, 2025
ধনকড়ের সেই মন্তব্য নিয়ে সর্বত্র নিন্দার ঝড় ওঠে। এর পর বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবেও সুপ্রিম কোর্টের নিন্দা করেন। ওয়াকফ আইন নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রকে যে প্রশ্ন করে, তা নিয়ে আদালত এবং প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ‘ধর্মযুদ্ধে উস্কানি’ দেওয়ার অভিযোগ তোলেন নিশিকান্ত। পরিস্থিতি এমন হয় যে বিজেপি-র সভাপতি জেপি নাড্ডা নিশিকান্তের মন্তব্যে দলের সমর্থন নেই বলে জানান।
সেই আবহেই ফের সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনায় মুখ খুললেন ধনকড়। তাঁর বক্তব্য, “গণতন্ত্রে প্রত্যেক নাগরিকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আশ্চর্য বোধ করছি যে সম্প্রতি কেউ কেউ সাংবিধানিক পদগুলিকে আলঙ্কারিক মনে করছেন। দেশের নাগরিক হোন বা সাংবিধানিক কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে এর চেয়ে ভুল ধারণা হয় না। আমার মনে হয়, দেশের নাগরিকরাই শেষ কথা, আর তাঁদের উপরই গণতন্ত্রের নির্মাণ হয়। প্রত্যেকের কিছু না কিছু ভূমিকা রয়েছে। নাগরিকদের নাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে গণতন্ত্র। নাগরিক সচেতন হলে, নাগরিকদের যোগদান পেলেই গণতন্ত্র প্রস্ফুটিত হয়।”
#WATCH | Delhi: Vice President Jagdeep Dhankhar says “For any democracy, every citizen has a pivotal role. I find it inconceivably intriguing that some have recently reflected that constitutional offices can be ceremonial or ornamental. Nothing can be far distanced from a wrong… pic.twitter.com/l1kQYoSUw0
— ANI (@ANI) April 22, 2025
ধনকড় আরও বলেন, “একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলল, মুখবন্ধ সংবিধানের অংশ নয়, অন্য মামলায় বলা হল সেটি সংবিধানের অংশ। গণতন্ত্রে আলোচনা জরুরি। আমাদের নীরবতা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে চিন্তাশীল মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের প্রতিষ্ঠানগুলিকে ধ্বংস হতে দেওয়া যাবে না, কোনও ব্যক্তির ভাবমূর্তি কলঙ্কিত হতে দিতে পারি না আমরা। সাংবিধানিক কর্মকর্তাদের প্রতিটি কথা সংবিধান দ্বারাই পরিচালিত হয়।”
ধনকড় এবং বিজেপি-র নেতারা যেভাবে তাদের সমালোচনা করছে, তা নিয়ে একদিন আগেই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্ট। মুর্শিদাবাদে অশান্তির ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন চালুর যে আবেদন জমা পড়ে, তা শুনানিতে বিচারপতি বিআর গাভাই বলেন, “আপনারা রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে Writ Mandamus জারি করতে বলছেন? এমনিতেই আমাদের বিরুদ্ধে কার্যনির্বাহকারীদের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ উঠছে।” আর তার পরই ফের সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনা করলেন ধনকড়।
আরও দেখুন