‘BSF-এর পাহারাদারির প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই’ মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যানের
সমীরণ পাল, বনগাঁ: মুখ্যমন্ত্রীর পর এবার তৃণমূলের পুরপ্রধান। ফের রাজ্যের শাসক শিবিরের নিশানায় BSF. অনুপ্রবেশ রুখতে নিষ্ক্রিয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী। বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া বনগাঁয় BSF-এর পাহারাদারির প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোটুকু পর্যন্ত নেই। এই অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন তৃণমূল পরিচালিত বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান। পাল্টা জবাব দিয়েছে বিজেপিও। BSF সূত্রে দাবি, সর্বত্র কড়া নজরদারি চলছে।
একদিকে জঙ্গি অনুপ্রবেশ আরেকদিকে, সীমান্তে বিনা প্ররোচনায় বিদ্বেষ-বিষে জর্জরিত বাংলাদেশের উস্কানি। যেখানেই খোলা সীমান্ত, সেখানেই BSF-কে কাঁটাতারের বেড়া দিতে বাধা। রাজ্যের সীমান্তপারের সাধারণ গ্রামবাসীরাই যখন BSF-এর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলার চেষ্টা করছেন, এই রকম একটা আবহে ফের রাজ্যের শাসকদলের চাঁদমারিতে চলে এল BSF। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া বনগাঁ শহরের পুর চেয়ারম্যান ও তৃণমূল নেতা গোপাল শেঠ। বনগাঁ পুরসভার প্যাডে লেখা ওই চিঠিতে রাজ্যে অনুপ্রবেশের জন্য BSF-এর নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তৃণমূলের পুর চেয়ারম্যান অভিযোগ করেছেন, বনগাঁ শহর লাগোয়া ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ ঘটছে। BSF পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় এবং কিছু ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত হতাশাজনক। বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা BSF-এর এই নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়েই এলাকায় সক্রিয়তা বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে চিঠিতে। বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া বনগাঁ মহকুমায় BSF-এর পরিকাঠামোগত খামতির অভিযোগ তুলেও মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে কেন্দ্রকে নিশানা করেছেন তৃণমূলের পুর চেয়ারম্যান।
মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে গোপাল শেঠ জানিয়েছেন, বনগাঁ মহকুমায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ। তার মধ্যে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত এখনও অরক্ষিত, যেখানে কাঁটাতার নেই। তৃণমূলের পুর চেয়ারম্যানের অভিযোগ, এই বিশাল এলাকার পাহারায় মাত্র ৪ ব্যাটালিয়ন BSF মোতায়েন রাখা হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম। BSF-এর বহু আউটপোস্টে সিসি ক্যামেরা পর্যন্ত নেই বলে অভিযোগ করা হয়েছে চিঠিতে। গোপাল শেঠ বলেন, “বর্ডারে BSF-এর যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, এখানে যারা পাহারারত আছে, তারা সেখানে অপর্যাপ্ত। তারা সঠিক ভাবে এখানে গার্ড দিতে পারছে না। বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশি মৌলবাদী এবং BGB, তারা বিভিন্নভাবে আমাদেরকে চক্রান্ত করে, উত্যক্ত করার চেষ্টা করছে। ফেন্সিং কিছুটা জলের মধ্যে রয়েছে, যেটা কেন্দ্রীয় সরকারের আওতায়, সেই জায়গাটায় ফেন্সিং করতে পারেনি। যে জায়গাগুলো রাজ্য সরকার দিয়েছে, সেই জায়গাগুলো ফেন্সিং না করার ফলে, এখন উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।”
পাল্টা জবাব দিয়েছে বিজেপি। বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডল বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, যিনি ওঁর (গোপাল শেঠ) দিদি, সেই দিদি আজকে জমি দিচ্ছে না। সেই জমি না দেওয়ার কারণে ওখানে ফেন্সিং দিতে পারছে না। ফেন্সিংটা নেই বলে আজ বিভিন্ন জায়গা দিয়ে উগ্রপন্থী ঢুকে এই পশ্চিমবঙ্গে জেহাদিদের আঁতুরঘর করেছে এবং উনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) জমি দিচ্ছেন না এই কারণে, জমিটা দিলে ফেন্সিং হবে। আর ফেন্সিংটা যদি না হয়, ওঁর ভোটব্যাঙ্ক। ওপার থেকে এসে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড করে ভোটটা দিতে পারবে।”
যদিও BSF সূত্রে দাবি, সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় সর্বত্র কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ইস্যুতে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনস্থ BSF-এর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই আক্রমণের পরে পরেই বনগাঁর পুর চেয়ারম্যানের অভিযোগ বিতর্কে নতুন মাত্রা জুগিয়েছে। এর আগে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “এখানে গুন্ডা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বর্ডার দিয়ে খুন করছে চলে যাচ্ছে এইরকম লোক পাঠানো হচ্ছে। এটা বিএসএফর অনেক ভিতরকার কাজ। এতে কেন্দ্রীয় সরকারের একটা ব্লু প্রিন্ট আছে। বাংলাকে যদি মনে করে কেউ অনুপ্রবেশকারীদের ঢুকিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে বদনাম করব, এটা তৃণমূল কংগ্রেস করে না।”
আরও পড়ুন: RG Kar Notification Controversy: নিষেধাজ্ঞার পরও ওষুধ ব্যবহার! আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের বিজ্ঞপ্তি ঘিরে বিতর্ক
আরও দেখুন