কলকাতা: সুনীল নারাইনকে (Sunil Narine) নিজের গুরু মনে করেন। তাঁকে দেখেই বোলিং শুরু। বোলিং অ্যাকশনেও বেশ অদ্ভুত মিল। নারাইনের মতোই মাথার ওপর এক হাত ফনার মতো তুলে রান আপ ধরে দৌড়ে আসেন। তারপর ডেলিভারি। ব্যাটাররা বুঝতেই পারছেন না, কোন বল পিচে পড়ে বাইরে যাবে, আর কোনটা ভিতরে আসবে। সঙ্গে ভয়ঙ্কর একটি ক্যারম বল। বোকা বনে আউট হয়ে যাচ্ছেন ব্যাটাররা। শুরু হয়ে যাচ্ছে নোটবুক সেলিব্রেশন।
শুনলে চমকে উঠবেন যে, দিগ্বেশ সিংহ রাঠির (Digvesh Singh Rathi) সঙ্গে রবিবারের আগে পর্যন্ত ক্যারিবিয়ান স্পিনার নারাইনের কখনও দেখাও হয়নি!
এ যেন সেই মহাভারতের দ্রোণাচার্য ও একলব্য়ের গল্প। শিষ্য অর্জুনকে অস্ত্রচালনার শিক্ষা দিতেন গুরু দ্রোণাচার্য। আড়াল থেকে তা দেখে দেখেই তিরন্দাজি শিখে ফেললেন একলব্য। এবং নিশানায় এমন নিখুঁত যে, অর্জুনকেও ছাপিয়ে যেতে পারতেন। দ্রোণাচার্যও জেনে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন। প্রিয় শিষ্য অর্জুনের শ্রেষ্ঠত্ব রক্ষায় গুরুদক্ষিণা হিসাবে চেয়ে নিয়েছিলেন একলব্যের আঙুল।
নারাইন অবশ্য রাঠির কাছে এমন কোনও আবদার করেননি যে, ভাই তোমাকে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে বল করতে হবে না। বরং রবিবার বিকেলে ইডেন গার্ডেন্সে প্র্যাক্টিসের সময় যখন লখনউ সুপার জায়ান্টসের অধিনায়ক ঋষভ পন্থ যখন রাঠিকে সটান নারাইনের সামনে হাজির করে বললেন যে, এই দেখ, তোর প্রিয় সুনীল নারাইন… দিল্লির স্পিনারের সঙ্গে সুন্দর কথা বললেন ক্যারিবিয়ান তারকা।
রাঠির সঙ্গে নারাইনের তফাতও রয়েছে। নারাইন উইকেট নেওয়ার পর নির্লিপ্ত থাকেন। কোনও উচ্ছ্বাস নেই। যেন চায়ের কাপে এক কাপ চুমুক দিলেন মাত্র। আর রাঠির রয়েছে আগ্রাসী সেলিব্রেশন। ব্যাটারদের ঘাড়ের ওপর উঠে হাতের তালুতে লিখে রাখছেন নাম। যে সেলিব্রেশন করতে গিয়ে দু’ম্যাচে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে তাঁকে।
তবু কেন এত চর্চা রাঠিকে নিয়ে? কারণ, তাঁর বল ঘুরছে। একা তিনি নন, সঙ্গে রয়েছেন এক সময় জাতীয় দলে খেলা তরুণ রবি বিষ্ণোই। রিস্টস্পিনার বিষ্ণোই যে কোনও সময় উইকেট তুলে নিতে পারেন।
ইডেনে যে পিচে মঙ্গলবার বিকেলে লখনউয়ের মহড়া নেবে কেকেআর, সেই বাইশ গজ বেশ শুকনো থাকতে পারে। বল পড়ে ঘুরবে। ধুলো ওড়া পিচ না হলেও স্পিনারদের জন্য থাকবে বাড়তি সাহায্য। কেকেআরের স্পিন শক্তির কথা মাথায় রেখে যে ধরনের পিচ চাওয়া হচ্ছে নাইট শিবির থেকে। যাতে নারাইন, বরুণ চক্রবর্তী ও মঈন আলিকে একসঙ্গে প্রয়োগ করা যায়।
কিন্তু বিপক্ষের স্পিন-অস্ত্রও বেশ ধারাল। স্পিনের বিরুদ্ধে নাইট ব্যাটিং যে দারুণ সাবলীল, তা নয়। তার ওপর বিকেলের ম্যাচ। তীব্র রোদ থাকতে পারে। শুকনো পিচে বল ঘুরলে ব্যুমেরাং হবে না তো?
শিষ্য একলব্যই না তখন গুরু দ্রোণাচার্যের দলের বিরুদ্ধে অর্জুন হয়ে ওঠে!