কলকাতা: বাংলাদেশ হয়ে কি ভারতে ঢোকার ছক কষছে পাকিস্তানি জঙ্গিরা? পর পর বাংলাদেশি জঙ্গি গ্রেফতারের পর এমনই প্রশ্ন মাথাচাড়া দিচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা যাচ্ছে, শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে ঢোকা মুশকিল ছিল পাকিস্তানি জঙ্গিদের। কিন্তু মহম্মদ ইউনূসের আমলে পাকিস্তানি জঙ্গিদের কাছে বাংলাদেশ ‘সেভ হেভেনে’ পরিণত হয়েছে। নেপালের পরিবর্তে নতুন করিডর ব্য়বহার করে পাক জঙ্গিরা ভারতে অস্ত্রোপাচারের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। (New Corridor for Terrorists)
ক্যানিং থেকে গ্রেফতার হয়েছে কাশ্মীরি জঙ্গি জাভেদ আহমেদ মুন্সি। তার সঙ্গে পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার সংযোগ পাওয়া গিয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর। জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে কী ভাবে ভারতে অস্ত্র ঢোকানো সম্ভব, এই পথে অস্ত্র সরবরাহ কতটা নিরাপদ, তা দেখতেই পাঠিয়েছিল লস্কর-ই-তৈবার হ্য়ান্ডলাররা। ২৬/১১ মুম্বই হামলার মূলচক্রী হাফিজ সইদ এই লস্করের মাথা। (Bangladeshi Infiltrators)
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, লস্করের নির্দেশেই ক্যানিং থেকে জলপথে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার ছক ছিল জাভেদের। হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে অস্ত্র ঢোকানো কঠিন ছিল। ইউনূসের আমলে তেমন কড়াকড়ি নেই। বাংলাদেশের সঙ্গে সখ্যও বেড়েছে পাকিস্তানের। তাই নেপাল সীমান্তের কড়া প্রহরা এড়িয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তকেই পাক জঙ্গিরা ব্যবহার করতে চাইছে।
শুধু তাই নয়। গোয়েন্দারা যে তথ্য পেয়েছেন, তা হল, বাংলাদেশে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-উল-মুজাহিদিন। পুরনো নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে বাংলা বা অসম হয়ে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করছে জঙ্গিরা। তাদের হয়ে সমন্বয়ের দায়িত্ব ছিল ধৃত জাভেদের। তার কাছ থেকে শ্রীনগরের ঠিকানায় তৈরি আধার কার্ড উদ্ধার হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে হাতে লেখা কিছু নোটস। সাঙ্কেতিক ভাষায় তাতে কী লেখা রয়েছে, তা উদ্ধার করার চেষ্টা চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা।
তেহরিক-উল-মুজাহিদিনের পুরনো ঘাঁটি বাংলাদেশ। এখনও সেখানে তাদের সদস্যরা রয়েছে। নতুন করে তাদের উজ্জ্বীবিত করার কাজ চলছে। শ্রীনগরের চানপুরায় সংগঠনের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড জাভেদের বাড়ি। জাভেদ IED তৈরিতে দক্ষ। আল-কায়দার কাছ থেকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিল সে। ফলে অস্ত্র চালাতেও দক্ষ। কাশ্মীরে নাশকতামূলক কাজকর্মে যুক্ত সে। ২০১১ সালে একবার গ্রেফতারও হয়। লস্করের নির্দেশেই সে বাংলাদেশ যাওয়ার চেষ্টা করছিল বলে জানা গিয়েছে।
ক্যানিং এবং বাংলাদেশের মধ্যে জলসীমান্ত রয়েছে। সন্দেশখালি হয়ে বাংলাদেশ যাওয়া সম্ভব। ক্যানিং থেকে ধামাখালি প্রথমে। সীমান্ত পেরোলেই এর পর বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলা। ধামাখালি ঘাট থেকে রায়মঙ্গল নদী ধরে হিঙ্গলগঞ্জের হেমনগর পৌঁছতে পারলেও বাংলাদেশে ঢোকা সহজ। আবার ধামাখালি থেকে খুলনা, তার পর ভাণ্ডারখালি হয়ে সোজা লেবুখালির রাস্তাও রয়েছে। ক্যানিং থেকে সড়কপথে ঝড়খালি হয়ে নদী পেরিয়েও পৌঁছে যাওয়া যায় বাংলাদেশ।
অন্য দিকে, বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিমের দুই সদস্যও গ্রেফতার হয়েছে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ায়। দীর্ঘদিন ধরে মুর্শিদাবাদে বাস করা দুই বাংলাদেশি নাগরিককেও গ্রেফতার করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশকারীদের তারা জাল আধারকার্ড তৈরিতে সাহায্য করত বলে অভিযোগ। লালগোলায় এক বাংলাদেশি-সহ তিন জন গ্রেফতার হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
শুভেন্দুর বক্তব্য, “বাসন্তী এক্সপ্রেসওয়ে এবং কামালগাজি মোড় থেকে যে রাস্তা ক্যানিং হয়ে গোসাবা ঘাট পর্যন্ত গিয়েছে, ওই দুই রাস্তাই জঙ্গিদের হাতে চলে গিয়েছে। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি। সবাই এই দিক দিয়ে গিয়েছে। গোসাবায় ১৩টি দ্বীপ রয়েছে। একটি দ্বীপে শুধু BSF ক্যাম্প রয়েছে, বাকি কোথাও নেই। জেলেদের সঙ্গে মিশে গোসাবার দ্বীপগুলি হয়ে, নয়ত ক্যানিং, বারুইপুর, কামালগাজি হয়ে ভারতে ঢুকে পড়ছে। ভারতে ছড়িয়ে পড়ছে বাসন্তী এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে সায়েন্সসিটি দিয়ে।”
এ নিয়ে শুভেন্দুকে তীব্র কটাক্ষ করেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, “জঙ্গিদের রুট জানেন শুভেন্দু অধিকারী? মারাত্মক নেটওয়র্ক! বিরোধী দলনেতার কাছে তথ্য থাকলে খতিয়ে দেখতে হবে। শুভেন্দু অধিকারীর উচিত, সেন্ট্রাল আইবি-কে বলে গ্রেফতার করানো। বাংলাদেশ সীমান্ত হয়ে ত্রিপুরায় রোহিঙ্গা ঢুকছে। সেগুলো দেখতে পাচ্ছেন না? বাংলাদেশে থেকে অবৈধ কেউ ঢোকে যদি, বিএসএফ কী করছে?
ত্রিপুরার কৈফিয়ত দিন। বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে ত্রিপুরা হয়ে কলকাতা বা দিল্লির দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে অনুপ্রবেশকারীরা”।
শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, ত্রিপুরার আগরতলায় ১০ রোহিঙ্গা সহ ১০০ বাংলাদেশি গ্রেফতার হয়েছেন। সীমান্ত পারাপারে সাহায্যের অভিযোগে ৫৪ জন দালালও গ্রেফতার হয়েছে। দিল্লি ও কলকাতায় আসার ছক কষছিলেন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা। ট্রেনে ওঠার আগে আগরতলা স্টেশন থেকে পাকড়াও করা হয় তাঁদের। ধৃতদের থেকে উদ্ধার হয়েছে ভুয়ো ভারতীয় পরিচয়পত্র। দিল্লিতেও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বৈধ নাগরিক করে দেওয়ার চক্র ফাঁস হয়েছে। দিল্লি পুলিশের দাবি, পাঁচ বাংলাদেশি নাগরিক-সহ ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ২১টি আধার কার্ড, ছয়টি প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড। ভুয়ো ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পেশাদারদের দিয়ে এই কাজ হতো বলে জানা গিয়েছে। যদিও BSF-এর দাবি, অনুপ্রবেশ রুখতে সবরকম পদক্ষেপ করছে তারা। সীমান্ত সুরক্ষিত রয়েছে বলে দাবি বিএসএফ ডিজি-র।
আরও দেখুন