সন্দীপ সরকার, কলকাতা: এমন দৃশ্য ইডেন গার্ডেন্সে (Eden Gardens) এর আগে কখনও দেখা গিয়েছে?
ইডেনের রোজনামচার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, এরকম কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করা হল। মাথা চুলকেও তাঁরা মনে করতে পারলেন না।
শনিবারের সন্ধ্যা। দুপুর-বিকেলে প্র্যাক্টিস করে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে রাজস্থান রয়্যালস (KKR vs RR)। রবিবার রাহুল দ্রাবিড়ের প্রশিক্ষণাধীন দলের লড়াই যাদের সঙ্গে, হোমটিম সেই কলকাতা নাইট রাইডার্সের অনুশীলন ছিল বিকেলে। সাড়ে সাতটা নাগাদ নেট গুটিয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে গেলেন সুনীল নারাইন, অজিঙ্ক রাহানেরা।
তার ঠিক পরেই মাঠে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রবেশ। দেখা গেল, কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীর্ঘ কথা বললেন মহারাজ। ইডেনের বাইশ গজ কি একটু বেশিই শুকনো দেখাচ্ছিল? মাঠের বাইরে থেকে দেখে সেরকমই মনে হচ্ছিল।
ঘড়িতে তখন রাত প্রায় আটটা। ক্লাব হাউসের আপার টিয়ারে দাঁড়িয়েও শোনা যাচ্ছিল, মাঠের বাইরে গোষ্ঠ পাল সরণির ওপর ভিড় করা মানুষের মুহূর্মুহূ জয়োধ্বনি। ইডেনে যা ভীষণ পরিচিত। কেকেআর ক্রিকেটারেরা ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে টিমবাসে ওঠার সময় অত্যুৎসাহী জনতা যা রোজ করে থাকেন। নিজের প্রিয় ক্রিকেটারকে দেখে চিৎকার। জনতার গর্জনের মধ্যে স্টেডিয়াম ছাড়ল কেকেআর।
আর ঠিক তখনই দেখা গেল, ইডেনের পিচের ওপর দুই মাঠকর্মী। হাতে জলের লম্বা পাইপ। শুরু হল পিচে জল দেওয়া। ভাল করে ভিজিয়ে দেওয়া হল শুকনো খটখটে উইকেট। তার খানিক পরে শুরু হল হাল্কা রোলিং।
রবিবার কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম রাজস্থান রয়্যালস ম্যাচ দুপুর সাড়ে তিনটেয়। ম্যাচের ১৮-১৯ ঘণ্টা আগে পিচে আচমকা জল দেওয়া হচ্ছে! এটা কি স্বাভাবিক ঘটনা? মনে করা যাচ্ছে না।
কেউ কেউ দাবি করলেন, কিউরেটর মনে করলে জল দিতেই পারেন। কারণ, পিচের শরীর বুঝে ওষুধ দেওয়ার এক্তিয়ার তাঁর রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, খটখটে রোদে খেলা শুরু হতে পারে। উইকেট যেরকম শুকনো রাখা হচ্ছিল, তাতে বল ঘুরত, লাফাত বা নীচু হতো তো বটেই, ভাঙতেও পারত বাইশ গজ। ইডেনের পিচের সাম্প্রতিক যা গতিপ্রকৃতি, তা রক্ষা করা যেত না। বরং কারও কারও আশঙ্কা, আন্ডার প্রিপেয়ার্ড তকমা লেগে যেতে পারত। তার চেয়ে খানিক জল দিয়ে হাল্কা রোল মানে জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে ক্যালপল খাইয়ে রাখা। যাতে জ্বর মাত্রা না ছাড়ায়। তাতে খানিক রান উঠলেও, ক্ষতি কি?
কেকেআর শিবির অবশ্য এ নিয়ে খুব খুশি হবে না, বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজনৈতিক সৌজন্য দেখিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে দীঘায় মন্দির উদ্বোধনে দিলীপ ঘোষের হাজির থাকাটা অনেককে চমকে দিয়েছে। লোকজন আরও বেশি চমকে উঠতে পারেন, যদি কোনওদিন দেখেন ইডেনের কিউরেটরের সঙ্গে নাইট কোচ বা অধিনায়ক খোশগল্প করছেন। শনিবার একবার চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত ও সুজন মুখোমুখি হলেন বটে। কিন্তু পণ্ডিত এমন ছিটকে গেলেন, যেন করোনা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে চলে এসেছেন।
নাইটদের বোলিংয়ের প্রধান সম্পদই হল স্পিন। মরণ-বাঁচন ম্যাচে সুনীল নারাইন-বরুণ চক্রবর্তীর ঘূর্ণিজালে রাজস্থানকে বাঁধতে চাইবে কেকেআর। ইডেনের বাইশ গজে কি বল ততটা ঘুরবে? নাকি ফের রানের ফোয়ারা? শনিবার রাতে অন্তত মনে হচ্ছে, স্পিনের মায়াজাল থাকুক বা না থাকুক, ব্যাটের চাবুক থাকছেই।
আরও দেখুন