<p><strong>সুনীত হালদার, উদয়নারায়ণপুর :</strong> "চাষির মরে যাওয়ার চিন্তা হচ্ছে। কী করে বাঁচব ? এতগুলো টাকা খরচ করে আলু চাষ করেছি।" এভাবেই আক্ষেপ ঝড়ে পড়ল হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের চাষি সরোজ চোঙদারের গলায়। ডিভিসির ছাড়া জলে ‘অকাল বন্যা’ হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে। যার জেরে আলু চাষে ব্যাপক ক্ষতির মুখে চাষিরা। কার্যত তাঁরা এখন নাওয়া-খাওয়া ভুলতে বসেছেন! কেউ ধার করে, কেউ জমানো টাকা ভেঙে আলু চাষ করেছিলেন। কিন্তু, নদীর বাঁধ ভেঙে হাওড়া এবং হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে। তার জেরে অসহায় অবস্থা এখন বহু চাষির। যদিও আজ নতুন করে আর সেভাবে জল না ঢুকলেও, জমা জল ক্রমশ নীচের দিকে দক্ষিণ উদয়নারায়ণপুরের আরও দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের কিছু কিছু জমি প্লাবিত করছে। মানশ্রী গ্রাম পঞ্চায়েতের কিছু জমি ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে এবং ভবানীপুর সোনাতলা গ্রাম পঞ্চায়েতেও কিছু জমিরও প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে, নতুন করে আরও ৫০০ থেকে ৭০০ বিঘা জমি প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।</p>
<p><strong>যা ঘটল…</strong></p>
<p>চাষের জন্য ছাড়া ডিভিসির জলের চাপে গত শনিবার হুগলির বলাইচক এলাকায় চিংড়া খালের বাঁধ ভেঙে হু হু করে জল ঢুকতে শুরু করে। হুগলির কিছু অংশ ভাসায় এবং তারপর সেই জল হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে ঢুকে আলুর খেত নষ্ট করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে ৭০০ বিঘা জমির আলু নষ্ট হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন চাষিরা। এই পরিস্থিতিতে সোমবার থেকে হুগলির বলাইচকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বাঁধ মেরামতির কাজ চলছে। ফলে, নতুন করে প্লাবনের আশঙ্কা কমেছে। কিন্তু যে জলটা উদয়নারায়ণপুরে জমে ছিল সেই জল ক্রমশ নীচের দিকে নামছে।</p>
<p>এ প্রসঙ্গে সরোজ চোঙদার নামে স্থানীয় এক চাষি বলেন, "কাল থেকে জল বাড়া আছে। যখন চাষের সময় তখন জল দিল না, এখন জল এত দিয়ে আলুগুলো সব নষ্ট করে দিচ্ছে। এখন জলটা কেন এত দিচ্ছে ? কাঁচা ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চাষির মরে যাওয়ার চিন্তা হচ্ছে। কী করে বাঁচব ? এতগুলো টাকা খরচ করে আলু চাষ করেছি, এতে আমরা কী করে বাঁচব ? কেউ কেউ লোন নিয়েছেন। সেই লোন কী করে শোধ করা যাবে ?" তাঁর অভিযোগ, ভালোভাবে বাঁধ বাঁধেনি। কোনওরকমে পাইলিং করে, বাঁশ দিলে কি থাকবে ওটা ? থাকবে না। ওটা প্রধান বাঁধ। আগে থাকতে মেন বাঁধ বেঁধে দিলে এই ঘটনা ঘটত না। গুরুত্ব দেয়নি বলেই এই অবস্থা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, "আমার জীবনে এই প্রথম দেখছি, আলু এরকম খেতে ডুবে যাচ্ছে। কাঁচা সবজি রয়েছে লোকের। অসময়ের বন্যা। আমাদের তো মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কী করব?"</p>
<p>অপর এক চাষি মনোজ খাঁড়া বলেন, "এর যে ক্ষতিপূরণ, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি, উদয়নপুরের মানশী মৌজায় যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা যেন একটু খতিয়ে দেখেন। এটুকু আমাদের আবেদন। সাধারণ মানুষ যেভাবে খরচ করেছেন, সেটা যেন পেয়ে যান। "</p>
<p>এনিয়ে উদয়নারায়ণপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কল্যাণ গায়েন বলেন, "ডিভিসির অতর্কিতে জল ছাড়া এবং সেচ দফতরের কাজ না হওয়ার ফলে দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩টি মৌজা ক্ষতিগ্রস্ত। জল আরও বেড়েছে। ফলে, ৭০০-৮০০ বিঘা আলু জমির ক্ষতি হয়েছে। ধান জমির আরও ক্ষতি হয়েছে। এলাকার যেসব চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সেই ক্ষতিটা কৃষি দফতরের মাধ্যমে বাংলার শস্যবিমা যোজনার মাধ্যমে, চাষিদের ন্যায্যমূল্যের আলু যাতে নেওয়া হয় সেই দাবিটা চাষিদের পক্ষ থেকে উঠে আসছে। প্রচুর পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে চাষিদের। প্রকৃত যাঁদের ক্ষতি হয়েছে তাঁদের নিয়ে অ্যাসেসমেন্ট করে, তাঁরাই আলু দিয়ে ন্যায্য মূল্য পাক। এটাই বলার। কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের নাম নথিভুক্ত করা যায়, তারজন্য আমরা কৃষি দফতর, ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। চাষিদের পাশে কীভাবে দাঁড়ানো যায়, সেটা বিধায়ক সাহেবের সঙ্গে কথা বলে চেষ্টা করছি।"</p>
Source link
‘মরে যাওয়ার চিন্তা হচ্ছে, কী করে বাঁচব ?’, ডিভিসির ছাড়া জলে ‘অকাল বন্যা’; মাথায় হাত চাষিদের
