জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ‘চক দে ইন্ডিয়া’! বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ফের রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ! গতবছর জুনে ভারত জিতেছিল টি-২০ বিশ্বকাপ (ICC Men’s T20 World Cup 2024)। আট মাসে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ভারতের মুকুটে আইসিসি-র ট্রফি। রবিবার নিউ জ়িল্যান্ডকে হারিয়ে এক যুগ পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (Champions Trophy 2025) জিতল ভারত। ২০০২ সালে ভারত প্রথমবার শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যুগ্ম ভাবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিল। এরপর ২০১৩ সালে এমএস ধোনির (MS Dhoni) নেতৃত্বে এই ট্রফি জেতে টিম ইন্ডিয়া।
রবিবার টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নয়। এদিনও কয়েন টসে রোহিতের ভাগ্য আর ফিরল না! টানা ১২ বার টস হারলেন ভারত অধিনায়ক। কিংবদন্তি ব্রায়ান লারার পাশে বসলেন রোহিত। ১৯৯৮ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত লারা টানা টস হেরেছিলেন। চলতি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ভারত চারটি টসে হারলেও, প্রতিবার ম্যাচেই জিতেছে। টসের ক্ষেত্রে ভাগ্য রোহিতের সঙ্গ না দিলেও জয়ের ভাগ্য রোহিতেরই রয়েছে, দেখা যাক ফাইনালে কী হয়!
উইল ইয়ং ও রাচিন রবীন্দ্র বিধ্বংসী মেজাজে শুরু করেছিলেন। ৮ ওভারের ভিতর তাঁরা ৫৭ রান তুলে ফেলেছিলেন। এক সময়ে মনে হচ্ছিল দুই ওপেনারকে থামাতে না পারলে প্রলয় আসতে পারে। কিন্তু না, চলতি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের সেরা যোদ্ধা সেই বরুণ চক্রবর্তী এসেই ইয়ংকে (২৩ বলে ১৫) ফেরান। এরপর রাচিন (২৯ বলে ৩৭) ও কেন উইলায়মসনের (১৪ বলে ১১) উইকেট পরপর তুলে নিয়ে ভারতের মুখে হাসি ফোটান কুলদীপ যাদব।
চারে নামা ড্যারেল মিচেল ঠিক করে নিয়েছিলেন যে, তিনি প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিয়ে লড়বেন। তবে তাঁর হাত শক্ত করতে এসে পাঁচে নামা টম ল্যাথাম ৩০ বলে ১৪ রান করে আউট হয়ে যান। রবীন্দ্র জাদেজার বলে এলবিডব্লিউ আউট হয়ে যান তিনি। ধুঁকতে থাকা দলকে অক্সিজেন দেওয়া মিচেল ১০১ বলে ৬৩ রানের সংযমী ও গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে ফেরেন। ৪৬ নম্বর ওভারে মহম্মদ শামির স্লোয়ারে কভারের উপর লোপ্পা ক্যাচ তুলে দেন রোহিতের হাতে।
যথাক্রমে ছয়ে ও সাতে নামা গ্লেন ফিলিপস (৫২ বলে ৩৪) ও মাইকেল ব্রেসওয়েল ( ৪০ বলে ৫৩) শেষ পর্যন্ত রানের গতি বজায় রাখার চেষ্টা করেন। বোলারদের হাতযশে ভারত শেষপর্যন্ত কিউয়িদের ৫০ ওভারে ২৫১/৭ রানে বেঁধে রাখতে সমর্থ হয়। এদিন বরুণ-কুলদীপ দুই উইকেট করে নিয়েছেন। এক উইকেট শামি-জাদেজার ঝুলিতে। তবে ফাইনালে ভারত যদি ভূরি ভূরি ক্যাচ নষ্ট না করত, তাহলে কিউয়িরা ১৫০ রান করতে পারত কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ আছে!
রান তাড়া করতে নেমে ভারতের হয়ে শুরুটা দুরন্ত মেজাজে করেছিলেন দুই ওপেনার শুভমন গিল ও রোহিত শর্মা। রণংদেহী মেজাজে ছিলেন রোহিত, শুভমন কিছুটা ধরে খেলছিলেন। এই জুটির হাত ধরে ১০৫ রান ওঠে স্কোরবোর্ডে। ১৮.৪ ওভারে কিউয়ি অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনারের বলে শুভমন এক্সট্রা কভার দিয়ে উড়িয়ে মেরেছিলেন, শুভমন ভুলে গিয়েছিলেন যে, ওখানে মোতায়েন রয়েছেন গ্লেন ফিলিপস, যথারীতি উড়ে গিয়ে ‘ফ্লাইং ফিলিপস’ অবিশ্বাস্য ক্যাচ নেন! চলতি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মহম্মদ রিজওয়ান, বিরাট কোহলির ক্যাচও তিনি ঠিক এভাবেই নিয়েছিলেন। এদিন ফিলিপসের জায়গায় অন্য যে কেউ থাকলে শুভমন আউট হতেন না, চারই পেতেন।
এরপর রোহিতের হাত শক্ত করতে এসেছিলেন বিরাট কোহলি! বড় মঞ্চে জ্বলে ওঠা যাঁর স্বভাবজাত, সেই কোহলি এদিন ব্রেসওয়েলের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে মাত্র ১ রানে ফিরে যান। যদিও কোহলির মনে হয়েছিল যে, তিনি আউট নন! ফলে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিআরএস নেন, কিন্তু টিভি আম্পায়ার জানিয়ে দেন যে, তিনি অনফিল্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের সঙ্গেই একমত! এরপর রোহিতের সঙ্গী হয়েছিলেন শ্রেয়স আইয়ার। তবে শ্রেয়সকে রেখে রোহিত ৮৩ বলে ৭৬ রানের (৭টি চার ও ৩টি ছয়) অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলে আউট হয়ে যান। রাচিন রবীন্দ্রর বলে স্টেপআউট করে মারতে গিয়েছিলেন, কিন্তু ফ্লাইট মিস করতেই ল্যাথাম সঙ্গে সঙ্গে স্টাম্প করে দেন রোহিতকে।
তিন উইকেট হারিয়ে ভারত কিছুটা চাপে পড়ে গিয়েছিল। তবে অক্ষর প্যাটেল ও শ্রেয়স ঠিক করেছিলেন যে, এই ধাক্কা সামলে দলকে জেতার রাস্তায় নিয়ে যেতে হলে, স্ট্রাইক রোটেট করতে হবে সিঙ্গল নিয়ে ধরে ধরে খেলে! প্রয়োজনে চালানো যাবে। একে তে স্পিন সহায়ক পিচ, বল আসছে কিছুটা থেমে। সঙ্গে দোসর কিউয়িদের অসাধারণ ফিল্ডিং। অবধারিত চারও রুখে দিচ্ছিলেন তাঁরা। সবাই যেন ফাইনালে ফিলিপস হয়ে উঠেছিলেন। শ্রেয়স-অক্ষর জুটি ৬১ রান যোগ করেন। সেই স্যান্টনারের বলে শ্রেয়স ক্যাচ তুলে দেন। ৬২ বলে ৪৮ রান করে আউট হন তিনি। এরপর অক্ষরের সঙ্গী হন কেএল রাহুল। কিন্তু রাহুলকে রেখে অক্ষর ফিরে যান! ও’রুরকের বলে তুলে মারতে গিয়ে ব্রেসওয়েলের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। ৪০ বলে ২৯ রান করে ফেরেন ‘বাপু’। এরপর হার্দিক ১৮ বলে ১৮ রান করে আউট হয়ে যান। তখন ভারতের জয়ের জন্য ১৫ বলে ১১ রান দরকার ছিল। তখনও ভারতীয় বুক দুরুদুরু করছিল। এরপর রবীন্দ্র জাদেজা আসেন ক্রিজে।
২০০০ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালেও মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-নিউ জ়িল্যান্ড। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের টিম মুখোমুখি হয়েছিল স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের দলের। অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সেঞ্চুরিতে ভর করে ভারত ৬ উইকেটে ২৬৪ রান তুলেছিল। জবাবে কিউয়িরা ২ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটে ফাইনাল জিতে নেয়। নাইরোবির জিমখানা ক্লাব গ্রাউন্ডে হৃদয় ভেঙেছিল ভারতবাসীর।
২৫ বছর পর সৌরভের বকেয়া বদলা নিলেন রোহিত…