আমদাবাদ: বিরল। ব্যতিক্রমী। প্রমাণের মঞ্চ। শাপমোচনের সুযোগ। জবাব দেওয়ার চ্যালেঞ্জ। ভুল প্রমাণ করার হাতছানি।
আইপিএল ফাইনালের চব্বিশ ঘণ্টা আগে প্রিভিউ লিখতে বসে বিশেষ্য আর বিশেষণের ফল্গুধারা নেমে আসছে কী বোর্ড বেয়ে।
এমন আইপিএল ফাইনাল (IPL Final) সাম্প্রতিক অতীতে দেখা যায়নি। যেখানে মুখোমুখি এমন দুই দল, যারা কোনওদিন ট্রফির স্বাদ পায়নি। একদল, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর এটা চতুর্থ আইপিএল ফাইনাল। থার্ড টাইম লাকির প্রবাদ খাটেনি। এবার কি ফোর্থ টাইম লাকি?
মঙ্গলবার আমদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে আরসিবির প্রতিপক্ষ পঞ্জাব কিংস এর আগে একবারই আইপিএল ফাইনাল খেলেছে। ঋদ্ধিমান সাহার ঐতিহাসিক সেঞ্চুরির পরেও সেই ফাইনালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের কাছে হারতে হয়েছিল পঞ্জাবকে। তারপর থেকে দলের নাম, জার্সি, কোচ, অধিনায়ক – সব বদলে ফেলেও ভাগ্য ফেরেনি। এবার কি কপাল খুলবে?
এখনও পর্যন্ত সাত দল ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ১৭ বার আইপিএল জিতেছে। যাদের মধ্যে একটি দল – হায়দরাবাদ ডেকান চার্জার্সের অস্তিত্ব নেই আর। তাদের পরিবর্তে হায়দরাবাদের প্রতিনিধিত্ব করে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। আইপিএলে দুটি দল এমনও আছে, যারা মাত্র চার বছর খেলছে এবং একবার ট্রফি জিতে নিয়েছে একটি দল (গুজরাত টাইটান্স)। অথচ ক্রিকেট ঈশ্বর যেন আরসিবি ও পঞ্জাব কিংসের দিকে মুখ তুলে তাকাননি। ঠিক যেমন আইপিএল ট্রফির দেখা পায়নি দিল্লি ক্যাপিটালসও।
মঙ্গলবার রাতের পর থেকে শাপমুক্ত হবে আরসিবি ও পঞ্জাব কিংসের মধ্যে কোনও এক দল। ১৮ বারের প্রচেষ্টায় আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হবে কোনও এক শিবির। আর যে দল পারবে না? ফের সঙ্গী হবে হতাশার আঁধার।
পঞ্জাব কিংসের নতুন কোচ রিকি পন্টিং। নতুন অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার। দুজনই স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। একজন আগ্রাসী ক্রিকেটের মন্ত্রে দলকে দীক্ষিত করেছেন। অন্যজন বঞ্চনার শিকার। অধিনায়ক হিসাবে কেকেআরকে ট্রফি জেতানোর পরের মরশুমে চুক্তির টাকার অঙ্ক নিয়ে মতবিরোধ হওয়ায় শ্রেয়সকে রাখেনি শাহরুখ খানের দল। পঞ্জাব যে শুধু তাঁকে সাদরে গদ্রহণ করেছে তাই নয়, দিয়েছেন নেতৃত্বের মুকুটও। বাড়তি তাগিদ নিয়ে মাঠে নামছেন শ্রেয়স।
মুম্বইয়ের তারকা ক্রিকেটারের কাছে এবারের আইপিএল প্রমাণ করার মঞ্চ। প্রমাণ যে তিনি যে দলেই থাকুন না কেন, ট্রফি জিততে পারেন। জবাব দেওয়ার চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জ যে, তিনি দল পাল্টালেও চ্যাম্পিয়নশিপের সরণি ভুলে যাননি। ভুল প্রমাণ করার হাতছানি। প্রমাণ করার তাগিদ যে, কেকেআর তাঁকে ছেড়ে দিয়ে ঠিক করেনি। বরং যে পরিমাণ অপমান তাঁকে হজম করতে হয়েছে, তা দলকে ট্রফি দেওয়ার পর তাঁর প্রাপ্য ছিল না।
এক মেরুতে যদি থাকেন শ্রেয়স, তো আর এক মেরুতে বিরাট কোহলি। যাঁকে ক্রিকেট বিশ্ব কুর্নিশ করে কিংগ কোহলি নামে। যদিও কোহলির কেরিয়ারে একটা ক্ষত রয়েই গিয়েছে। তিনবার আইপিএল ফাইনাল খেলেও চ্যাম্পিয়ন হননি কখনও। ২০১৬ সালের সেই স্বপ্নের মরশুম, হাতে সেলাই নিয়েও চারটি সেঞ্চুরি, সেবারও ফাইনালে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের কাছে স্বপ্নভঙ্গ।
কোহলির কাছে তাই নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের মঞ্চ মঙ্গলবারের ফাইনাল। যে তিনি আইপিএলেও ট্রফি জিততে পারেন। তাঁর দল চোকার্স নয়। শাপমোচনের সুযোগ। তিনবার ফাইনালে উঠে পরাজিত হওয়ার পরেও রবার্ট ব্রুসের মতো নাছোড় মানসিকতা নিয়ে তিনি ফের শূন্য থেকে শুরু করতে পারেন। যতদিন না লক্ষ্যপূরণ হয়। জবাব দেওয়ার চ্যালেঞ্জ। তিনি যে ক্লাবের জার্সিতেও বড় ম্যাচ জেতাতে পারেন, চাপের মুখে পারফর্ম করতে পারেন, তা দেখিয়ে দেওয়ার সুযোগ।
দুই দলের কথা বললে, দুই শিবিরেরই অস্ত্র দলের ভারসাম্য। আরসিবি বরাবর ব্যাটিং কেন্দ্রিক দল গড়েছে। এবার সেখানে প্রথমবার ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে বোলিং। জশ হ্যাজলউডের ছন্দ, ভুবনেশ্বর কুমারের অভিজ্ঞতা, রিঙ্কু সিংহের হাতে পাঁচ ছক্কার প্রহার ভুলে যশ দয়ালের নতুন সংকল্প। সবচেয়ে বড় কথা, যে স্পিন বিভাগ একেবারে নির্জীব ছিল, সূয়শ শর্মা ও ক্রুণাল পাণ্ড্য থাকায় সেই বিভাগও এবার রঙিন।
পঞ্জাব কিংসের আবার সম্পদ স্থানীয় ক্রিকেটারেরা। পঞ্জাব কিংসই একমাত্র দল, যারা বরাবর রাজ্যের ক্রিকেটারদের অপরিসীম গুরুত্ব দিয়ে থাকে। প্রভসিমরন সিংহ, অর্শদীপ সিংহ, হরপ্রীত ব্রার – এক ঝাঁক ভূমিপুত্র। সঙ্গে শ্রেয়সের ব্যাট হাতে ফর্ম, মার্কাস স্টোইনিসের অলরাউন্ড দক্ষতা, যুজবেন্দ্র চাহালের ফিট হয়ে মাঠে নেমে পড়া, এক ঝাঁক ইতিবাচক পয়েন্ট নোটবুকে লিখে রাখতে পারছেন গুরু পন্টিং।
সব মিলিয়ে জমজমাট একটা লড়াই দেখার অপেক্ষায় আমদাবাদ। শেষ হাসি কোন দলের?