জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: মধ্যপ্রদেশের এক কিশোর ‘ওয়্যারউলফ সিনড্রোম’ নামক এক বিরল রোগে আক্রান্ত। এই কারণে সারাজীবন সে উপহাসের শিকার হয়েছে। এই রোগের কারণে তার সারা শরীরে অতিরিক্ত লোম গজায়। ছোট নন্দলেটা গ্রামের আঠেরো বছর বয়সী ললিত পাতিদার মাত্র ৬ বছর বয়সে এই বিরল রোগাক্রান্ত হয়। চিকিৎসা ভাষায় একে হাইপারট্রাইকোসিস বলা হয়। বর্তমানে কিশোরটির বেশ কয়েকটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়েছে এবং দেখা যাচ্ছে তাঁর মুখ এবং হাত সম্পূর্ণরূপে চুলে ঢাকা।
আরও পড়ুন: Mysterious Disease: কাশি, বুকে ব্যথা তারপর মৃত্যু! রহস্যময় রোগে মৃত ১৩, ছত্তিশগড়ে আতঙ্ক…
জানা যাচ্ছে তার সহপাঠীরা একসময়ে তাকে দেখিয়ে সকলকে ভয় দেখিয়েছেন। তাঁরা বলছেন তিনি তাঁদেরকে কামড় দেবেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, তাঁর এই অবস্থার কারণে তাঁকে তাঁর স্কুল ও বাড়ির আশেপাশের সকল লোক তাঁকে ‘বানরমানব’ বলেন।
বর্তমানে জানা যাচ্ছে, ললিতের পশমের মতো লোমের জন্য সম্প্রতি ইতালির মিলান থেকে ডাক পান এবং সেখানে তাঁকে সম্মানিতও করেন সকলে। তাঁর নাম উঠেছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে।
আরও পড়ুন: BJP MP Tejasvi Surya Wedding: বিয়ের পিঁড়িতে বিজেপির তরুণ সাংসদ তেজস্বী সূর্য, পাত্রী প্রখ্যাত গায়িকা…
ললিত বলেছেন, ‘আমি একটি সাধারণ পরিবার থেকে এসেছি, আমার বাবা একজন কৃষক, আমি আমার বাবাকে কৃষিকাজে সাহায্য করি। আমার সারা জীবন এই রকম চুলই ছিল, আমার বাবা-মা বলেন, ডাক্তার জন্মের সময় আমার চুল কামিয়ে দিয়েছিলেন। আমি ছয় বা সাত বছর বয়স পর্যন্ত আমার মধ্যে কোনও পরিবর্তন লক্ষ্য করিনি। তারপর করেই আমি লক্ষ্য করি আমার সারা শরীরে চুল গজাচ্ছে। সবথেকে বড় কথা আমার বন্ধুরা আমাকে আগে ভয় পেত কিন্তু যখন তারা আমাকে চিনতে শুরু করে এবং আমার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে তখন তারা বুঝতে পারে যে আমি তাদের থেকে খুব একটা আলাদা নই, কেবল বাইরে থেকে আমায় আলাদা দেখতে হলেও আমি ওদেরই মতো।’
ললিত বলেন, এই রোগের কোনও প্রতিকার নেই এবং তিনি বলেন, ‘এর সঙ্গেই বাঁচতে শিখে গেছি’। আরও বলেন, ছোটবেলায় তাঁর সহপাঠীরা তাঁকে পাথর ছুঁড়ে মারত, তাঁরা বলত যে সে এক ধরণের পৌরাণিক প্রাণী।
হাইপারট্রাইকোসিস কী?
মার্কিন ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন অনুসারে , হাইপারট্রাইকোসিসের ফলে পুরুষ বা মহিলাদের শরীরের যেকোনও স্থানে অতিরিক্ত চুল গজাতে শুরু হয়। এটি অত্যন্ত বিরল একটি রোগ। এই রোগাক্রান্ত মানুষেরা জন্মগতভাবেই এই রোগ নিয়ে জান্মান। মানুষের শরীরে অতিরিক্ত চুল গজালে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে মানসিক চাপেরও সৃষ্টি হয়।
Zee ২৪ ঘণ্টার সব খবরের আপডেটে চোখ রাখুন। ফলো করুন Google News
মধ্যযুগ থেকে এই রোগটিতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা মাত্র ৫০। চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে শুধুই রয়েছে প্রসাধনী। তা ছাড়া, লেজারের সাহায্যে চুল কাটা, ডিপিলেটরি ক্রিম ব্যবহার এবং ইলেক্ট্রোলাইসিস ব্যবহার করে অবাঞ্ছিত লোম কাটা হয়। এছাড়া এই রোগের জন্য আর তেমন কোনই চিকিৎসা নেই।
ললিত একটি ইউটিউব চ্যানেল চালান সেখানে তিনি তাঁর দৈনন্দিন জীবনের সকল কাজ তুলে ধরেন। জানা যাচ্ছে তিনি সম্প্রতি ইতালির মিলানে ভ্রমণ করেছিল এবং একটি টিভি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন। আনুষ্ঠানিক করার আগে তার মুখের চুল পরিমাপ করা হয়েছিল। স্থানীয় একজন ট্রাইকোলজিস্ট তার মুখের চুল পরিমাপ করার জন্য তার মুখের ছোট ছোট অংশ কামিয়েছিলেন।
ললিত বলেছেন, ‘আমি নির্বাক, আমি কী বলব বুঝতে পারছি না কারণ এই স্বীকৃতিটা পেয়ে আমি খুবই খুশি। যাঁরা আমাকে আমার মুখের চুল কামিয়ে দিতে চান তাঁদেরকে আমার বলার মতো কোনও ভাষা নেই। আমি তাদের বলতে চাই আমি আমার নিজের চেহারা পছন্দ করি এবং আমি আমার চেহারা পরিবর্তনও করতে চাই না।’
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)