রাজা চট্টোপাধ্য়ায়, ভাস্কর মুখোপাধ্য়ায় ও সৌমেন চক্রবর্তী, কলকাতা: রিঙ্গার ল্যাকটেটের ব্য়বহার অবশেষে বন্ধ হওয়ায়, চালু হয়েছে বিকল্প স্য়ালাইনের ব্য়াপার। নিজেদের পয়সা খরচ করে কিনতে হচ্ছে রোগীর পরিজনদের। কিন্তু প্রশ্ন হল, যে স্য়ালাইন নিয়ে মাসের পর মাস বিতর্ক, তার বিকল্প কেন এতদিন ধরে মজুত করেনি স্বাস্থ্য় দফতর ?
বিষাক্ত স্য়ালাইন ব্য়বহারের ফলে রোগীমৃত্যুর ভয়ঙ্কর অভিযোগ উঠেছে মেদিনীপুর মেডিক্য়াল কলেজে। কিন্তু তারপরও কলকাতার বুকে একাধিক মেডিক্য়াল কলেজেও রমরমিয়ে তার ব্য়বহার চলছিল! এক প্রসূতির মৃত্য়ু এবং তিনজনের অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ার পর অবশেষে হুঁশ ফিরেছে স্বাস্থ্য় দফতরের! এই স্য়ালাইন বন্ধ করতে নির্দেশিকা জারি করল তারা। রিঙ্গার ল্য়াকটেট স্য়ালাইনের পরিবর্তে শুরু হয়েছে অন্য় স্য়ালাইনের ব্য়বহার! আর তারফলে এখন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর আত্মীয়-পরিজনদের, চড়া দামে বাইরের ওষুধের দোকান থেকে কিনতে হচ্ছে বিকল্প স্য়ালাইন।
মেদিনীপুর, বীরভূম থেকে জলপাইগুড়ি, সর্বত্র এক ছবি!জলপাইগুড়ির হলদিবাড়ির কোনপাকড়ি গ্রামের বাসিন্দা মালেকা বানু। জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজে সদ্য সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তাঁর মেয়ে। মালেকা বানুর অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে বলে দেওয়া হয়েছে স্য়ালাইন কিনে আনতে হবে। যে স্যালাইন বিনামূল্য়ে পাওয়ার কথা, কিংবা নায্য়মূল্য়ের দোকান থেকে ১৫ টাকায় কেনার কথা। এখন তা বাইরের দোকান থেকে কিনতে হচ্ছে ৬৩টাকায়।
একই হয়রানির শিকার, ময়নাগুড়ির দোমহনির বাসিন্দা মহম্মদ আজিবুল ইসলাম। ভুক্তভোগী মহম্মদ আজিবুল ইসলাম বলেন,প্রসবের জন্য স্ত্রীকে ভর্তি। এখনও পর্যন্ত ৬টা স্য়ালাইন কিনতে হয়েছে। একই ছবি মেদিনীপুর মেডিক্য়াল কলেজেও। এখানে পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের ‘রিঙ্গার ল্যাকটেট’ স্যালাইন দেওয়ার ফলে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এখন বেকায়দায় পড়ে তারাও এই স্য়ালাইন ব্য়বহার বন্ধ করেছে! ফলে বিকল্প স্য়ালাইনের খোঁজ করতে হচ্ছে রোগীদের আত্মীয়দের।
রোগীর আত্মীয় দিবাকর মুড়িয়া বলেন, বলছে বাইরে থেকে আনতে। লিখিয়ে নিচ্ছে নইলে বাইরে থেকে আনতে। মেদিনীপুর মেডিক্য়াল কলেজ ফার্মাসিস্ট শুভাশিস পাণ্ডা বলেন, ‘শুক্রবার রাত থেকে বিক্রি বেড়েছে। RL বেশি বিক্রি হচ্ছে । হাসপাতালের রোগীদের আত্মীয়ই আসছে।শুক্রবারের পর থেকে বেশ কিছু মেডিসিনের বিক্রি বেড়েছে। যেগুলো হাসপাতাল থেকে সাধারণত বিনামূল্যে দেওয়া হতো।’ বীরভূমের রামপুরহাট মেডিক্য়াল কলেজেও একই ছবি।
এখানেই প্রশ্ন উঠছে, পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্য়ালের রিঙ্গার ল্যাকটেট স্য়ালাইন নিয়ে তো বিতর্ক নতুন নয়। কর্ণাটক সরকার প্রায় দেড় মাস আগে তাকে কালো তালিকাভুক্ত ঘোষণা করেছিল। ১০ ডিসেম্বর উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ জারি করে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল। ৭ জানুয়ারি নির্দেশিকা জারি করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। তাহলে, এই দেড় মাসের মধ্যে বিকল্প স্য়ালাইনের ব্য়বস্থা কেন করা হল না? এখন রোগীর পরিজনের এই হেনস্থার দায় কার? আগে থেকেই বিকল্প স্য়ালাইনের ব্য়বস্থা করা হলে তো গরীব মানুষগুলোকে এভাবে হয়রান হতে হত না।
আরও পড়ুন, স্য়ালাইনকাণ্ডের দায় কার? ‘গাফিলতি’ স্বীকার করে, মুখ্য়সচিবের মুখে ট্রেনি চিকিৎসকদের কথা, শুভেন্দু বললেন..
এদিকে, এই পরিস্থিতিতে, মুর্শিদাবাদ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের প্রশাসনিক গ্রুপে একটি মেসেজের স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে। যেখানে এক চিকিৎসক পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের একাধিক ওষুধের উল্লেখ করে প্রশ্ন করেছেন, এইগুলো কি কিছুই চালানো যাবে না স্যর? এই গুলোর মধ্য়ে কিছু লাগলে কি পার্টি পারচেজ করাতে হবে স্যর? এই প্রশ্নের উত্তরে মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সন্দীপ সান্য়াল লিখেছেন, এখনও পর্যন্ত তাই।
আরও দেখুন