
ওঁদের শরীরের বয়স বেড়েছে। স্বাভাবিক নিয়মে হরমোনের গ্রোথও হয়েছে। শুধু বয়স বাড়েনি মনের। আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতো হয়তো সবটুকু গুছিয়ে প্রকাশ করতে পারেন না ওঁরা। আর তাই একুশ শতকের তথাকথিত সভ্য সমাজে অনেকের কাছে ওঁরা এখনও ব্রাত্য।

অটিজম- শুধু জটিল রোগ নয়, যিনি আক্রান্ত তাঁকে হামেশাই লাঞ্ছনা, বঞ্চনার শিকার হতে হয়। এই সমাজের একটা বড় অংশ এখনও অটিজম আক্রান্তদের মূল স্রোতের সদস্য ভাবতে পারেনি।

তবে এবার তাঁদের নিয়েই একটু অন্য রকমের ভাবনা ভাবলেন এই শহরেরই এক বাসিন্দা। পেশায় তিনি কসমেটোলজিস্ট। সাধারণ মানুষকে তাঁদের মতো করেই সুন্দর ভাবে সাজিয়ে দেওয়া তাঁর কাজ। তিনি সায়ন্তন দাস। স্কিন ডায়নামিক্সের কর্ণধার।

এবছরের আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ছক ভেঙে কিছু একটা করার লক্ষ্য ছিল সায়ন্তনের। আর তাই এবার অটিজম আক্রান্ত বেশ কয়েকজন তরুণীকে সাজিয়ে তুলেছেন তিনি। পোশাকি ভাষায় যাকে বলে মেকওভার।

কেউ পরেছেন লেহেঙ্গা। কেউ বা শাড়ি। কারও পরনে কুর্তি। সঙ্গে হাল্কা গয়না। মানানসই মেকআপ। আর চোখেমুখে লেগে রয়েছে পরিতৃপ্তির হাসি। মেকওভার পেয়ে, একটু সাজগোজ করেই যে এই তরুণীরা দারুণ খুশি তা বলে দিয়েছে তাঁদের অভিব্যক্তিই।

সায়ন্তনের কথায়, ‘আমার আপনার মতো ওঁদেরও সাজতে ইচ্ছে করে। সর্বোপরি ওঁদেরও সমান অধিকার রয়েছে এই সমাজের প্রতিটি বিষয়ে। আমি সারা বছর সকলকে সাজতে উৎসাহ দিই। নিজের সাধ্যমতো সাজিয়ে তুলি অন্যদের। নিজেও সেজেগুজে থাকতেই ভালবাসি। আর তাই এবার ওঁদের অন্তত একদিনের জন্য হলেও সাজানোর ইচ্ছে হয়েছিল আমার। সেখান থেকেই এই উদ্যোগ।’

সন্তোষপুরের মর্নিং গ্লোরি ইন্টিগ্রেটেড স্কুলের ছাত্রী এই অটিজম আক্রান্ত তরুণীরা। তাঁদেরকেই সাজিয়েছেন সায়ন্তন। তাঁর কথায়, ‘আমার আর কতটুকুই বা সাধ্য। তাও মনে হয়েছিল ওঁদের মেকওভার করতে পারলে আমার একটা দারুণ পাওনা হবে। ঠিক সেটাই হয়েছে। আমি তো আনন্দ পেয়েছিই। আর ওঁরা যে ঠিক কীভাবে নিজেদের আনন্দ প্রকাশ করেছে, সেটা ভাষায় বর্ণনা করা বেশ মুশকিল।’

সায়ন্তন জানিয়েছেন, ওঁরা একটা জটিল রোগের শিকার ঠিকই। কিন্তু বিবেচনা বোধ হয়তো অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের থেকে অনেক বেশি। শুধু সাজগোজ নয়, দৈনন্দিন জীবনের অনেক খুঁটিনাটিই ওঁরা আমার-আপনার থেকে অনেক বেশি বোঝে।

স্যাঁলোতে এসে সেজে কী বলছেন এই তরুণীরা? সায়ন্তনের কথায়, ‘কেউ আমায় জিজ্ঞেস করেছে আজ কি আমার বিয়ে? কেউ বা জিজ্ঞেস করেছে কেন সাজানো হচ্ছে ওঁদের?’ সুন্দর পোশাক, ছিমছাম মেকআপ, সামান্য যত্নেই কী যে খুশি হয়েছেন ওঁরা সকলে, বলে বোঝাতে পারব না।’

একথা ধ্রুব সত্য যে বছরে একটা নির্দিষ্ট দিন নারীদের সম্মানার্থে রাখাই যথেষ্ট নয়। তবে সেই সঙ্গে এটাও ঠিক যে বছরের একটা দিন অন্তত নারীদের ‘স্পেশ্যাল ফিল’ করানোর উদ্যোগ নেহাত মন্দ বিষয় নয়। সেই চেষ্টাটুকুই করেছেন সায়ন্তন।
Published at : 08 Mar 2025 12:10 PM (IST)
Tags :
International Women’s Day Autism
আরও জানুন লাইফস্টাইল-এর
আরও দেখুন