‘রাজ্যের টাকাতেই হবে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’, প্রতিশ্রুতি মতো ৫০০ কোটি বরাদ্দ মমতার, দেব বললেন…

Estimated read time 1 min read
Listen to this article


কলকাতা: চর্চা চলে আসছে কয়েক যুগ ধরে। কিন্তু বাস্তবায়িত হয়নি আজও। রাজ্য রাজনীতিতে ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ তাই ‘হট টপিক’। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এবার সেই ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ নিয়ে বড় ঘোষণা করল মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সরকার। ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ বাস্তবায়িত করতে বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করল রাজ্য। তৃণমূলের তারকা সাংসদ দেব ওরফে দীপক অধিকারী ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ বাস্তবায়িত করার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। রাজ্যের ঘোষণায় তিনিও প্রতিক্রিয়া জানালেন। (Ghatal Master Plan)

বুধবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় রাজ্য সরকার বাজেট পেশ করেছে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এটিই মমতা সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। আর তাতে ঘাটালকে প্রাধান্য দিলেন মমতা। জানিয়ে দিলেন, ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ বাস্তবায়িত করতে প্রাথমিক ভাবে ৫০০ কোটি খরচ করবে তাঁর সরকার। বাজেট পেশের পর এদিন বিধানসভায় সাংবাদিক বৈঠক করেও ঘাটাল নিয়ে মুখ খোলেন মমতা। (West Bengal Budget 2025)

এদিন মমতা বলেন, “ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান। প্রতিবছর বন্যা হয়। হাওড়া ভাসে, হুগলি ভাসে, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর ভাসে। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে মোট ১৫০০ কোটি টাকা খরচ হবে। বলে বলেও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে কিছু পাইনি। এর মধ্যে ৫০০ কোটি ইতিমধ্যেই বরাদ্দ করে রেখেছি আমরা। ইতিমধ্যে খরচ হয়ে গিয়েছে ৩৪০ কোটি টাকা।”

ফি বছর বর্ষায় দুর্ভোগের অন্ত থাকে না ঘাটালবাসীর। তাই ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ বাস্তবায়িত হলে স্থানীয় মানুষ স্বস্তি পান। কিন্তু এর দায় বা দায়িত্ব কার, সেই নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপোড়েন চলে আসছে দীর্ঘকাল ধরে। এদিন ঘাটালের জন্য টাকা বরাদ্দ করায় তাই মমতাকে ধন্যবাদ জানান দেব। তিনি বলেন, “ঘাটালের দীর্ঘদিনের লড়াই। অনেকে হয়ত বেঁচেও নেই। কোনও দিন নিশ্চয়ই বাস্তবায়িত হবে বলে স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাঁদের লড়াই, প্রার্থনা, আশীর্বাদ… আমার কোথাও যে মনে হচ্ছে এবার সত্যি হতে চলেছে। জমি কমিটি তৈরি হয়ে গিয়েছে। পরিকল্পনার আওতায় যে যে জমি পড়ে, সমীক্ষা হয়েছে।”

  • ১৯৫৯ সালে নেহরু সরকারের তৈরি কমিটি বন্যা কবলিত ঘাটাল পরিদর্শন করে।
  • ১৯৭৯ সালে জনতা সরকারের আমলে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে অনুমোদন দেয় কেন্দ্র।
  • ১৯৮২ সালে ইন্দিরা গান্ধীর আমলে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পের শিলান্যাস হয়।
  • ২০০৯ সালে বাম আমলে প্রকল্প পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য।
  • ২০১৫-তে প্রকল্প রিপোর্টে সবুজ সঙ্কেত দেয় মোদি সরকার।
  • নতুন রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৪৭ কিলোমিটার নদী বাঁধ সংস্কার, নারায়ণী ও কাঁকি খালে দুটি স্লুইস গেট, পাম্প হাউস এবং ঘাটালে শীলাবতী নদীর ধারে গার্ডওয়াল বসানোর সিদ্ধান্ত হয়।
  • ঠিক হয়, কেন্দ্র ও রাজ্য ৫০ শতাংশ করে টাকা দেবে। তবে, তারপরে কাজ এগোয়নি। গতবছর রাজ্য সরকারের টাকায় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের ঘোষণা হয়। এবার ৫০০ কোটি বরাদ্দ হল।

‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ বাস্তবায়নে এই দেরি হওয়ার জন্য সরাসরি কেন্দ্রের দিকেই আঙুল তুলেছেন দেব। বর্তমান তৃণমূল সরকার থেকে পূর্বতন বাম সরকার, বার বার চেষ্টা করা হলেও, কেন্দ্রে বিষয়টি আটকে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। দেব বলেন, “আমরা যাঁরা এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত, জানি কাজ কত দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে। আজ দিদি বাজেটে সেটা ঘোষণা করলেন। আমার ভাল লাগছে। কারণ আমার স্বপ্ন ছিল। ২০১৪ থেকে সাল থেকে লড়াই করে গিয়েছি। কারণ ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের সবচেয়ে বড় দাবি ছিল বন্যা নিয়ন্ত্রণ। ১৯৫৮ থেকে কখনও এই সরকার, কখনও ওই সরকার, নানা রকম ভাবে কেন্দ্রের কাছে গেলেও আটকে ছিল। আমি নিজেও অনেক বার চেষ্টা করেছি।”

চার দশক আগেই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের সুপারিশ এসেছিল। কিন্তু আজও তার বাস্তবায়ন হয়নি। বন্যা পরিস্থিতি এলে এবং নির্বাচনের সময় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কথা মুখে মুখে ফেরে। ঘাটাল থেকে নির্বাচিত হওয়ার পর গোড়া থেকেই এ নিয়ে সওয়াল করে এসেছেন দেব। এমনকি ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিয়ে দেব যখন বেঁকে বসেন, সেই সময় এই ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’কে সামনে রেখেই মমতা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর মানভঞ্জন করেছিলেন বলে শোনা যায়। সেবছর ১২ ফেব্রুয়ারি হুগলির আরামবাগের সভায় দেবকে পাশে বসিয়ে মমতা রাজ্য সরকারের টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিও দেন। 

এর পর ২০২৪ সালে যখন ফের বন্যায় ভেসে যাওয়ার জোগাড় হয় ঘাটাল, সেই সময় ২২ সেপ্টেম্বর  পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে গিয়েও দলকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন দেব। ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ বাস্তবায়িত না হলে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে প্রচারে যাবেন না বলেও জানিয়ে দেন। সেই সময় তিনি বলেন, “ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কাজ শুরু না হলে ২০২৬-এ প্রচারে যাব না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথা দিলে কথা রাখেন। মানুষ অনেক সমস্যার মধ্যে আছেন, সবাই মিলে পাশে থাকতে হবে। সব ঠিক থাকলে জানুয়ারি-বা ফেব্রুয়ারি মাসে নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারব আশা করি।”

দেবকে সেই সময় আরও বলতে শোনা যায়, “ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের যে সুপারিশ করেছিল মান সিংহ কমিটি, তা যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ঘাটালের অর্ধেক অংশ নদী হয়ে যাবে। বেশ কিছু জায়গাকে নদীতে পরিণত করতে হবে। সেটা সম্ভব নয়। তাই নতুন প্ল্যান অনুযায়ী, চার কিলোমিটার জমিকে বাঁধে পরিণত করে দু’টি নদীকে মেলাতে হবে। কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে, জমি অধিগ্রহণ চলছে।” তিনমাসে অন্তত পাঁচ বছর সময় লাগবে বলেও জানিয়েছিলেন। 

আর ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই, ঘাটালের জন্য অর্থ বরাদ্দ করলেন মমতা। তাহলে কি এবার জল-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন ঘাটালবাসী? দেব আশাবাদী হলেও, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যকে কটাক্ষই করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য এক ডেসিমেল জমিও অধিগ্রহণ করা হয়নি। জমি অধিগ্রহণই হয়নি যেখানে, সেখানে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান খাতায়-কলমেই থাকবে শুধু, নির্বাচনের আগে গালভরা প্রতিশ্রুতি হয়ে থাকবে।” তৃণমূলের তারকা সাংসদের হাত ধরে ঘাটালের স্বপ্নপূরণ হয় কি না, এখন তা-ই দেখার। 

আরও দেখুন



Source link

JagoronBarta http://www.jagoronbarta.com

জাগরণ বার্তা হল একটি অগ্রণী অনলাইন সংবাদ পোর্টাল যা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে নিরপেক্ষ, সঠিক এবং সময়োপযোগী সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিবেদিত। আমরা এমন একটি প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যা বাংলার প্রকৃত কণ্ঠস্বরকে প্রতিফলিত করে এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার গুরুত্বকে তুলে ধরে।

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours