জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ ভারতীয়দের স্বাস্থ্য এবং ফিটনেস নিয়ে ধারণাকে অনেক বদলে দিয়েছে। কারণ, স্বামী রামদেব আয়ুর্বেদকে আধুনিক বিজ্ঞান সঙ্গে মিশিয়ে সারা পৃথিবীতে পরিচিত করেছেন। এর ফলে বড় বড় বিদেশি কোম্পানিগুলোকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। ২০০৬ সালে বাবা রামদেব এবং আচার্য বালকৃষ্ণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত পতঞ্জলি, আজ ভারতের কোটি কোটি টাকার ব্যবসা দাঁড় করিয়েছে। কিন্তু পতঞ্জলি আয়ুর্বেদকে বাঁচানোর এবং আধুনিক যুগের উপযোগী করে তোলার মধ্যে কী ভূমিকা রেখেছে, তা হয়তো আপনি পুরোপুরি জানেন না। তাহলে আসুন, একসঙ্গে বুঝে নেওয়া যাক।
Zee ২৪ ঘণ্টার সব খবরের আপডেটে চোখ রাখুন। ফলো করুন Google News
পতঞ্জলি মানুষের জীবনধারা পরিবর্তন করেছে। যখন পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ শুরু হয়েছিল, প্রথমে “দ্বিব্য ফার্মেসি” নামে শুধুমাত্র আয়ুর্বেদিক ঔষধই বিক্রি করা হত। তবে পরে পতঞ্জলি ব্র্যান্ডের অধীনে কোম্পানি টুথপেস্ট, শ্যাম্পু, সাবান এবং অন্যান্য দৈনন্দিন ব্যবহৃত পণ্যও বাজারে আনে। এর মধ্যে তাদের টুথপেস্ট “দন্তকান্তি” ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, এবং পতঞ্জলি পণ্যটির হিরো প্রোডাক্ট হয়ে যায়। পতঞ্জলি পণ্যগুলি এত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে বাজারে আগে থেকেই থাকা বেশিরভাগ টুথপেস্টের বিক্রিও কমে যায়। এই পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর হয়ে যায় যে বড় বড় কোম্পানিগুলোকে তাদের নিজস্ব বিখ্যাত ব্র্যান্ডের “আয়ুর্বেদিক ভার্সন” বাজারে আনতে বাধ্য হতে হয়। এর ফলে, পতঞ্জলি শুধু পণ্যই বিক্রি করেনি, বরং মানুষের জীবনে আয়ুর্বেদ ফিরিয়ে এনে তাদের জীবনধারাকেই বদলে দিয়েছে।
পতঞ্জলি কীভাবে মানুষের প্রিয় হয়ে উঠেছে। ভারতীয়রা সবসময়ই মশলা, শস্য এবং ঘরোয়া উপায়গুলির উপকারিতা জানত। আগে আয়ুর্বেদকে মানুষ শুধুমাত্র দাদি-নানীর ঘরোয়া উপায় বা পুরনো বৈদ্যদের পরামর্শ মনে করত। কিন্তু পতঞ্জলি তার উপর বিশ্বাস রাখল এবং মানুষকে বোঝালো যে তাদের পণ্যগুলি পুরোপুরি খাঁটি এবং আয়ুর্বেদিক পদ্ধতিতে তৈরি হচ্ছে। এমনকি বাবা রামদেব ভিডিওর মাধ্যমে মানুষের সামনে কোম্পানির ফ্যাক্টরির ভিতরে নিয়ে গিয়ে তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, যা মানুষের বিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া, পতঞ্জলি প্রচারের পুরনো পদ্ধতিও বদলে দিয়েছে। শুরুতে, কোম্পানি তাদের পণ্যগুলি মল বা সাধারণ দোকানে বিক্রি করত না, বরং বিশেষ কিছু জায়গায় “পতঞ্জলি স্টোর” খোলার মাধ্যমে বিক্রি শুরু করেছিল। এই দোকানে আয়ুর্বেদিক ডাক্তারদেরও রাখা হত, যারা মানুষের বিনামূল্যে চেকআপ করে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পরামর্শ দিত এবং পতঞ্জলি পণ্য ব্যবহারের পরামর্শ দিত।
পতঞ্জলি দেসি পণ্যের আধুনিক রূপ দিয়েছিল। আগে মানুষ আঁবলা এবং গিলয় ব্যবহার করতে অনেক সময় দ্বিধা করত, কিন্তু পতঞ্জলি এই উপাদানগুলিকে রেডি-টু-ড্রিঙ্ক জুস হিসেবে বাজারে এনেছিল। এতে মানুষের মধ্যে আয়ুর্বেদিক পণ্য কেনার আগ্রহ বেড়ে যায়, কারণ এখন তারা সহজে এবং কোনো ঝামেলা ছাড়া এগুলো ব্যবহার করতে পারতেন। এভাবে, অশ্বগন্ধা এবং ত্রিফলা মতো আয়ুর্বেদিক জड़ी-বুটিগুলিকে শুধু গুঁড়ো হিসেবে সীমাবদ্ধ না রেখে, আধুনিক পদ্ধতিতে ট্যাবলেট হিসেবে বাজারে এনেছিল। এতে মানুষের জন্য এগুলি ব্যবহার করা আরও সহজ হয়ে যায়। কোভিড সময়েও পতঞ্জলি ইমিউনিটি বুস্টার পণ্য বাজারে আনে, যা মানুষের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় আরও বিশ্বাস বাড়িয়েছে।
যোগ এবং আয়ুর্বেদকে কেন মানুষ দ্রুত গ্রহণ করেছে। বাবা রামদেব আগেই একজন বিখ্যাত “যোগগুরু” ছিলেন এবং যখন তার নাম পতঞ্জলির সঙ্গে যুক্ত হলো, তখন মানুষ কোনো সময় নষ্ট না করেই যোগ এবং আয়ুর্বেদ গ্রহণ করতে শুরু করে। যোগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যের বিশাল উপকারিতা আগে থেকেই ছিল। তবে বাবা রামদেব পতঞ্জলির মাধ্যমে আয়ুর্বেদকেও যোগের সাথে সংযুক্ত করে দিয়েছিলেন। এর ফলে, মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল যে যোগ এবং আয়ুর্বেদ একসাথে তাদের স্বাস্থ্য আরও উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। ধীরে ধীরে মানুষ এটিকে তাদের দৈনন্দিন জীবনে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছে। এ সময়ের মধ্যেই, সারা পৃথিবীতেও মানুষ যোগ এবং আয়ুর্বেদের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। জাতিসংঘ ২১ জুনকে “আন্তর্জাতিক যোগ দিবস” হিসেবে ঘোষণা করেছে, যার ফলে বিশ্বব্যাপী এটি পরিচিতি পায়। বিভিন্ন দেশে যোগ সম্পর্কিত বড় বড় ইভেন্ট আয়োজন হতে থাকে, এবং এর সরাসরি প্রভাব হিসেবে মানুষ যোগ এবং আয়ুর্বেদের প্রতি আরও আকৃষ্ট হতে শুরু করে। পতঞ্জলি, আয়ুর্বেদ এবং যোগের মাধ্যমে প্রাচীন ঐতিহ্যকে আধুনিক জীবনে ফিরিয়ে এনে কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনধারা উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে।
আরও পড়ুন: অস্ত্র নয়া আয়কর আইন, আপনার হোয়াটসঅ্যাপ আর মেইলে চালু সরকারি নজরদারি!
আরও পড়ুন: রিখটারে মাত্রা ৭.৭২! তীব্র ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল মায়ানমার, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি-প্রানহানির আশঙ্কা…
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)