সন্দীপ সরকার, কলকাতা: ইডেন গার্ডেন্সের (Eden Gardens) ক্লাব হাউসের আপার টিয়ারে বসা এক প্রৌঢ় বলছিলেন, ‘হার্ট দুর্বল হলে এই ধরনের ম্যাচ দেখা উচিত নয়। উফফ…’ বুক ভরে শ্বাস নিলেন যেন।
কলকাতা নাইট রাইডার্স, শাহরুখ খানের যোদ্ধারাও কি হাফ ছেড়ে বাঁচলেন না? বোর্ডে পাহাড় প্রমাণ রান। ২০৭ রান তাড়া করতে নেমে ৭.৫ ওভারে রাজস্থান রয়্যালসের স্কোর ৭১/৫। যাঁরা মাঠে খেলা দেখতে এসেছিলেন, যাঁরা টিভিতে কিংবা হাতের স্মার্টফোনে খেলা দেখছিলেন, ধরেই নিয়েছিলেন যে, কেকেআরের জয় আর ২ পয়েন্ট কার্যত সময়ের অপেক্ষা।
ক্রিকেট ঈশ্বর কি সেটা জেনে মুচকি হেসেছিলেন? তা না হলে রাজস্থান রয়্যালসের দুরন্ত প্রত্যাবর্তনকে আর কীভাবেই বা ব্যাখ্যা করা যায়?
ষষ্ঠ উইকেটে ৪৮ বলে ৯২ রান করে ম্যাচের রং পাল্টে দিয়েছিলেন রিয়ান পরাগ ও শিমরন হেটমায়ার। ইডেনে ম্যাচের প্রথমার্ধে দেখা গিয়েছিল আন্দ্রে ‘মাসল’ রাসেলের ব্যাট হাতে ধ্বংসলীলা। মাত্র ২২ বলে হাফসেঞ্চুরি। চলতি আইপিএলে ক্যারিবিয়ান তারকার প্রথম হাফসেঞ্চুরি। চারটি বাউন্ডারি, ছয় ছক্কা মেরে ২৫ বলে ৫৭ রানে অপরাজিত রইলেন রাসেল। সঙ্গত করলেন অঙ্গকৃষ রঘুবংশী। ৩১ বলে ৪৪ করলেন। শেষ দিকে ৬ বলে অপরাজিত ১৯ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন রিঙ্কুও।
ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে প্রলয় ঘটালেন রিয়ান পরাগ। আইপিএলের প্লে অফের দৌড় থেকে আগেই ছিটকে গিয়েছে রাজস্থান রয়্যালস। হারানোর কিছুই নেই। রাজস্থান রয়্যালসের অধিনায়ক যেন ঠিকই করে নিয়েছিলেন যে, যতক্ষণ ক্রিজে থাকবেন, আগ্রাসী ক্রিকেট খেলবেন।
খেললেনও। ১৩তম ওভারে মঈন আলির এক ওভারে টানা পাঁচ বলে পাঁচ ছক্কা মারলেন অসমের ক্রিকেটার। একটি ছক্কা তো মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা স্পনসর সংস্থার গাড়িতে গিয়ে পড়ল। রবিবার একটি অভিনব রেকর্ডও গড়লেন। কারণ, পরের ওভারে বরুণ চক্রবর্তীর প্রথম যে বলটি খেললেন রিয়ান, রিভার্স স্যুইপে ফেললেন মাঠের বাইরে। দু’ওভার মিলিয়ে টানা ছ’বলে ছয় ছক্কা পরাগের। যুবরাজ সিংহের ছয় বলে ছয় ছক্কা আছে। কিন্তু সেটা এক ওভারে। টি-২০ ক্রিকেটে রিয়ানের এরকম রেকর্ড বিরল। আইপিএলের এক ওভারে পাঁচ ছক্কা মেরে ক্রিস গেল, রাহুল তেওয়াটিয়া, রবীন্দ্র জাডেজা ও রিঙ্কু সিংহের সঙ্গে এক তালিকায় চলে এলেন তিনি।
রিয়ান-হেটমায়ারের দাপটে ১২ ওভারে ১০২/৫ থেকে ১৫ ওভারে রাজস্থানের স্কোর দাঁড়াল ১৫৫/৫। ৩ ওভারে ৫৩ রান তুলে কেকেআর শিবিরকে কোণঠাসা করে ফেলেছিলেন দু’জনে। ইডেন গ্যালারিতেও যেন শ্মশানের নীরবতা।
অবশেষে সঞ্জীবনী হাতে হাজির হলেন হর্ষিত রানা। তাঁর বাউন্সারে আউট হলেন হেটমায়ার। ২৩ বলে ২৯ রান করে। ৪৫ বলে ৯৫ রান করে হর্ষিতের শিকার রিয়ানও। যেন প্রাণ ফিরে পেল কেকেআর। বেঁচে উঠল ঝিমিয়ে পড়া ইডেন গ্যালারিও।
কিন্তু নাটকের তখনও বাকি ছিল। শেষ ওভারে রাজস্থানের দরকার ছিল ২২ রান। হাতে তিন উইকেট। বৈভব অরোরার প্রথম পাঁচ বলে ১৯ রান তুলে ফেলেছিলেন শুভম দুবে। তৃতীয় বলে ৬, চতুর্থ বলে ৪, পঞ্চম বলে ফের ছক্কা মারলেন। শেষ বলে রাজস্থানের ম্যাচ জেতার জন্য দরকার ছিল ৩ রান। শেষ বলে ১ রান দৌড়ে পূর্ণ করলেন শুভম। ২ রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে গেলেন জোফ্রা আর্চার। ১৪ বলে ২৫ রানে অপরাজিত রইলেন শুভম। রাজস্থান থামল ২০৫/৮ স্কোরে।
১ রানে ম্যাচ জিতে প্লে অফের দৌড়ে রইল কেকেআর। ১১ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট হল নাইটদের। চলতি আইপিএলে প্রথমবার দলের খেলা দেখতে আসা কেকেআরের অন্যতম মালকিন জুহি চাওলারও যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল। আর ক্রিকেটপ্রেমীরা পয়সা উসুল ম্যাচ দেখে বাড়ি ফিরলেন। স্টিভেন স্পিলবার্গের থ্রিলার যেন!
আরও দেখুন