সপ্তাহের শুরুতেই বড় পতন শেয়ার বাজারে, ১০ লক্ষ কোটি খোয়ালেন বিনিয়োগকারীরা? কেন এই ধস?
নয়া দিল্লি: সামনেই বাজেট। অথচ তার আগে সপ্তাহের শুরুতেই শেয়ার বাজারে ধাক্কা। বিরামহীনভাবে পতন সেনসেক্সের। সোমবার মার্কেট খুলতেই একধাক্কায় ৮০০ পয়েন্ট নামল সেনসেক্স। Nifty 50 নামল ২২,৮০০-তে। শুধু তাই নয়, বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের (BSE Midcap index) মিডক্যাপ এবং স্মল ক্যাপের সেগমেন্টেও বড় পতন লক্ষ্য করা যায় এদিন। বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত স্টকগুলির বাজার মূলধন ৪১০ লক্ষ কোটি টাকায় নেমে এসেছে, যা আগের সেশনে ৪১৯.৫ লক্ষ কোটি টাকা ছিল। হিসেব করলে দেখা যাচ্ছে, এর ফলে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় ১০ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।
এমনকী দুপুরেও সেনসেক্স এবং নিফটি উভয়েরই কমছে বাজারদর। সোমবার বিএসই সেনসেক্স পৌঁছেছে ৭৬,২৫০ -এ। অন্যদিকে নিফটি রয়েছে ২৩,০৪৭ পয়েন্টে।
কিন্তু বাজেট পেশের আগে কেন এই হাল দেশের শেয়ার বাজারে?
ওয়াকিবহাল মহলের মতে মার্কেটের এই পরিস্থিতির নেপথ্যে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। লাইভ মিন্টে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী-
১। লক্ষ্য বাজেট
বর্তমানে চলতি বছরের বাজেটে নজর রাখছেন বিনিয়োগকারীরা। বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে বাজেটকে ‘জনমোহিনী বাজেট’ করার দিকে নজর দেয় মোদি সরকার তাহলে আরও দাম কমতে পারে ভারতীয় মুদ্রার। এর ফলে রাজকোষ ঘাটতি যেমন বাড়তে পারে তেমন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও থমকাতে পারে। বাজার মনোভাব দুর্বল হতে পারে। এই আশঙ্কার প্রভাব শেয়ার বাজারে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
২। শেষ ত্রৈমাসিকে উপার্জনে ঘাটতি
বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, চলতি অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকে বাজারে উপার্জন ঘাটতি রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মার্কেটে ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগে বেশ কিছুটা অনীহা দেখা দিয়েছিল। যার জেরে বেশ কিছু সেক্টরে শেষ ত্রৈমাসিকে আয় কমেছে অনেকটাই। এক্ষেত্রে অবশ্য শুধু দেশে নয়, বিশ্বের বাজারেই এই আর্থিক অনিশ্চয়তা রয়েছে।
৩। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির প্রবণতা বৃদ্ধি
শেয়ার বাজারে গত বছরে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভারতীয় শেয়ার বিক্রির প্রবণতা বেড়েছে অনেকটাই। গত বছরের অক্টোবর থেকে ভারতীয় শেয়ার বিক্রি করেছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। যেখানে মার্কেট থেকে প্রায় ২.৫ লক্ষ কোটি লোকসান হয়েছে। গত বছরের শেষে দেখা যাচ্ছে শুধু ডিসেম্বরেই ১৬ হাজার ৯৮২ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি হয়েছে। এর পাশাপাশি কর্পোরেট আয় কমছে। অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। যার জেরে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা উদ্বেগে রয়েছে। সেই প্রভাব পড়েছে মার্কেটে।
৪। মার্কিনী ‘ফেড-ফ্যাক্টর’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটি (FOMC) ২৮ এবং ২৯ জানুয়ারি একটি বৈঠক রেখেছে। সেই বৈঠকের সারমর্ম মোতাবেক বাজারে এর প্রভাব পড়তে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ফেডারেল হার হল- ফেডারেল তহবিলের হার। ফেড দ্বারা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার সুদের হার, যেখানে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি ধার করে এবং একে অপরকে তাদের অতিরিক্ত রিজার্ভটি ধার দেয়। ২০২৪ সালে মার্কিন ফেড সুদের হার অনেকটাই কমিয়েছে। অর্থনৈতিক স্থিতাবস্থা বজা রাখতে সেই সুদের হার অপরিবর্তিত রাখা হয় কি না সেদিকে নজর রয়েছে।
৫। ট্রাম্পের শুল্ক নীতি নিয়ে উদ্বেগ
বিশ্বব্যাপী বাজারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক শুল্ক নীতিও বাজার ধসে নেপথ্যে রয়েছে। কানাডা এবং মেক্সিকোতে শুল্ক আরোপ করার পর ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি- সব মিলিয়ে আর্থিক ক্ষেত্রকে বেশ কিছুটা অস্থির করেছে। এছাড়াও ভারত সহ একাধিক দেশের উপর অতিরিক্ত শুল্ক হুঁশিয়ারি ভারতের বাজারকে বেশ কিছুটা টালমাটাল করে তুলেছে।
কেন্দ্রীয় বাজেট এই দুরাবস্থাকে কাটিয়ে শেয়ার বাজারকে আশার আলো দেখাতে পারে কি না সেদিকেই তাকিয়ে ওয়াকিবহাল মহল।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে
আরও দেখুন