সেলিম রেজা, ঢাকা: প্যালেস্টাইনে ইজরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশে বিক্ষোভ মিছিল করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা। বিশ্বের সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করে সোমবার থেকে এ কর্মসূচি পালন করছে তারা। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে ‘গাজা বাঁচাও’, ‘ইজরায়েলের গণহত্যা বন্ধ কর’, ‘ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার চাই’—এমন নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
ঢাকায় বিক্ষোভে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের পাশাপাশি অংশ নিয়েছেন শিক্ষার্থীরাও। এর মধ্যে একটি মিছিলে অংশ নেওয়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্টারটেকের এক কর্মী বলেন, দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা আজ রাস্তায় নেমেছি। গাজায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী যেভাবে সাধারণ মানুষের ওপর নৃশংস হামলা চালাচ্ছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি আরও বলেন, শিশু, নারী ও নিরীহ মানুষদের ওপর ইজরায়েলি হামলা আজ মানবতাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। অথচ বিশ্ব আজ নিশ্চুপ। কোথায় গেল সেই মানবতা, কোথায় গেল নৈতিকতা?
সোমবার বেলা ১টা ২৫ মিনিটের দিকে একটি মিছিল নিয়ে ঢাকার সায়েন্সল্যাব এলাকায় আসেন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী গাজায় নির্মমভাবে মানুষকে হত্যা করছে। তাদের এই হত্যাযজ্ঞ দেখে বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষার্থী ক্ষুব্ধ এবং ব্যথিত। তারা চান দ্রুত যেন বিশ্ববাসী এ গণহত্যা বন্ধ করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। বেলা ১ টার পর থেকে প্যালেস্টাইনের পতাকা হাতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে সাধারণ মানুষ। এ সময় তাদের কণ্ঠে শোনা যায় ‘ইজরায়েলের কালো হাত, ভেঙ্গে দাও-গুঁড়িয়ে দাও’, ‘সারা বিশ্বের মুসলমান, লড়াই করো-লড়াই করো’ ‘ইসরায়েলের ঠিকানা, এই দুনিয়ায় হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান।
আরও পড়ুন-চাকরিহারাকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক, ‘সুপ্রিম’ দ্বারস্থ পর্ষদ!
শুধু রাজধানী ঢাকা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানেই আজ বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হচ্ছে গাজায় ইজরায়েলের আগ্রাসনের প্রতিবাদে। এর মধ্যে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল নিয়ে বায়তুল মোকাররমে মোড়ে জড়ো হন হাজারো জনতা। এসময় ওই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জরুরি সেবা ছাড়া সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট বন্ধ ছিল। এ কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
আরও পড়ুন-‘সুপ্রিম’ রায়ে ‘চাকরি-জট’, দ্রুত আইনি সমাধানে টাস্ক ফোর্স গড়লেন মমতা!
মূলত, প্যালেস্টাইনের অবরুদ্ধ গাজায় সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর থেকে আবারও অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রতিদিনই যেন বাড়ছে হামলার তীব্রতা। দখলদার বাহিনীর নির্বিচার এসব হামলায় গাজায় দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। এ অবস্থায় গত ৬ এপ্রিল গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ঘোষণা দেয় ফিলিস্তিনি ন্যাশনাল এবং ইসলামিক ফোর্সেস গ্রুপ। কর্মসূচির নাম দেওয়া হয় ‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’। দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সূত্রপাতের পরপরই ইয়াসির আরাফাতের অনুমোদনে এবং মারওয়ান বারগুতির নেতৃত্বে গঠিত একটি জোট হল এই ফিলিস্তিনি ন্যাশনাল এবং ইসলামিক ফোর্সেস গ্রুপ। তাদের বৈশ্বিক এ ধর্মঘটের ডাকে সাড়া দিয়েই আজ সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। কর্মসূচিতে একাত্ম হচ্ছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষও।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)