সন্দীপ সরকার, কলকাতা: বোলিং অ্যাকশন হুবহু এক। সেই বল পিঠের পিছনে লুকিয়ে দৌড়ে আসা। যাতে ব্যাটার আগাম বুঝতে না পারে কী বল আসতে চলেছে। অফস্পিন, দুসরা, ক্যারম বল, না অন্য কোনও অস্ত্র? তারপর শেষ মুহূর্তে হাত মাথার ওপর সাপের ফণার মতো তুলে ডেলিভারি। ব্যাটাররা কুলকিনারা পাচ্ছেন না।
দিগ্বেশ সিংহ রাঠিকে দেখে অনেকেই বলাবলি করছিলেন, সুনীল নারাইনের ভারতীয় সংস্করণ যেন! পরে দিগ্বেশ নিজেই জানিয়ে দেন যে, তিনি নারাইনের ভক্ত। নারাইনকে দেখেই বোলিং শুরু করেছিলেন।
মঙ্গলবার ইডেনে গুরুকে আউট করলেন শিষ্য দিগ্বেশই। এবং তারপর ফের সেই বিতর্কিত সেলিব্রেশন। নোটবুকে নাম লিখে রাখার মতো। তফাত বলতে, নারাইনকে ফিরিয়ে হাতের তালুতে নয়, মাঠে বসে পড়ে সবুজ ঘাসের ওপর নাম লিখে রাখলেন। গুরুদক্ষিণা? হতে পারে। তবে দিগ্বেশের মাথার ওপর নির্বাসনের খাঁড়াও নেমে আসতে পারে। কারণ বিতর্কিত এই সেলিব্রেশনের জন্য ইতিমধ্যেই দু’ম্যাচে প্রায় পৌনে ৬ লক্ষ টাকা জরিমানা হয়েছে তাঁর। সঙ্গে দুটি ডিমেরিট পয়েন্টও দেওয়া হয়েছে। ফের জরিমানা ও ডিমেরিট পয়েন্ট দেওয়ায় শাস্তি থেমে থাকতে না-ও পারে। নিয়মের জাঁতাকলে নির্বাসিতও করা হতে পারে নতুন বিস্ময় স্পিনারকে।
যদিও দিগ্বেশ পরোয়া করছেন না। তাঁর ক্যারম বল টুর্নামেন্টে সাড়া ফেলেছে। জরিমানা বা নির্বাসনের খাঁড়াও তাঁর সেলিব্রেশন থামাতে পারছে না।
ব্যাটাররা বুঝতেই পারছেন না, দিগ্বেশের কোন বল পিচে পড়ে বাইরে যাবে, আর কোনটা ভিতরে আসবে। নারাইন যেমন বাইরে বেরনো বলে মিসটাইম করে ক্যাচ তুলে ফিরলেন। দিগ্বেশের ঝুলিতে রয়েছে ভয়ঙ্কর একটি ক্যারম বলও। বোকা বনে আউট হয়ে যাচ্ছেন ব্যাটাররা। শুরু হয়ে যাচ্ছে নোটবুক সেলিব্রেশন।
অনেকে শুনে চমকে উঠছেন যে, দিগ্বেশ সিংহ রাঠির (Digvesh Singh Rathi) সঙ্গে রবিবারের আগে পর্যন্ত ক্যারিবিয়ান স্পিনার নারাইনের কখনও দেখাই হয়নি! অনেকের মনে পড়ে যাচ্ছে মহাভারতের দ্রোণাচার্য ও একলব্য়ের গল্প। শিষ্য অর্জুনকে অস্ত্রচালনার শিক্ষা দিতেন গুরু দ্রোণাচার্য। আড়াল থেকে তা দেখে দেখেই তিরন্দাজি শিখে ফেলেছিলেন একলব্য। এবং নিশানায় এমন নিখুঁত যে, অর্জুনকেও ছাপিয়ে যেতে পারতেন। দ্রোণাচার্যও যা জেনে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন। প্রিয় শিষ্য অর্জুনের শ্রেষ্ঠত্ব রক্ষায় গুরুদক্ষিণা হিসাবে দ্রোণাচার্য চেয়ে নিয়েছিলেন একলব্যের আঙুল।
মঙ্গলবার অবশ্য গুরু নারাইনকে বোকা বানিয়ে ফিরিয়ে যেন গুরুদক্ষিণা দিলেন শিষ্য দিগ্বেশ।
আরও দেখুন